মৌলিক অধিকারের বৈশিষ্ট্য
Contents
মৌলিক অধিকারের বৈশিষ্ট্য
ভারতের সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত এবং ঘোষিত মৌলিক অধিকারগুলির কয়েকটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে । সেগুলির মধ্যে প্রধান পাঁচটি হল—
বিভিন্ন দেশের সংবিধান ও তত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত
ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে মৌলিক অধিকারগুলি লিপিবন্ধ রয়েছে । সংবিধান রচয়িতারা এক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক সংবিধান এবং রাজনৈতিক তত্ত্বের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ অধিকারের সনদ ‘ , ফ্রান্সের ‘ মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণা ‘, আয়ারল্যান্ডের সংবিধান , রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডাইসির আইনের অনুশাসন তত্ত্ব এবং গান্ধিজির চিন্তাধারা ইত্যাদির কথা এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় ।
জরুরি অবস্থায় অবলবৎযোগ্য
রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে ২১ নং ধারায় উল্লিখিত জীবনের অধিকার ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার ছাড়া অন্যান্য মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যায় না ।
আইনগত ও রাজনৈতিক প্রকৃতি বিশিষ্ট
ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলির প্রকৃতি প্রধানত আইনগত ও রাজনৈতিক । কোনো অর্থনৈতিক অধিকারকে মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি ।
সর্বজনীন নয়
মৌলিক অধিকারগুলির প্রকৃতি সর্বজনীন নয় । অর্থাৎ ভারতে বসবাসকারী সব ব্যক্তি সব মৌলিক অধিকার সমানভাবে ভোগ করতে পারে না । কয়েকটি মৌলিক অধিকার শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকরা ভোগ করতে পারে , যেমন স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার , সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমানাধিকার প্রভৃতি ।
অন্যদিকে এমন কয়েকটি অধিকার আছে যেগুলি নাগরিক ও অ-নাগরিক নির্বিশেষে ভারতের সমস্ত অধিবাসী সমানভাবে ভোগ করতে পাত্রে , যেমন — আইনের দৃষ্টিতে সমতার অধিকার , জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার , ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ইত্যাদি ।
সীমিত বা নিয়ন্ত্রিত
ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃত ও ঘোষিত মৌলিক অধিকারগুলি অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত নয় । অবশ্য কোনো রাষ্ট্রই অবাধ বা সীমাহীন কোনো অধিকার নাগরিকদের দেয় না , কেননা অধিকার অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত হলে তা স্বৈরাচারে পরিণত হয় ।
এ. কে. গোপালন বনাম মাদ্রাজ রাজ্য ( ১৯৫০ ) মামলায় বিচারপতি মুখার্জী তাঁর রায়ে ঘোষণা করেন যে , চরম অথবা অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা বলে কিছু হতে পারে না । কেননা নিয়ন্ত্রণ থেকে পুরোপুরিভাবে মুক্ত থাকার অর্থ হল নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলাকে ডেকে আনা ।