রাষ্ট্র বিজ্ঞান

সাধারণ সভার কার্যাবলী 

সাধারণ সভার কার্যাবলী 

সাধারণ সভার সাফল্য 

সাধারণ সভার কার্যাবলীর সার্বিক মূল্যায়ন করলে দেখা যায় সাধারণ সভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী ক্রমশ সম্প্রসারিত হয়েছে । এন. ডি. পামার এবং এইচ. সি. পারকিনসকে অনুসরণ করে বলা যায় , সনদ রচয়িতাদের লক্ষ্য অতিক্রম করে সাধারণসভার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে । 

সার্বিক মূল্যায়নে দেখা যায় , ১৯৪৫ থেকে ১৯৬০ সালের ইতিহাস হল সাধারণ সভার ক্রমোন্নতির পর্যায় । ১৯৫০ সালে শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার ফলে তা সাধারণ সভাকে ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে দেয় । সেই সময়কার আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সাধারণ সভার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছিল বলে অনেকে মনে করেন । 

দক্ষিণ রোডেশিয়া , দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া সমস্যা নিয়ে সাধারণ সভার তর্ক বিতর্ক এবং পরবর্তীকালে এইসব অঞ্চলে ঔপনিবেশিক শাসন উচ্ছেদে সাধারণ সভার উদ্যোগ গ্রহণ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় । দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষী নীতি অনুসরণকারী শ্বেতাঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে কুটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সাধারণসভা এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে । 

প্রকৃতপক্ষে , সাধারণ সভার নেতৃত্বে বিশ্বজনমতের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে । ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০০ বছরের বর্ণবৈষম্যমূলক সাম্রাজ্যবাদী শাসনের অবসান ঘটে । সাধারণ সভায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির সংখাগরিষ্ঠ উপস্থিতি সাধারণসভাকে এক ভিন্নতর মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে । এর ফলে সাধারণ সভার আলোচ্যসূচির ব্যাপ্তি ঘটেছে । 

সাম্প্রতিককালে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ , পারমাণবিক অস্ত্রপরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ , মহাকাশ ও সমুদ্রগর্ভের ব্যবহার , পরিবেশ সমস্যা , শিশুদের অধিকার , জনসমস্যা প্রভৃতি বিষয়ে সাধারণসভা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও মতামত প্রকাশে সচেষ্ট হয়েছে । 

এ কথা অনস্বীকার্য যে আলাপ আলোচনা , তর্কবিতর্ক ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্বজনমত গঠনে সাধারণ সভার ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ । এই কারণে সাধারণ সভাকে বিশ্ব বিবেকের কণ্ঠস্বর বলা হয় । 

সাধারণ সভার ব্যর্থতা 

১৯৬০ সালের পর থেকে সাধারণ সভার প্রভাব হ্রাস পেতে থাকে । সদস্য রাষ্ট্রগুলি এই সময় সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞদের মতে , সভার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে হলে এর বর্তমান কাঠামো ও কার্যপদ্ধতির সংস্কার করা দরকার । 

১৯৯২ সালের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক ভাঙনের মধ্যে দিয়ে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান হওয়ার পর নতুন বিশ্বব্যবস্থায় জাতিপুঞ্জের প্রকৃত নিয়ামকের আসনে নিরাপত্তা পরিষদ অধিষ্ঠিত রয়েছে । সাধারণ সভার ভূমিকা সে তুলনায় অনেক বেশি আনুষ্ঠানিক । 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞদের মতে , সাধারণ সভার ক্ষমতা শুধুমাত্র রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ । সুতরাং , সাধারণ সভার ভূমিকার এই সীমাবদ্ধতা বিশ্বরাজনীতির স্বাভাবিক প্রতিফলন ছাড়া আর কিছু নয় ।

error: Content is protected !!