অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠা / আদর্শ / কার্যাবলী
Contents
অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠা / আদর্শ / কার্যাবলী
আধুনিক বিশ্বের সর্বত্রই বিপ্লব প্রচেষ্টা সংগঠিত ও পরিচালিত হয়ে এসেছে কিছু গুপ্ত সমিতি গঠনের মধ্য দিয়ে । বাংলার বিপ্লববাদী কার্যকলাপ পরিচালনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি । বাংলার প্রকৃত রাজনৈতিক গুপ্ত সমিতি গঠনের সূচনা হয় বিশ শতকের শুরুতে । স্বদেশি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র বিপ্লবের পটভূমিকায় গড়ে ওঠে অনুশীলন সমিতি ।

অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠা
সতীশচন্দ্র বসু জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইন্সটিটিউশান ( এখনকার স্কটিশচার্চ কলেজ ) – এর ব্যায়ামাগারে প্রথম গঠন করেন কাশীনাথ সাহিত্য সমিতি । তিনি এরপর প্রমথনাথ মিত্রের সাহায্য নিয়ে কলকাতার ১২ , মদন মিত্র লেনে প্রতিষ্ঠা করেন অনুশীলন সমিতি ( ১৯০২ খ্রি. ২৪ মার্চ ) । সিটিজেন কমিটির রিপাের্ট অনুযায়ী ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে অনুশীলন সমিতি ছিল বাংলার বৃহত্তম বৈপ্লবিক সংগঠন । অনুশীলন সমিতির প্রধান সংগঠক ও সভাপতি ছিলেন প্রমথনাথ মিত্র , সহসভাপতি ছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ , কোষাধ্যক্ষ ছিলেন অরবিন্দ ঘােষ আর অন্যতম পৃষ্ঠপােষক ছিলেন ভগিনী নিবেদিতা ।
অনুশীলন সমিতির আদর্শ
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘ আনন্দমঠ ’ উপন্যাসে সন্তানদলের সমিতির অনুকরণে এই সমিতির নাম হয় অনুশীলন সমিতি । এর নামকরণ করেন নিউ ইন্ডিয়ান স্কুলের শিক্ষক সতীশচন্দ্র মুখােপাধ্যায় । অনুশীলন সমিতির সদস্যরা বিপ্লবী সংগ্রামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্রিটিশের সঙ্গে সরাসরি সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার প্রতিজ্ঞা নেয় । এখানকার সদস্যদের ফরাসি বিপ্লব , ইতালির মুক্তি আন্দোলন , আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম ইত্যাদি সংগ্রামের কাহিনি শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হত । গীতা ও আনন্দমঠ ছিল সমিতির সদস্যদের কাছে অবশ্য পাঠ্য ।
অনুশীলন সমিতির প্রতিজ্ঞা গ্রহণ
অনুশীলন সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করার আগে সদস্যদের কিছু প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হত। নতুন সদস্যদের মধ্যে যারা যােগ্যতা দেখিয়ে গুরু দায়িত্ব বহন করতে চাইতেন তাদেরকে বিশেষ কিছু প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হতো —
- সমিতির সকল নিয়ম মেনে চলা ,
- পরিচালকের সকল আদেশ পালন করা ,
- পরিচালকের কাছে সত্য কথা বলা ।
অনুশীলন সমিতির নিয়মাবলী
সদস্যদের পালনীয় ২২টি নিয়মের মধ্যে অন্যতম ছিল —
- প্রত্যেক সদস্যকে অর্থ ও মূল্যবান দ্রব্য সংগ্রহ করে পার্টি তহবিলে জমা দিতে হবে ।
- পার্টির সংগঠনের ব্যাপারে কোনাে চিঠি পাঠাতে গেলে সেই চিঠি পরিচালকের কাছে জমা দিতে হবে ।
- পার্টি সংগঠনকে সামরিক সংগঠনের মতােই মেনে চলতে হবে । কোনাে নিয়ম অমান্য করলে অপরাধ অনুসারে শাস্তি পেতে হবে ।
- পার্টি সদস্যদের সর্বদাই ন্যায় প্রতিষ্ঠার আদর্শে অবিচল থাকতে হবে ।
অনুশীলন সমিতির কার্যাবলী
অনুশীলন সমিতির নেতৃত্বে নিস্ক্রিয় প্রতিরােধ ও সশস্ত্র আন্দোলন এই দুই পদ্ধতিতে বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালিত হত । অর্থ সংগ্রহের জন্য সদস্যরা রাজনৈতিক ডাকাতিতেও লিপ্ত হতে পিছপা হত না । বিপ্লবীরা গােপনে দেশে বা বিদেশে অস্ত্র সংগ্রহ বা বােমা তৈরির কৌশল শিখত ।