মৌলিক অধিকার ও নির্দেশমূলক নীতির মধ্যে পার্থক্য
Contents
মৌলিক অধিকার ও নির্দেশমূলক নীতির মধ্যে পার্থক্য
সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ মৌলিক অধিকারের সঙ্গে চতুর্থ অধ্যায়ের রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতির উল্লেখযোগ্য পার্থক্যগুলি হল—
মৌলিক অধিকারগুলি নেতিবাচক , নির্দেশমূলক নীতিগুলি ইতিবাচক
মৌলিক অধিকারগুলি রাষ্ট্র কর্তৃত্বের ওপর এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে । নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের পক্ষে যেসব কাজ করা চলবে না মৌলিক অধিকারগুলি সেই নির্দেশ জারি করে । অন্যদিকে নাগরিক অধিকারের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের কী কী কাজ করা উচিত , নির্দেশমূলক নীতিগুলি রাষ্ট্রকে সে – সম্পর্কে ইতিবাচক নির্দেশ দেয় ।
আদালতের বলবৎযোগ্যতা সংক্রান্ত
মৌলিক অধিকারগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য । অন্যদিকে সংবিধানের চতুর্থ অধ্যায়ে বর্ণিত নির্দেশমূলক নীতিগুলির ব্যাপারে আদালতের কোনো দায়বদ্ধতা নেই । নির্দেশমূলক নীতিগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয় ।
কার্যকারিতা সম্পর্কিত
কোনো মৌলিক অধিকারকে কার্যকর করতে গেলে আইনসভাকে তার জন্য আলাদাভাবে আইন প্রণয়ন করতে হয় না । কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার যে কোনো নির্দেশমূলক নীতি কার্যকর করতে গেলে আলাদাভাবে আইন প্রণয়ন করতে হয় ।
বাতিলকরণ সংক্রান্ত
সংবিধানের ১৩ নং ধারা অনুযায়ী আইনসভার কোনো আইন অথবা শাসনবিভাগের কোনো নির্দেশ যদি মৌলিক অধিকারের বিরোধী হয় তাহলে আদালত সেই আইন বা নির্দেশকে বাতিল ঘোষণা করতে পারে । অন্যদিকে নির্দেশমূলক নীতির বিরোধী কোনো আইন বা নির্দেশ আদালত বাতিল করতে পারে না ।
প্রাধান্য সংক্রান্ত
মৌলিক অধিকারের সঙ্গে বিরোধ ঘটলে নির্দেশমূলক নীতি বাতিল হয়ে যায় । সুপ্রিমকোর্ট ১৯৫১ সালে মাদ্রাজ রাজ্য বনাম চম্পকম মামলার এবং ১৯৫৮ সালে হানিফ কুরেশি বনাম বিহার রাজ্য মামলার রায়দানকালে ঘোষণা করেন , নির্দেশমূলক নীতিগুলিকে মৌলিক অধিকারের পরিপূরক ও সংগতিপূর্ণ হতে হবে এবং রাষ্ট্রকে নির্দেশমূলক নীতিগুলি এমনভাবে কার্যকর করতে হবে যাতে মৌলিক অধিকারগুলি ক্ষুণ্ণ না হয় ।
রাষ্ট্র কর্তৃত্বের পরিধি সম্পর্কিত
নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য মৌলিক অধিকারগুলি রাষ্ট্র কর্তৃত্বের পরিধিকে সংকুচিত করে । অন্যদিকে নির্দেশমূলক নীতিগুলি বহুমুখী অর্থনৈতিক ও সামাজিক আদর্শকে রূপায়ণ করার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃত্বের পরিধিকে প্রসারিত করে ।
স্থিতিশীলতা ও গতিশীলতা
অনেকের মতে , মৌলিক অধিকারগুলি স্থিতিশীল । মূল সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলি যেভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছিল তা এখনও তেমনি অবস্থায় রয়েছে । কোনো নতুন মৌলিক অধিকার আজ পর্যন্ত সংযোজিত হয়নি । অন্যদিকে নির্দেশমূলক নীতিগুলি পরিস্থিতির তাগিদে পরিবর্তিত ও সংযোজিত হয় ।
উদ্দেশ্য সংক্রান্ত
মৌলিক অধিকারগুলির উদ্দেশ্য হল গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন করা , অন্যদিকে রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতিগুলি জনকল্যাণকামী সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার পক্ষপাতী । বস্তুতপক্ষে সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলির প্রকৃতি মূলত রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত , অন্যদিকে নির্দেশমূলক নীতিগুলি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ।