ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকারের প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা
ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকারের প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতা
ভারতীয় সংবিধানে সংরক্ষিত মৌলিক অধিকারগুলির প্রকৃতির মূল্যায়ন করতে গিয়ে দেখা যায় এগুলি পুরোপুরি নিরঙ্কুশ নয় । সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে ১২-৩৫ নং ধারার মধ্যে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য মোট ছয় প্রকার মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ হয়েছে । সেগুলি হল— 1. সাম্যের অধিকার , 2. স্বাধীনতার অধিকার , 3. শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার , 4. ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার , 5. সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার এবং 6. শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার ।
সাধারণ অবস্থায় এবং জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র মৌলিক অধিকারগুলির ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে । সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা , জনস্বার্থ , শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা , বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী বন্ধন , সদাচার ও শালীনতা রক্ষা , আদালত অবমাননা ও মানহানি প্রতিরোধ প্রভৃতি কারণে মৌলিক অধিকারগুলির ওপর বিধিনিষেধ আরোপিত হতে পারে ।
অন্যদিকে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সশস্ত্র বাহিনী বা শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভারপ্রাপ্ত বাহিনীর লোকজনদের ক্ষেত্রে কর্তব্যে গাফিলতি বা নিয়মানুবর্তিতা লঙ্ঘনের কারণে , দেশের কোনো অংশে বা সমগ্র দেশে সামরিক আইন বলবৎ করা হলে , দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে সাময়িকভাবে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি অকার্যকর হয়ে পড়ে । প্রসঙ্গত বলা যায় , সংবিধানের ২১ নং ধারায় বর্ণিত জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকারকে কোনোভাবেই কোনো অবস্থায় স্থগিত রাখা যায় না ।
কাজেই উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটা অনেকটাই সুস্পষ্ট হয় যে , মৌলিক অধিকারগুলির প্রকৃতি সম্পূর্ণ নিরঙ্কুশ নয় । তা ছাড়া সংবিধানের ২৫ তম সংশোধনী অনুযায়ী ৩৯ ( খ ) এবং ৩৯ ( গ ) নং ধারায় বর্ণিত নির্দেশমূলক নীতিগুলিকে বলবৎ করতে গিয়ে সংসদপ্রণীত কোনো আইন যদি মৌলিক অধিকারের ১৪ , ১৯ এবং ৩১ নং ধারার বিরোধী হয় তবু তা বাতিল বলে গণ্য হবে না । সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে , এর ফলে মৌলিক অধিকারের ওপরে নির্দেশমূলক নীতিগুলিকে স্থান দেওয়া হয়েছে ।