রাষ্ট্র বিজ্ঞান

বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা

বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে জাতীয় স্বার্থের ভূমিকা

কোনো দেশের বিদেশনীতি নির্ধারণে ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ণয়ে সেই দেশের জাতীয় স্বার্থ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । জাতীয় স্বার্থকেই প্রতিটি রাষ্ট্র বিদেশনীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভিত্তিগত উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে থাকে । তাই কোনো দেশের বিদেশনীতি তথা বৈদেশিক সম্পর্ক জাতীয় স্বার্থ বহির্ভূত অন্য কোনো শর্ত মেনে গড়ে ওঠে না । 

প্রকৃতপক্ষে , জাতীয় স্বার্থের প্রেক্ষাপটেই পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং সেইমতো নিজেদের বিদেশনীতি গ্রহণ করে থাকে । বলা বাহুল্য , প্রতিটি রাষ্ট্রের বিদেশনীতি গড়ে ওঠে তার জাতীয় স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য । জাতীয় স্বার্থের মধ্যে জাতীয় আশা , আকাঙ্ক্ষা , রুচি , সংস্কৃতি , মূল্যবোধ এবং বিকাশের ইঙ্গিত নিহিত থাকে । একটি রাষ্ট্রের এই সমস্ত স্বার্থপূরণ নির্ভর করে সেই রাষ্ট্রের সঠিক বিদেশনীতির ওপর । 

আজকের আন্তর্জাতিক পরিবেশে পৃথিবীর প্রায় সব রাষ্ট্রই গৃহীত ও অনুসৃত বিদেশনীতির মধ্যে দিয়ে সর্বাধিক পরিমাণে নিজ নিজ জাতীয় স্বার্থকে চরিতার্থ করার চেষ্টা করে থাকে । তা ছাড়া প্রতিটি রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক পরিবেশে তার নিজস্ব ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কীভাবে বজায় রাখবে তা জাতীয় স্বার্থের ধারণার ওপর নির্ভর করেই নির্ধারণ করে থাকে । 

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থকরা মনে করেন যে , কোনো রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির মূল ভিত্তি হল জাতীয় স্বার্থ । কোনো রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি জাতীয় স্বার্থের ধারণাকে অতিক্রম করে গড়ে ওঠেনি বা গড়ে ওঠা সম্ভবও নয় । 

কারণ , আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থের ধারণা মুখ্য ভূমিকা পালন করে । যেমন , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের ( বর্তমানে অবলুপ্ত ) পৃথক পৃথকভাবে যে দুটি সামরিক ও অর্থনৈতিক জোট গঠিত হয়েছিল , সেই দুটিরই মূল উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের জাতীয় স্বার্থকে সুরক্ষিত ও প্রসারিত করা । 

আবার ওই সময় সোভিয়েত ও মার্কিন জোটের বাইরে অবস্থানকারী রাষ্ট্রগুলিও জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনেই জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছিল ।

পরিশেষে বলা যায় , জাতীয় স্বার্থই হল কোনো রাষ্ট্রের বিদেশ নীতির মূলমন্ত্র । তবে বৈদেশিক নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিটি রাষ্ট্রের তার জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি কোনো ক্ষেত্রেই অন্ধ জাতীয় স্বার্থকে প্রশ্রয় না দেওয়াও জরুরি । এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বার্থ ও বিশ্বমানবতার স্বার্থকে গুরুত্ব দেওয়াই বাঞ্ছনীয় । এর ফলেই বিদেশনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থের ধারণা অর্থবহ ও কার্যকর হয়ে উঠবে ।

error: Content is protected !!