মার্কসের বিপ্লব তত্ত্ব
মার্কসের বিপ্লব তত্ত্ব
মার্কসীয় তত্ত্বের মূল নীতিগুলির মধ্যে বিপ্লবের তত্ত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । মার্কসীয় মতবাদ অনুযায়ী , বিপ্লব হল এমন একটি ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে এক শাসকশ্রেণির উচ্ছেদ সাধন ও নতুন শাসকশ্রেণির উদ্ভব ঘটে । অর্থাৎ , পুরাতন এক শ্রেণির পরিবর্তে নতুন এক শ্রেণি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে ।
মার্কসের মতে , বিপ্লব হল এমন এক সামাজিক অবস্থা যার মাধ্যমে পুরোনো সমাজ ব্যবস্থার বদলে নতুন প্রগতিশীল সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় । ঐতিহাসিক বস্তুবাদের প্রেক্ষিতে মার্কস দেখিয়েছেন , এভাবেই আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে ক্রমে আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজের উদ্ভব ঘটেছে ।
মার্কসবাদে বলা হয়েছে , বিপ্লবের কারণ হল সাবেকি উৎপাদন সম্পর্কের সঙ্গে নতুন উৎপাদিকা শক্তির বিরোধ । নতুন উৎপাদন শক্তির সঙ্গে পুরোনো উৎপাদন সম্পর্কের এই সংঘর্ষের ফলে পুরোনো সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে নতুন সমাজ গড়ে ওঠে ।
মার্কসের মতে , সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমেই মানব সমাজে উৎপাদন প্রক্রিয়া অনুন্নত স্তর থেকে উন্নত স্তরে উপনীত হয়েছে । মার্কস নিজে বিপ্লবকে ইতিহাসের চালিকা শক্তি বলে বর্ণনা করেছেন । বিপ্লবের চালিকা শক্তি হিসেবে যে শ্রেণি কাজ করে তার মাধ্যমে বিপ্লবের প্রকৃতি নির্ধারিত হয় । যেমন — বুর্জোয়া বিপ্লবের মূল চালিকা শক্তি বুর্জোয়া শ্রেণি , সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের চালিকা শক্তি শ্রমিক ও কৃষক সম্প্রদায় ।
বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার জন্য মার্কসীয় তত্ত্বে দু-ধরনের শর্ত পূরণের কথা বলা হয় – 1. বস্তুগত বা বিষয়গত অবস্থা ( বৈপ্লবিক পরিস্থিতি ) এবং 2. বিষয়ীগত অবস্থা ( জনগণের চেতনা , সংগঠন ও নেতৃত্ব ইত্যাদি ) ।
মার্কসীয় তত্ত্ব অনুসারে বিপ্লব রক্তপাতহীন বা রক্তাক্ত , শান্তিপূর্ণ বা হিংসাত্মক উভয়ই হতে পারে । লেনিনের মতে , বিপ্লব হিংসার তাণ্ডব নয় , বিপ্লব হল উৎপীড়িত ও শোষিতের মহোৎসব । মার্কসবাদ অনুযায়ী , বিপ্লব সবরকম সামাজিক , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণের অবসান ঘটিয়ে শোষণ মুক্ত শ্রেণিহীন সমাজ গঠনের দ্বারা গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ বিকাশে সহায়তা করে । উৎপাদনের উপাদানের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানার অবসান ঘটানো একমাত্র সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমেই সম্ভব ।