ভারতীয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বৈশিষ্ট্য
ভারতীয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা বৈশিষ্ট্য
যুগ যুগ ধরে ভারতবর্ষে বহু ধর্মের মানুষ পাশাপাশি বসবাস করে আসছে । তাই ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতারা ভারতকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত না করে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন । ভারতের সংবিধানের অন্যতম রূপকার অনন্তসায়নম আয়েঙ্গার বলেছিলেন , আমরা ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ ।
ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে , কোনো ধর্মের প্রতি অবিশ্বাস বা দৈনন্দিন জীবনে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা বোঝায় না । ‘ ধর্ম নিরপেক্ষ ‘ কথাটির অর্থ হল , রাষ্ট্র কোনো বিশেষ ধর্মকে সাহায্য করবে না বা এক ধর্ম অপেক্ষা অন্য ধর্মকে প্রাধান্য দেবে না । অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে সব ধর্মকে সমান মর্যাদা দেওয়া বোঝায় ।
ড. রাধাকৃষ্ণন এর মতে , ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলতে , অধার্মিক , ধর্ম বিরোধী কিংবা ধর্ম বিষয়ে উদাসীন রাষ্ট্রকে বোঝায় না । ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যক্তি বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির ধর্মীয় স্বাধীনতাকে স্বীকার করে , সকল ধর্মকে সমান গুরুত্ব দেয় , কোনো বিশেষ ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব বা বিরুদ্ধ মনোভাব পোষণ করে না ।
এককথায় , ধর্ম বিষয়ে রাষ্ট্র সার্বিকভাবে নিরপেক্ষ থাকে । ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সকল নাগরিকের ধর্মের ও উপাসনার স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়েছে । মূল সংবিধানে না হলেও ১৯৭৬ সালের ৪২ তম সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রস্তাবনায় ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি ঘোষিত হয়েছে ।
সর্বোপরি , ভারতের সংবিধানের ২৫ , ২৬ , ২৭ ও ২৮ – এই চারটি ধারায় মৌলিক অধিকার হিসেবে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে । এর মধ্যে দিয়েই ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে ।