বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে বাঘা যতীনের অবদান
Contents
বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে বাঘা যতীনের অবদান
বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে যতীন্দনাথ মুখােপাধ্যায় বা বাঘা যতীন যে বিপ্লববাদের নমুনা রেখে গেছেন তা এক স্মরণীয় অধ্যায় । অনুশীলন সমিতি , যুগান্তর দলসহ বিভিন্ন গুপ্ত সমিতিগুলি যখন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে সেসময় বাঘা যতীনের সাহসী সশস্ত্র লড়াই বিপ্লবীদের ব্রিটিশ বিরােধী সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল ।

বিপ্লবী জীবনের প্রথম পর্ব
হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত :
বাঘা যতীন প্রথম জীবনে বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি প্রতিষ্ঠিত আত্মোন্নতি সমিতির দ্বারা অনুপ্রেরণা পান । তিনি নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের ( এম. এন. রায় ) সহযােগিতায় ব্রিটিশ বাহিনীর ১০নং শিখ রেজিমেন্টকে বিদ্রোহী করে তুলতে চাইলে হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হন , কিন্তু প্রমাণের অভাবে ব্রিটিশ তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ।
রডা কোম্পানির অস্ত্র অপহরণ :
সেসময় বাংলার এক বিখ্যাত বন্দুক বিক্রয়কারী সংস্থা ছিল রডা কোম্পানি । বাঘা যতীনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা রডা কোম্পানির আমদানি করা ৫০ টি মাউজার পিস্তল ( পিস্তলের অংশের সঙ্গে বাঁট লাগিয়ে রাইফেলের মতােও ব্যবহার করা যেত ) এবং ৪৬ হাজার রাউন্ড কার্তুজ লুঠ করেন( ১৯১৪ খ্রি. আগস্ট ) । বাঘা যতীনের নির্দেশে এই অস্ত্রশস্ত্রগুলি বাংলায় বিভিন্ন বিপ্লবী দলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয় ।
সশস্ত্র অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা :
জার্মান সামরিক বিভাগের সাহায্য নিয়ে বাঘা যতীনের নেতৃত্বে ভারতীয় বিপ্লবীরা এক সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটানাের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ( ১৯১৫ খ্রি. জানুয়ারি ) । এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতের বাইরে শ্যামদেশের রাজধানী ব্যাংককে ভােলানাথ চট্টোপাধ্যায় ও ইন্দোনেশিয়ার বাটাভিয়াতে নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সি. মার্টিন ছদ্মনামে দুটি বিপ্লবী কেন্দ্র গড়ে তােলেন । বাঘা যতীন জার্মান কনসালের সঙ্গে যােগাযােগ করে তিনটি অস্ত্র ভরতি জাহাজ ভারতে আনার ব্যবস্থা করেন । ‘ হেনরি. এস ’ নামক প্রথম জাহাজটি আসার কথা ছিল সুন্দরবনের রায়মঙ্গলে । জাহাজটি থেকে অস্ত্র গ্রহণ করার দায়িত্ব নেন হরিকুমার চক্রবর্তী ও যতীন ঘােষাল । এই জাহাজের অস্ত্র দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিপ্লব ঘটানাের পরিকল্পনা ছিল । ‘ অ্যানি লারসেন ’ নামক দ্বিতীয় জাহাজটি নােয়াখালির কাছে হাতিয়ায় এসে পৌঁছােলে বরিশালের বিপ্লবীগণ তার অস্ত্র দ্বারা পূর্ববঙ্গে বিপ্লব ঘটাবেন স্থির করেন । ‘ ম্যাভেরিক ’ নামক তৃতীয় জাহাজটি ওড়িশার বালেশ্বরে আসার কথা থাকায় বাঘা যতীন তার সঙ্গী চিত্তপ্রিয় , মনােরঞ্জন , নীরেন ও জ্যোতিষকে নিয়ে বালেশ্বরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ।
বুড়িবালামের যুদ্ধ
যতীন্দ্রনাথ তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে ওড়িশায় কাপ্তিপগা অঞ্চলে বুড়িবালাম নদীর তীরে আশ্রয় নেন । পুলিশ কমিশনার চার্লস ট্রেগার্ট গােপন খবর পেয়ে এক বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে বুড়িবালাম নদীর তীরে উপস্থিত হন । বিপ্লবী ও পুলিশের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে ( ১৯১৫ খ্রি. ৯ সেপ্টেম্বর ) । তিনটি মাউজার পিস্তল নিয়ে বিপ্লবীরা নদীর তীরে বালির মধ্যে ট্রেঞ্চ তৈরি করে যুদ্ধ করতে থাকে । বাঘা যতীন গুরুতর আহত হয়ে বালেশ্বর হাসপাতালে মারা যান ( ১০ সেপ্টেম্বর , ১৯১৫ খ্রি. ) । তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন , নীরেন সেনগুপ্ত ও মনােরঞ্জন দাশগুপ্তের পরে ফাঁসি হয় । জ্যোতিষ পালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় এবং জেলের মধ্যে পুলিশি অত্যাচারে উন্মাদ অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় ।