নির্দেশমূলক নীতির গুরুত্ব বা তাৎপর্য

নির্দেশমূলক নীতির গুরুত্ব বা তাৎপর্য 

নির্দেশমূলক নীতিগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য না হওয়ায় অনেকে এগুলিকে সংবিধান রচয়িতাদের ‘ নৈতিক উপদেশ ’ ও ‘ রাজনৈতিক ইস্তাহার ‘ বলে বর্ণনা করেছেন । কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা বিভিন্ন কারণে এই নীতিগুলির তাৎপর্যকে অস্বীকার করতে পারি না । 

( 1 ) এই নীতিগুলি হল জনকল্যাণের জন্য সরকারের প্রতি সংবিধানের নির্দেশ । এর পিছনে কোনোরকম আইনগত সমর্থন না থাকলেও নৈতিক ও রাজনৈতিক সমর্থন যথেষ্ট রয়েছে । এই প্রসঙ্গে ড. আম্বেদকরের অভিমত হল , যদি কোনো সরকার এই নীতিগুলি উপেক্ষা করে তাহলে সেই সরকারকে নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে জবাবদিহি করতে হবে । 

( 2 ) সংবিধান বিশেষজ্ঞ পানিক্কারের মতে , মৌলিক অধিকারগুলি যখন ভারতে রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তখন নির্দেশমূলক নীতিগুলি আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতীয় গণতন্ত্রকে পরিপূর্ণতা দানের চেষ্টা করেছে ।

( 3 ) আপাতদৃষ্টিতে নীতিগুলির কোনো আইনগত তাৎপর্য নেই বলে মনে হলেও এ ধারণা ঠিক নয় । সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশমূলক নীতির ওপর ভিত্তি করে আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করেছে । দৃষ্টান্ত স্বরূপ বিহার রাজ্য বনাম কামেশ্বর সিং ( ১৯৫২ ) , বালসারা বনাম বোম্বাই রাজ্য ( ১৯৫১ ) , কেরালা শিক্ষা বিল ( ১৯৫৮ ) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । 

( 4 ) নির্দেশমূলক নীতি সমূহের প্রতি সরকারি দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যেও সদর্থক মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি বিভিন্ন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন নির্দেশমূলক নীতিকে বাস্তবায়িত করেছে । একাধিকবার সংবিধান সংশোধনও করা হয়েছে । 

এ প্রসঙ্গে জমিদারি প্রথা বিলোপ , ব্যাংক বিমা জাতীয়করণ , পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার প্রবর্তন , সমাজ উন্নয়ন পরিকল্পনা , অবৈতনিক প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায় । 

( 5 ) সংবিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কে. সি. হোয়ারের মতে , নির্দেশমূলক নীতির আদর্শ প্রাচীন হলেও এদের পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন । কারণ এই নীতিগুলি জনগণকে তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ করে । এম. ভি. পাইলির মতে , নির্দেশমূলক নীতিগুলি হল ভারতীয় জনগণের ন্যূনতম আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ।

error: Content is protected !!