দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি
Contents
দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসভার গঠন এক কক্ষ বিশিষ্ট না দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট হবে , তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মত বিরোধ রয়েছে । বেন্থাম , আবে সিঁয়ে , ল্যাস্কি , ফ্রাংকলিন প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিরোধিতা করে এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তির অবতারণা করেন ।
অন্যদিকে লর্ড ব্রাইস , স্টুয়ার্ট মিল , লেকি , হেনরি মেইন , লর্ড অ্যাক্টন , গেটেল প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার কঠোর সমালোচনা করে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে জোরালো যুক্তি দেখিয়েছেন ।
দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তি
দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে যুক্তিগুলি হল :
সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন :
দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় সুচিন্তিতভাবে আইন প্রণীত হয় । আইনসভা দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট হওয়ায় প্রতিটি বিলকে দুটি কক্ষে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিবেচনা করার সুযোগ পাওয়া যায় । এতে বিলের ত্রুটি বিচ্যুতি ধরা পড়ে । এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার মতো তড়িঘড়ি সাময়িক আবেগ ও উত্তেজনার বশে অথবা জনমতের চাপে প্রসূত আইন প্রণয়নের আশঙ্কা এখানে কম থাকে ।
জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের সমন্বয় সাধন :
আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকলে জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের সামগ্রিক প্রতিনিধিত্ব সম্ভব নয় । অন্যদিকে , দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা থাকলে নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতীয় এবং আঞ্চলিক স্বার্থের সার্থক সমন্বয় সাধন সম্ভব হয় । এই কারণে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভাকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আবশ্যিক বলে মনে করা হয় ।
স্বৈরাচারী প্রবণতা রোধ :
লর্ড অ্যাক্টন আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষকে ব্যক্তি স্বাধীনতার নিরাপত্তার পক্ষে প্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেন । তাঁর মতে , একটি মাত্র কক্ষ নিয়ে আইনসভা গঠিত হলে স্বৈরাচারের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে , কারণ সেক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণকারী থাকে না । অন্যদিকে , আইনসভার দুটি কক্ষ থাকলে প্রথম কক্ষের স্বৈরাচার অতি সহজেই দ্বিতীয় কক্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ।
জনমতের সঠিক প্রতিফলন :
অনেকের মতে , আইনসভায় দুটি কক্ষ থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন ঘটে । এ ছাড়াও আইনসভার দুটি কক্ষের নির্বাচন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হওয়ার দরুন পরিবর্তনশীল জনমতের সুষ্ঠু প্রতিফলন আইনসভায় দেখা যায় ।
জ্ঞানীগুণী মানুষের প্রতিনিধিত্ব :
দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় দেশের জ্ঞানীগুণীদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয় । এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় যোগ্য মানুষদের জায়গা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না । আইনসভা দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট হলে উচ্চকক্ষে জ্ঞানীগুণীদের খুব সহজেই মনোনয়ন দেওয়া যায় । প্রসঙ্গত , ভারতের আইনসভার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় এ ধরনের মনোনয়নের ব্যবস্থা রয়েছে ।
সংখ্যা লঘু স্বার্থের সুরক্ষা :
এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার নির্বাচন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের ভিত্তিতে হওয়ায় সমাজের সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বের অভাব দেখা যায় । কিন্তু দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় পরোক্ষ নির্বাচন ও মনোনয়নের ব্যবস্থা থাকায় সংখ্যা লঘু স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে । রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দ্যুইয়ের মতে , যে আইনসভায় একটি কক্ষ সমস্ত জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং অন্য কক্ষটি বিভিন্ন গোষ্ঠী বা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে সেই আইনসভাকে শ্রেষ্ঠ বলা যায় ।
রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার :
দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তারের সহায়ক বলে অনেকে মনে করেন । দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়নের সময় যেসব আলোচনা ও বিতর্ক হয় তা গণমাধ্যম মারফত প্রচারিত হওয়ায় জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা ও শিক্ষার প্রসার ঘটে । বলা বাহুল্য , এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় এই সুযোগ সীমিত ।
আইনসভার কার্য বৃদ্ধি :
বর্তমানে আইনসভার কাজ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় একটিমাত্র কক্ষের দ্বারা যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয় না । ফলে আইনসভা দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট হলে বিশাল কাজকে সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় ।
দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিপক্ষে যুক্তি
অগণতান্ত্রিক গঠন কাঠামো :
গণতান্ত্রিক আদর্শ অনুযায়ী , জনগণের ভোটে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে আইনসভা গঠিত হয় । কিন্তু কোনো কোনো দেশে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় মনোনয়ন প্রথায় প্রতিনিধি নিয়োগের ব্যবস্থা থাকায় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে । দৃষ্টান্ত স্বরূপ ব্রিটেনের উচ্চকক্ষ লর্ড সভায় উত্তরাধিকার সূত্রে লর্ডদের মনোনয়নের কথা বলা যেতে পারে ।
অনাবশ্যক :
আইনসভার দুটি কক্ষকে অনেকে অনাবশ্যক বলে মনে করেন । তাঁদের মতে , দুটি কক্ষেই একই রাজনৈতিক দলের গরিষ্ঠতা থাকে তাহলে দ্বিতীয় কক্ষের অস্তিত্ব অনাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায় । রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবে সিঁয়ের মতে প্রথম কক্ষ দ্বিতীয় কক্ষের সঙ্গে সহমত পোষণ করলে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা , অনাবশ্যক , অন্যদিকে দুটি কক্ষ যদি সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করে তবে তা ক্ষতিকারক ।
প্রকৃত জ্ঞানী গুণীদের উপেক্ষা :
দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় জ্ঞানীগুণীদের জায়গা দেওয়া যায় , এই যুক্তি ঠিক নয় । বাস্তবে দেখা যায় , যে দল নিম্ন কক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে সেই দলের প্রতিনিধিরাই এ ধরনের সুযোগ পেয়ে থাকেন । এর ফলে প্রকৃত জ্ঞানীগুণীরা বঞ্চিত হন ।
সংখ্যা লঘু স্বার্থ রক্ষায় অপারগ :
সংখ্যা লঘু স্বার্থ সুরক্ষার জন্য দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা অত্যাবশ্যক নয় । কারণ সংবিধানে সংখ্যা লঘুদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকলে সংখ্যা লঘু স্বার্থ যথাযথভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় । এজন্য আইনসভার একটি কক্ষই যথেষ্ট ।
দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা সম্পন্ন :
অনেকে মনে করেন , দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় গৃহীত কার্যাবলির ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন উঠলে এককভাবে কোনো একটি কক্ষকে দায়ী করা যায় না । এরূপ ক্ষেত্রে দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার প্রবণতা দুটি কক্ষেই দেখা যায় ।
আশু আইন প্রণয়নের অনুপযুক্ত :
দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়নে দুটি কক্ষের ভূমিকা থাকায় জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত আইন প্রণয়ন এখানে কোনো ভাবেই সম্ভব নয় । যে ক্ষিপ্রতায় এক কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়ন করা হয় , দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভায় তা হয় না ।
ব্যয়বহুল :
অনেকে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার অস্তিত্বকে ব্যয়বহুল বলে মনে করেন । তাঁদের মতে যেহেতু একটি কক্ষ অপ্রয়োজনীয় , তাই সদস্যদের বেতন , ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য অহেতুক অর্থের অপচয় ঘটে ।।
উপসংহার
দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিরুদ্ধে উপরিউক্ত সমালোচনা সত্ত্বেও দেখা যায় যে , বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার কাঠামো গৃহীত হয়েছে । বস্তুত , প্রথম কক্ষের প্রণীত আইন দ্বিতীয় কক্ষে সংশোধিত হওয়ার সুযোগ থাকায় তা আরও পূর্ণতা লাভ করে । সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে , একটি সংশোধনী কক্ষরূপে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষের গুরুত্বকে উপেক্ষা করা যায় না ।
- Different Types of Mutual Funds – Mutual Fund Types Based on Asset Class, Structure, Risk & Benefits
- How to invest in mutual funds
- what are mutual funds simple definition
- একটি কারখানায় একটি মেশিনের মূল্য ১,৮০,০০০ টাকা। মেশিনটির মুল্য প্রতি বছর ১০% হ্রাস পায়। ৩ বছর পর ওই মেশিনের মুল্য কত হবে?
- অ্যানথ্রাসাইট কয়লা