রাষ্ট্র বিজ্ঞান

গান্ধীজীর সর্বোদয় ধারণা আলোচনা কর

গান্ধীজীর সর্বোদয় ধারণা আলোচনা কর

গান্ধীজীর দর্শনে আদর্শ সমাজের রূপরেখা যে ধারণার মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তা হল সর্বোদয় । ‘ সর্ব ‘ এবং ‘ উদয় ’ এই দুটি শব্দ নিয়ে ‘ সর্বোদয় ‘ । সর্বোদয়ের আক্ষরিক অর্থ হল সকলের কল্যাণ । জন রাস্কিনের Unto this last গ্রন্থের গুজরাটি ভাবানুবাদ করতে গিয়ে গান্ধীজী ‘ সর্বোদয় ‘ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন । দেশের মধ্যে এক উন্নত নৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলা সর্বোদয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য । 

সত্য , অহিংসা এবং সৎ উপায়ের সাহায্যে এই পরিবেশ গঠন সম্ভব বলে গান্ধীজী মনে করতেন । অনাড়ম্বর জীবন যাপন ও মহৎ চিন্তার মাধ্যমে , পারস্পরিক প্রেম বন্ধন ও সহযোগিতার ভিত্তিতে এই সর্বোদয় সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব । 

এই সমাজের সাফল্যের জন্য গান্ধীজী ‘ লোক শক্তি’কে জাগ্রত করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন । সর্বোদয় সমাজে সকলেই সমান । সর্বব্যাপী ভালোবাসাই হল এর ভিত্তি , আত্মত্যাগ হল এর মূল কথা । সর্বোদয়ে গ্রাম ভিত্তিক সভ্যতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । সর্বোদয় সমাজে উৎপাদনের কাজে প্রতিটি মানুষ শ্রম দান করবে । কোনোরকম আর্থিক বৈষম্য না থাকায় প্রতিটি মানুষ উন্নতির সমান সুযোগ পাবে । সর্বোদয় অর্থনীতি হবে কৃষি ও কৃষি ভিত্তিক শিল্প নির্ভর । আধুনিক বৃহৎ শিল্প সভ্যতাকে সর্বোদয় সমর্থন করে না ।  

গান্ধীজীর সর্বোদয়ের ধারণায় রাজনৈতিক দল , পেশাদার গোষ্ঠী , রাজনীতিবিদ , সংখ্যা গরিষ্ঠের শাসন , ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন ইত্যাদির কোনো স্থান নেই । সর্বোদয় তত্ত্বে এ কথা বিশ্বাস করা হয় যে মানুষ সত্য , সততা , অহিংসা ও ভ্রাতৃত্ববোধে আস্থাশীল না হলে সমাজের প্রগতি হতে পারে না । সমষ্টির কল্যাণ , অভিন্ন কাজের মূল্য এবং শ্রম ভিত্তিক জীবন — এই হল সর্বোদয়ের মূল কথা ।

error: Content is protected !!