মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক দর্শন

Contents

মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক দর্শন

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কোনো রাষ্ট্র দার্শনিক ছিলেন না । কোনো বিশেষ রাজনৈতিক তত্ত্ব বা দর্শন তিনি গড়ে তোলেননি । তাঁর ভাষায় , ‘ গান্ধীবাদ বলে কিছু নেই …. নতুন কোনো নীতি বা তত্ত্বের স্রষ্টা হিসেবে আমি কিছু দাবি করি না । ‘ থোরো , রাস্কিন , টলস্টয়ের লেখা , ভগবদ্ গীতা , উপনিষদ , রামায়ণ , মহাভারত , বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে যুক্ত করে গান্ধীজি তাঁর নিজের মতবাদ তৈরি করেন ।  

গান্ধীজির রাজনৈতিক দর্শনের মূল সূত্র বা চিন্তাধারার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল

অহিংসা 

গান্ধীজির মতাদর্শের মূলনীতি হল অহিংসা । সাধারণভাবে অহিংসা বলতে অন্যকে হিংসা না করা বোঝায় । গান্ধীজির মতে , অহিংসা বলতে ‘ চরমতম স্বার্থহীনতাকে ’ বোঝায় । তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে অহিংসা হল ‘ ইতিবাচক ভালোবাসা ’ । অহিংসা দুর্বলতা নয় , অহিংসা এক নৈতিক শক্তি , এক সদর্থক ধারণা । সত্য , প্রেম , ভালোবাসা , সংযম , সাহস ও আত্মবলিদানের মতো মানবিক গুণাবলি গান্ধীজির অহিংসার ধারণার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ।

সত্যাগ্রহ 

আভিধানিক অর্থে সত্যাগ্রহ হল ‘ সত্যের জন্য আগ্রহ ‘ । গান্ধীজির সত্যাগ্রহের আদর্শ হল সত্যের জন্য তপস্যা , অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ । সত্যাগ্রহ দুর্বলের অস্ত্র নয় , এটি একটি আত্মিক শক্তি । সত্যাগ্রহে কাপুরুষতা বা ভীরুতার কোনো স্থান নেই । গান্ধীজির সত্যাগ্রহ হল এমন এক আদর্শ যেখানে প্রেম ও ভালোবাসার সাহায্যে প্রতিপক্ষের হৃদয় পরিবর্তন করা যায় । সত্যাগ্রহের পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে প্রতীকী বা আমরণ অনশন , অসহযোগ আন্দোলন , আইন অমান্য আন্দোলন , সরকারি অনুষ্ঠান বয়কট প্রভৃতি । 

সর্বোদয় 

‘ সর্ব ’ এবং ‘ উদয় ’ এই দুটি শব্দ নিয়ে সর্বোদয় । সর্বোদয়ের আক্ষরিক অর্থ হল সকলের কল্যাণ ( Uplift of all ) । সমাজে এক উন্নত নৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলা সর্বোদয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য । সত্য , অহিংসা এবং সৎ উপায়ের সাহায্যে এই পরিবেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে গান্ধীজি মনে করতেন । 

অনাড়ম্বর জীবন যাপন ও মহৎ চিন্তার মাধ্যমে পারস্পরিক প্রেম বন্ধন ও সহযোগিতার ভিত্তিতে এই সর্বোদয় সমাজ গঠন করা সম্ভব । সর্বোদয় সমাজে সকলেই সমান । সর্বব্যাপী ভালোবাসাই হল এর ভিত্তি , আত্মত্যাগ হল এর মূল কথা । 

সর্বোদয়ে গ্রাম ভিত্তিক সভ্যতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । সর্বোদয় অর্থনীতি হবে কৃষি ও কৃষি ভিত্তিক শিল্প নির্ভর । আধুনিক বৃহৎ শিল্প সভ্যতাকে সর্বোদয় সমর্থন করে না । 

রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণা 

রাষ্ট্র প্রকৃতির স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে গিয়ে গান্ধীজি বলেছিলেন , “ রাষ্ট্রের শক্তি বৃদ্ধির ঘটনাকে আমি সবচেয়ে ভয়ের চোখে দেখে থাকি । ” গান্ধীজির মতে , বলপ্রয়োগ হল আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি । সুসংগঠিত ও কেন্দ্রীভূতভাবে রাষ্ট্র এই সহিংস বলপ্রয়োগ করে থাকে । 

গান্ধীজি মনে করতেন , মানুষের দুর্বলতার জন্য রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি হয় । রাষ্ট্র যে চরম সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একটি প্রতিষ্ঠান গান্ধীজি তা বিশ্বাস করতেন না । তিনি সম্পূর্ণ নৈতিক কর্তৃত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত জনগণের সার্বভৌমিকতায় আস্থাশীল ছিলেন । 

তাঁর মতে , অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি যতটা সীমিত আনুগত্য দেখানো হয় , রাষ্ট্রের প্রতি তার চেয়ে বেশি আনুগত্য দেখানোর প্রয়োজন নেই । তিনি মনে করতেন , সেই রাষ্ট্রই সবচেয়ে ভালো যা সবচেয়ে কম শাসন করে । ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী গান্ধীজি এভাবে রাষ্ট্রের কর্মপরিধিকে সীমিত রাখতে চেয়েছিলেন । 

আদর্শ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ‘ রাষ্ট্রহীন গণতন্ত্র ‘ থাকবে বলে গান্ধীজি মনে করতেন । রাষ্ট্রহীন এই গণতন্ত্র হল গান্ধীজির রাম রাজ্য । রাম রাজ্যকে গ্রাম ভিত্তিক করে গড়ে তোলার জন্য তিনি পঞ্চায়েতি রাজ পত্তনের কথা বলেছিলেন । 

স্বরাজ সম্পর্কিত ধারণা 

‘ স্বরাজ ‘ কথাটির অর্থ হল স্ব-রাজ্য বা স্ব-শাসন । সাধারণ অর্থে স্বরাজ হল পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি । গান্ধীজির স্বরাজ সম্পর্কিত ধারণা শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বায়ত্ত শাসনের ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত নয় । তাঁর মতে , স্বরাজ হল এক আদর্শ মানব সমাজ , এক উন্নততর সামাজিক অবস্থা , যার মূল ভিত্তি হল পরিপূর্ণ সামাজিক সাম্য , স্বাধীনতা ও ন্যায় বিচার । 

গান্ধীজির কাছে স্বরাজ এক উচ্চ মানবিক ও নৈতিক আদর্শ । তাঁর অভিমত ছিল , স্ব-শাসন বা স্ব-রাজ্যের প্রথম শর্ত , নিজেকে শাসনে আনা বা জয় করা । গান্ধীজি বিশ্বাস করতেন , একটি জাতির জন্য স্বরাজের অর্থ হল সেই জাতির আত্মঅনুশাসন । 

গ্রামীণ পুনর্গঠনের ধারণা 

কৃষি প্রধান ভারতের উন্নয়নের জন্য গান্ধীজি গ্রামীণ পুনর্গঠনের ধারণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন ।গান্ধীজি বিশ্বাস করতেন , ভারতের প্রাণ শক্তি গ্রামগুলির উন্নতির মধ্যে নিহিত রয়েছে । গ্রামীণ ভারতের পুনর্গঠনের জন্য গান্ধীজি যে বিষয়গুলির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন , তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সমবায় প্রথার প্রচলন , জমিদারি প্রথার সংস্কার , গ্রামীণ শিল্পের বিকাশ , গ্রাম-স্বরাজ , স্বাবলম্বন প্রভৃতি । 

গণতন্ত্র সম্পর্কিত ধারণা 

গণতন্ত্র সম্পর্কে গান্ধীজি এক মৌলিক চিন্তার অবতারণা করেন । প্রকৃত গণতন্ত্র কখনও অসত্য ও সহিংস পথে আসতে পারে না বলে তিনি মনে করতেন । তাঁর মতে , গণতন্ত্র ও হিংসা পাশাপাশি চলা দুষ্কর । পশ্চিমি গণতন্ত্রের কঠোর সমালোচক ছিলেন গান্ধীজি । পশ্চিমের গণতন্ত্রকে তিনি ‘ নাম মাত্র গণতন্ত্র ‘ বলে অভিহিত করেছিলেন । 

গণতন্ত্রে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যাপারে গান্ধীজির অভিমত ছিল , মানুষ হিসেবে যারা ভালো ও খাঁটি তাদের মধ্যে থেকেই প্রতিনিধি বাছাই করতে হবে । সংখ্যা গরিষ্ঠের শাসনে সংখ্যা লঘুদের স্বাধীনতা স্বীকৃত হয় না বলে তাকে তিনি প্রকৃত গণতন্ত্রের মর্যাদা দেননি । গণতন্ত্রে সংখ্যার চেয়ে গুণকে প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি । পারস্পরিক সহনশীলতা ও ধর্ম নিরপেক্ষতার আদর্শ গণতন্ত্রের ভিত্তি বলে গান্ধীজি বিশ্বাস করতেন । গান্ধীজি গ্রাম স্বরাজ বা পঞ্চায়েতি রাজ থেকে এই গণতন্ত্র গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন । 

অছি সম্পর্কিত তত্ত্ব 

গান্ধীজির অছি সম্পর্কিত তত্ত্বের মূল বক্তব্য হল , সমাজের ধনী ব্যক্তিরা তাদের ন্যূনতম চাহিদা মিটিয়ে সম্পদের বাকি অংশটুকু সর্বসাধারণের জন্য দান করবে । অছি হিসেবে তারাই এই অতিরিক্ত সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে । এর ফলে সমস্ত রকম শ্রেণি দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটবে এবং সমাজে নৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে । গান্ধীজির মতে অছি রক্ষণ হল বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজকে সাম্যবাদী সমাজে পরিবর্তিত করার উপায় । এই ব্যবস্থা পুঁজিবাদকে সমর্থন করে না , কিন্তু বর্তমান মালিকশ্রেণিকে আত্মসংশোধনের সুযোগ দেয় । 

জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধারণা 

জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ধারণা ব্যক্ত করতে গিয়ে গান্ধীজি বলেছিলেন যে , তাঁর কাছে দেশপ্রেম ও মানবতা সমার্থক । তাঁর মতে , ভারতীয় জাতীয়তাবাদ আগ্রাসী বা ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির নয় । সংকীর্ণ জাতিবিদ্বেষ বা উগ্র স্বাদেশিকতাকে জাতীয়তাবাদে স্থান দেননি গান্ধীজি । তাঁর চিন্তাধারায় জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের কোনো বিরোধ ছিল না । 

গান্ধীজির মতাদর্শের মূল্যায়ন 

গান্ধীজির মতাদর্শ সমালোচকদের দৃষ্টি এড়াতে পারেনি । বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গান্ধীজির মতাদর্শ সমালোচিত হয়েছে । যেমন –

রাষ্ট্রতত্ত্বের ধারণা গতানুগতিক : 

রাষ্ট্রের প্রতি গান্ধীজির চরম বিরূপতার জন্য ড. বিনয় সরকার , ড. ধাওয়ান , জর্জ উডকক্ প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তাঁকে একজন নৈরাজ্যবাদী দার্শনিক বলে অভিহিত করেন । অন্যদিকে বিমান বিহারী মজুমদার প্রমুখ বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত মেনে নেননি । 

নির্মল বসুর মতে , গান্ধীজির রাষ্ট্র সংক্রান্ত ধারণা নৈরাজ্যবাদী ও সাম্যবাদী কারও সঙ্গেই পুরোপুরি মেলে না । মার্কসবাদীরা গান্ধীজির রাষ্ট্রতত্ত্বের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন যে , গান্ধীজি রাষ্ট্রকে শ্রেণিশোষণের যন্ত্র হিসেবে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন । তাঁর মতবাদ একটি নিছক গতানুগতিক মতবাদ । 

রাম রাজ্যের ধারণা কাল্পনিক : 

গান্ধীজি নৈতিকতার ওপর খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে ভুল করেছিলেন বলে সমালোচকরা মনে করেন । তাঁর কল্পিত রামরাজ্য আজ পর্যন্ত কোথাও প্রতিষ্ঠিত হয়নি । আসলে গান্ধীজি নিজেই এ সম্পর্কে সন্দিগ্ধ ছিলেন । 

ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি অসামঞ্জস্যপূর্ণ : 

গান্ধীজি ব্যক্তি মানুষের ওপর বেশি আস্থা রেখে সমাজের ওপরে ব্যক্তিকে স্থান দিয়েছিলেন । এই ধারণা ঠিক নয় , কারণ ব্যক্তি সমাজের ঊর্ধ্বে নয় , সমাজ ব্যক্তির ঊর্ধ্বে । 

রাষ্ট্র চিন্তা স্ববিরোধী : 

গান্ধীজির রাষ্ট্র চিন্তা স্ববিরোধী বলে অনেকে মনে করেন । তিনি একদিকে রাষ্ট্রহীন গণতন্ত্রের কথা বলেছেন , অন্যদিকে সবচেয়ে কম শাসনের কথা প্রচার করেছেন । যদি রাষ্ট্রহীন গণতন্ত্র কাম্য হয় , তবে রাষ্ট্রের হাতে কম ক্ষমতা দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না । 

অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি রক্ষণশীল : 

অনেকে গান্ধীজির অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে রক্ষণশীল বলে অভিহিত করেছেন । আধুনিক শিল্পোন্নত দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উন্নতির যুগে গান্ধিজির অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অগ্রগতির পরিপন্থী । তাঁর ধ্যান ধারণাকে প্রযুক্তি নির্ভর উন্নত আধুনিক ব্যবস্থার বিরোধী বলেও অনেকে মনে করেন । 

সর্বোদয়ের ধারণা অবাস্তব : 

গান্ধীজির সর্বোদয়ের ধারণাকে সমালোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই বলা হয় যে তত্ত্বটি অবাস্তব ও কাল্পনিক । মানব প্রকৃতির যথার্থ স্বরূপটির কথা বিবেচনা না করে যে মহান আদর্শ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা এখানে বলা হয়েছে , বাস্তবে তা কার্যকর করা অসম্ভব । 

গান্ধীজি নিজেও জানতেন , এরূপ আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা অবিলম্বে সম্ভব নয় । সর্বোদয় তত্ত্বে বর্ণিত স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত্তিতে দেশের সামগ্রিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয় । প্রাচীন গ্রাম্য আদর্শ আসলে সভ্যতার পশ্চাৎগতিকে ডেকে আনে । আধুনিক নগর কেন্দ্রিক শিল্প ভিত্তিক সভ্যতাকে এই তত্ত্বে উপেক্ষা করা হয়েছে । 

দলহীন গণতন্ত্র কল্পনা প্রসূত ধারণা :

বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দলীয় রাজনীতির অপরিহার্য অস্তিত্বের মাঝে দলহীন গণতন্ত্র একটি নিছক কল্পনা প্রসূত ধারণা মাত্র । গ্রামীণ সমাজের সীমিত পরিধির মধ্যে সম্ভবপর হলেও বৃহত্তর জাতীয় জীবনে দলহীন গণতন্ত্রের ধারণা বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয় ।

সকলের শাসন প্রতিষ্ঠা অসম্ভব : 

গণতন্ত্রের মূল কথাই হল সংখ্যা গরিষ্ঠের শাসন । গান্ধীজি এই সত্যটি উপেক্ষা করে সকলের শাসন প্রতিষ্ঠার যে কথা বলেছেন তা অবাস্তব ও ভিত্তিহীন বলে সমালোচকরা মন্তব্য করেছেন । বাস্তবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সকলের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা কল্পনা করা যায় না । তা ছাড়া প্রতিটি ব্যক্তি শাসনকাজে যোগ দেবে এরকম আশাও করা যায় না । গান্ধীজি তাঁর তত্ত্বে যে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের কথা বলেছেন , আধুনিক বৃহদায়তন জনবহুল সমাজব্যবস্থায় তা অসম্ভব । 

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ অকাম্য : 

গান্ধীজি বর্ণিত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণও গ্রহণযোগ্য নয় । ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সংকীর্ণ আঞ্চলিকতা ও প্রাদেশিকতার জন্ম দেয় । এর ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে । 

শ্রেণি সমঝোতা ভিত্তিহীন : 

মার্কসবাদীরা গান্ধীজির শ্রেণি সমঝোতার ধারণাকে মানতে পারেননি । তাঁদের মতে , পুঁজিবাদী সমাজে শ্রেণি সংঘাত অবশ্যম্ভাবী । 

উপসংহার 

গান্ধীজির চিন্তাধারার আদর্শগত মূল্য অস্বীকার করা যায় না । সর্বোদয় , সত্যাগ্রহ ও অহিংসার নৈতিক আদর্শ আজও বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত । গান্ধীজির সত্যাগ্রহের আদর্শ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুক্তি সংগ্রামে যে সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল তা অবিস্মরণীয় । আধুনিক পৃথিবীতে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সত্যাগ্রহ হল গণসংগ্রামের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার । 

গ্রাম জীবন সম্বন্ধে গান্ধীজির অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও পঞ্চায়েতি রাজ সংক্রান্ত ধ্যানধারণা স্বাধীন ভারতের প্রশাসনে বাস্তবায়িত হয়েছে । গান্ধীজির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের শ্রম নিবিড় উৎপাদন পদ্ধতির তাৎপর্যও উপেক্ষণীয় নয় ।

error: Content is protected !!