রাষ্ট্র বিজ্ঞান

ভারতীয় সংবিধানের ২২ নং ধারায় গ্রেফতার বা আটক সংক্রান্ত নিবর্তনমূলক আটক আইন

ভারতীয় সংবিধানের ২২ নং ধারায় গ্রেফতার বা আটক সংক্রান্ত নিবর্তনমূলক আটক আইন

ভারতীয় সংবিধানের ২২ নং ধারায় গ্রেফতার বা আটক সংক্রান্ত ব্যবস্থাদি লিপিবদ্ধ করে বলা হয়েছে যে , কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার বা আটক করা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে গ্রেফতার বা আটকের কারণ জানাতে হবে । আটক ব্যক্তিকে তার আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার দিতে হবে [ ২২ ( ২ ) ধারা ]

 গ্রেফতার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আটক ব্যক্তিকে নিকটবর্তী জেলাশাসকের আদালতে হাজির করতে হবে এবং জেলাশাসকের অনুমতি ছাড়া অতিরিক্ত সময় তাকে কোনোভাবেই আটক রাখা যাবে না [ ২২ ( ৩ ) ধারা ] । 

তবে শত্রুভাবাপন্ন বিদেশি এবং নিবর্তনমূলক আটক আইনে ধৃত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উল্লিখিত নিয়মগুলি কার্যকর হবে না । কোনো বিপজ্জনক বা গুরুতর অপরাধের ( যেমন — প্রতিরক্ষা , বৈদেশিক সম্পর্ক ও জাতীয় নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ) আশষ্কার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার ও আটক করা হলে সেই আটককে ‘ নিবর্তনমূলক আটক ’ বলে । 

সংবিধান অনুসারে ভারতের সংসদ ও রাজ্য আইনসভাগুলি নিবর্তনমূলক আটক আইন প্রণয়ন করতে পারে । এই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা যুগ্ম তালিকার অন্তর্ভুক্ত ; সেই কারণে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় আইনের মধ্যে কোনো অসংগতি দেখা দিলে রাজ্য আইনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ অংশ বাতিল বলে গণ্য হবে । নিবর্তনমূলক আটক সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সংবিধানের ২২ ( ৪ ) থেকে ২২ ( ৭ ) ধারার মধ্যে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে । ৪৪ তম সংবিধান সংশোধনী আইনে সংবিধানের ২২ ( ৪ ) থেকে ২২ ( ৭ ) উপধারাগুলির কিছু পরিবর্তন করা হয় । 

বর্তমানে উপদেষ্টা পর্যদের অনুমতি ছাড়া নিবর্তনমূলক আটক আইনে কোনো ব্যক্তিকে দু-মাসের বেশি আটক রাখা যায় না । হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সুপারিশক্রমে মোট তিনজন বিচারপতিকে নিয়ে এই পর্ষদ গঠিত হবে । ভারতে সংবিধান চালু হওয়ার অব্যবহিত পরেই নিবর্তনমূলক আটক আইন প্রণীত হয় । পরবর্তীকালে মিসা , কাফে পোসা , নাসা প্রভৃতি চালু করা হয় । ২০০২ সালে POTA ( Prevention of Terrorist Act ) বা ‘ সন্ত্রাসবাদ রোধ আইন ‘ নামে একটি নতুন সন্ত্রাসবাদ দমন আইন চালু হয় । 

২০০৪ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত চতুর্দশ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট ( ইউ.পি.এ. ) সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ৭ ই জুন ( ২০০৪ ) তারিখে সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আবদুল কালাম নতুন সরকারের কর্মসূচি সম্পর্কে ভাষণ দিতে গিয়ে সন্ত্রাসবাদ দমনে ‘ পোটা ‘ আইন বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন যে , এর পরিবর্তে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস রুখতে একটি আদর্শ আইন তৈরি করা হবে এবং প্রতিটি রাজ্যকে তা কার্যকর করতে উৎসাহিত করা হবে । 

প্রসঙ্গত বলা যায় , এক্ষেত্রে অবৈধ কার্যকলাপ ( প্রতিরোধ ) আইন ( The Unlawful Activities Prevention Act ) সংশোধিত অবস্থায় বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে । নিবর্তনমূলক আটক আইন নিঃসন্দেহে ব্যক্তি স্বাধীনতার বিরোধী । পৃথিবীর অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশে স্বাভাবিক অবস্থায় এ ধরনের আইন দেখা যায় না । বিচারপতি পাতঞ্জলি শাস্ত্রী একে ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ বলে অভিহিত করেন । 

error: Content is protected !!