আলিপুর বোমা মামলা দুঃসাহসিক কার্যকলাপ ও ফলাফল
Contents
আলিপুর বোমা মামলা দুঃসাহসিক কার্যকলাপ ও ফলাফল

লর্ড কার্জনের বঙ্গ ভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘােষিত হলে ( ১৯০৫ খ্রি. ) পূর্ববঙ্গ ও আসামের গভর্নর ব্যামফিল্ড ফুলার বিপ্লবী সন্দেহে সাধারণ ভারতবাসীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন শুরু করেন । সে – সময় বাংলার গভর্নর ছিলেন স্যার অ্যানড্রু ফ্রেজার । যুগান্তর দলের সদস্যরা এই দুই গভর্নরকে হত্যা করার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয় । অবশেষে তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠেন কলকাতায় প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড । তিনি বিপ্লবীদের মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছেন এই সংবাদ পেয়ে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে মজঃফরপুরে বদলি করে দেয় । যুগান্তর দলের নির্দেশে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু সেখানেই তাকে হত্যার চেষ্টা করেন ( ৩০ এপ্রিল, ১৯০৮ খ্রি. ) , কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন । ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকীর মজঃফরপুরে বােমা বিস্ফোরণের পরই পুলিশ মুরারি পুকুর বাগান বাড়ি তল্লাশি করে বহু তাজা বােমা ও অন্যান্য বিস্ফোরক পদার্থ আবিষ্কার করে এবং বারীন্দ্র ও অরবিন্দ ঘােষ সহ মােট ৪৭ জন বিপ্লবীকে গ্রেফতার করে । শুরু হয় ভারতীয় বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে প্রথম যড়যন্ত্র মামলা — বিখ্যাত আলিপুর বােমার মামলা ( ১৯০৮ খ্রি. ) । আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার বিচারপতি ছিলেন ইংল্যান্ডে অরবিন্দের ছাত্রজীবনের সহপাঠী বীচক্রফট ( Beach Creoft ) । প্রায় একবছর ধরে এই মামলা চলে।
দুঃসাহসিক কার্যকলাপ
মামলা চলাকালে পুলিশের সাব – ইনস্পেকটর নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায় , সরকারি উকিল আশুতােষ বিশ্বাস ও পুলিশের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট সামসুল আলম বিপ্লবীদের হাতে নিহত হন । শুধু তাই নয় , জেলের ভিতরেও একটি দুঃসাহসিক হত্যাকাণ্ড ঘটে । নরেন গোঁসাই নামে এক দুর্বল চিত্ত বিচারাধীন বিপ্লবীর রাজসাক্ষী হওয়ার বাসনার কথা জানতে পেরে কানাইলাল দত্ত ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু নামে অন্য দুই বন্দি বিপ্লবী জেলের মধ্যেই নরেনকে গুলি করে হত্যা করেন । বিশ্বের বিপ্লববাদের ইতিহাসে এ এক নজির বিহীন ঘটনা । বিচারে কানাইলাল ও সত্যেন্দ্র দুজনেরই ফাঁসি হয় ।
আলিপুর বোমা মামলা ফলাফল
প্রথমদিকে ব্যারিস্টার ব্যোমকেশ চক্রবর্তী অরবিন্দের হয়ে মামলায় সওয়াল শুরু করেন । পরে ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন দাশ – এর প্রচেষ্টায় অরবিন্দ নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পান । তবে ১৫ জন বিপ্লবী দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাঁদের মধ্যে বারীন্দ্র ঘােষ , উল্লাসকর দত্ত প্রমুখ কয়েকজনের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয় । মুক্তি পেয়ে অরবিন্দ বিপ্লবের সংস্পর্শ ত্যাগ করেন ও পণ্ডিচেরীতে অধ্যাত্মসাধনায় ব্রতী হন । তখন থেকে তিনি ঋষি অরবিন্দ নামে বিখ্যাত । অন্যদিকে সরকারি দমন নীতির কঠোরতাও প্রচণ্ডভাবে বেড়ে যায় । যুগান্তর ও অনুশীলন সমিতি – কে নিষিদ্ধ করা হয় ( ১৮০৯ খ্রি. ) । বিদ্রোহমূলক জনসভা নিবারক আইন প্রবর্তিত হয় । ফলে বাংলার বিপ্লবী প্রচেষ্টা সাময়িকভাবে স্তিমিত হয়ে পড়ে ।
উপসংহার
আলিপুর বােমার মামলা চলাকালীন অরবিন্দ আত্মপক্ষ সমর্থনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন — “ আমার বিরদ্ধে অভিযোগ যে আমি দেশে স্বাধীনতার আদর্শ প্রচার করেছি । আমি এই অপরাধ স্বীকার করি । এর জন্যই আমি কলকাতায় এসেছি । এর জন্যই আমি জীবন ধারণ করি , পরিশ্রম করি — জাগরণে এই আমার একমাত্র চিন্তা ,নিদ্রায় ইহাই আমার স্বপ্ন । ” আলিপুর বােমা মামলার পর সাময়িকভাবে বাংলায় বিপ্লববাদ থমকে যায় ।