উদারনীতিবাদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ 

উদারনীতিবাদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ 

গ্রিক দার্শনিকদের দুটি প্রধান নীতি — চিন্তার স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা উদারনীতিবাদের প্রাথমিক উৎস । বস্তুত , সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে সামন্ততান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসন ও বিধি নিষেধের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে উদারনৈতিক মতবাদ জন্মগ্রহণ করে । 

ইউরোপে মধ্যযুগের নবজাগরণ আন্দোলন ও ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সাফল্যের ফলে উদারনীতিবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৬৮৮ সালে ‘ গৌরবময় বিপ্লবের ’ মাধ্যমে উদারনীতিবাদ সুসংহত আকার নেয় ।

অনেকে মনে করেন , ইংল্যান্ডে উদারনীতিবাদের উদ্ভবের কারণ ছিল শিল্প বিপ্লব । শিল্প বিপ্লবের ফলে যে বণিক সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে তারা রাজনৈতিক , সামাজিক , ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক — সবক্ষেত্রে আরও ব্যাপক স্বাধীনতার দাবিদার হয়ে ওঠে । এভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতা সর্বোচ্চ গুরুত্ব লাভ করে । 

ধ্রুপদি উদারনীতিবাদের প্রধান প্রবক্তা জন লকের মতে জনগণের সম্মতি হল রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি । ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাষ্ট্রের নেই । রাষ্ট্র ব্যক্তি স্বাধীনতার পথে বাধাগুলি দূর করতে প্রয়াসী হবে । 

১৭৭৬ সালে আমেরিকার ‘ স্বাধীনতার ঘোষণা‘য় এবং ১৭৮৯ সালে ফরাসি ‘ মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণায় উদারনীতিবাদের আদর্শ বাস্তব রূপ লাভ করে । ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেরেমি বেন্থামের মতে , রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হল সর্বাধিক ব্যক্তির সর্বাধিক পরিমাণ সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করা । উদারনীতিবাদের আর এক প্রবক্তা অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ‘ অবাধ নীতি ‘ বা ‘ Laissez faire Policy’- র কথা বলেন । তিনি নির্দিষ্ট কয়েকটি কাজের মধ্যে রাষ্ট্রের কার্যকলাপকে সীমিত রাখার পক্ষপাতী ছিলেন । 

পরবর্তীকালে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে গ্রিন , ব্রাডলি , বোসাঙ্কেটের হাত ধরে উদারনীতিবাদ আরও সংশোধিত ও পরিবর্তিত হয় । উদারনীতিবাদের সমর্থকরা এসময় জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রতত্ত্ব প্রচার করেন । 

আধুনিককালে উদারনীতিবাদে নাগরিকদের রাজনৈতিক ও পৌর অধিকার , সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার , নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা , বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা , শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন , অবাধ বাণিজ্যনীতি , মুক্ত বাজার অর্থনীতি , পুঁজির বিশ্বায়ন ইত্যাদি মূলনীতি হিসেবে গৃহীত হয় ।

error: Content is protected !!