নয়া উদারনীতিবাদ কাকে বলে

Contents

নয়া উদারনীতিবাদ কাকে বলে

রাষ্ট্রতত্ত্বের আলোচনায় অর্থনীতিক উদারনীতিবাদের পুনরুত্থানই হল নয়া উদারনীতিবাদ । উদারনীতিবাদী দর্শনের নব প্রজন্মের চিন্তাবিদরা বিংশ শতাব্দীর অষ্টম দশকে নয়া উদারনীতিবাদী তত্ত্বের অবতারণা করেন । নয়া উদারনীতিবাদকে অনেক সময় নয়া ক্ল্যাসিক্যাল (neoclassical) উদারনীতিবাদ হিসাবে অভিহিত করা হয় । 

নয়া উদারনীতিবাদের প্রধান প্রবক্তারা হলেন ফ্রায়েডরিখ , এ. ডি. হায়েক , ইশিয়া বারলিন , মিলটন ফ্রিডম্যান , জন রলস এবং রবার্ট নজিক । 

নয়া উদারনীতিবাদের মূলনীতি 

নয়া উদারনীতিবাদের মূলনীতিগুলি হল— 

ন্যূনতম রাষ্ট্র :

নয়া উদারনীতিবাদে রাষ্ট্রের ভূমিকার পরিবর্তন ঘটানো হয় । অতি ক্ষমতাশালী ও আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বদলে এক ন্যূনতম কর্মসূচি সম্পন্ন রাষ্ট্র বা সীমিত রাষ্ট্রের ( Minimal state ) ধারণাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় । নয়া উদারনীতিবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের একমাত্র কাজ হবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা , নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং নাগরিকদের ন্যায় সংগতভাবে অর্জিত ব্যক্তিগত সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ করা । 

ব্যক্তি স্বাধীনতার সম্প্রসারণ :

নয়া উদারনীতিবাদে ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপকতর সম্প্রসারণের কথা বলা হয় । নয়া উদারনীতিবাদের প্রবক্তাদের মতে , ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার সংরক্ষণের জন্যই রাষ্ট্রের প্রয়োজন । 

অবাধ বাণিজ্য নীতির পুনরুজ্জীবন :

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনোরকম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ নয়া উদারনীতিবাদীরা স্বীকার করেননি । নয়া উদারনীতিবাদের বক্তব্য অনুসারে , ব্যক্তিকে প্রকৃত উন্নতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছোতে হলে তার অর্থনৈতিক জীবনকে সবরকম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে হবে । 

মুক্ত বাজার অর্থনীতি : 

নয়া উদারনীতিবাদে মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় । নয়া উদারনীতিবাদ মনে করে যে একমাত্র অনিয়ন্ত্রিত বাজার অর্থনীতিই প্রাচুর্য , দক্ষতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারে । 

প্রাকৃতিক অধিকার তত্ত্বের সমর্থন : 

রবার্ট নজিক তাঁর Anarchy , State and Utopia শীর্ষক গ্রন্থে জন লকের ‘ প্রাকৃতিক অধিকার ‘ তত্ত্বটিকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন । নজিক বলেছেন যে , নাগরিকদের সম্পত্তি অর্জন ও ভোগের অধিকার এবং চুক্তির স্বাধীনতা অলঙ্ঘনীয় । রাষ্ট্র কোনোভাবেই এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না । এমনকি ধনীদের ওপর কর আরোপের নীতিকে নয়া উদারনীতিবাদীরা কঠোর ভাবে নিন্দা করেন । 

পুঁজির বিশ্বায়ন : 

নয়া উদারনীতিবাদ সারা বিশ্বজুড়ে পুঁজির অবাধ চলাচলের পক্ষপাতী । পুঁজির বিশ্বায়ন হল নয়া উদারনীতিবাদের অন্যতম প্রধান নীতি । এই কারণে বিশ্বব্যাপী অনিয়ন্ত্রিত ও অবাধ প্রতিযোগিতার ওপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয় ।

রাজনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ : 

নয়া উদারনীতিবাদ ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা স্বৈরী প্রতিষ্ঠানের তীব্র বিরোধী । নয়া উদারনীতিবাদ রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষপাতী । 

প্রতিনিধিত্ব মূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা : 

নয়া উদারনীতিবাদের অন্যতম প্রবক্তা হায়েক প্রতিনিধিত্ব মূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন । 

ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিরোধিতা : 

নয়া উদারনীতিবাদের অন্যতম প্রবক্তা ইশিয়া বারলিন ব্যক্তির স্বাধীনতা বা পছন্দের ওপর কোনোরকম হস্তক্ষেপের প্রতি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন । তাঁর মতে , ব্যক্তিগত জীবনের এলাকা ও সরকারি কর্তৃত্বের এলাকার মধ্যে একটা সীমারেখা থাকা উচিত ।

error: Content is protected !!