ভারতীয় সংবিধানের প্রকৃতি
Contents
ভারতীয় সংবিধানের প্রকৃতি
ভারতীয় সংবিধানের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে গেলে প্রথমেই যেসব কথা বলা যায় সেগুলি হল—
লিখিত ও অলিখিত অংশ
ভারতীয় সংবিধানকে সারা বিশ্বের মধ্যে সর্ববৃহৎ লিখিত সংবিধান বলে আখ্যা দেওয়া হয় । ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান যখন কার্যকর হয় সে সময় তাতে ৩৯৫ টি ধারা এবং ৮ টি তপশিল ছিল । বর্তমানে বিভিন্ন সময়ে সংবিধান সংশোধনের পর ভারতীয় সংবিধানের সর্বমোট ধারা প্রায় ৪৫০ টি এবং তপশিলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ ।
তবুও ভারতীয় সংবিধানে কিছু অলিখিত অংশ থেকে গেছে । যেমন — লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতারূপে প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ , প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব , সংসদীয় সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি ।
সংবিধান সংশোধন পদ্ধতির পর্যালোচনা
( i ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মতো অতিমাত্রায় দুষ্পরিবর্তনীয় বা ব্রিটেনের মতো সুপরিবর্তনীয় — এই দুই পর্যায়ের কোনোটির মধ্যেই ভারতীয় সংবিধানকে ফেলা যায় না । ভারতের সংবিধানে সুপরিবর্তনশীলতা এবং দুষ্পরিবর্তনীয়তার এক সঠিক সমন্বয় ঘটেছে ।
( ii ) পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ক্ষমতাসীন দল খুব সহজেই সংবিধান সংশোধন করতে পারে । তা ছাড়া ২৪ তম সংশোধনী আইন অনুসারে , সংবিধান বিলের সংশোধন বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সম্মতি প্রদান বাধ্যতামূলক হওয়ায় সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির প্রকৃত অর্থে কোনো কার্যকরী ভূমিকা নেই ।
( iii ) যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে থেকেও রাজ্যগুলিকে সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপনের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি ।
( iv ) রাজ্যগুলির পুনর্গঠনের ব্যাপারে পার্লামেন্টের একক ক্ষমতা রয়েছে ।
( v ) কেন্দ্র এবং অর্ধেক রাজ্যে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের গরিষ্ঠতা থাকলে ভারতীয় সংবিধানের সব অংশ সুপরিবর্তনীয় হয়ে দাঁড়ায় ।
উপসংহার
ভারতীয় সংবিধানের প্রকৃতি বিশ্লেষণে এ কথা বলা যায় যে , যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ভারতে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে । ভারতীয় সংবিধানকে সার্বভৌম , সমাজতান্ত্রিক , ধর্মনিরপেক্ষ , গণতান্ত্রিক সাধারণতান্ত্রিক প্রকৃতি বিশিষ্ট বলে আখ্যা দেওয়া হয় ।
অবশ্য মার্কসবাদী লেখকরা ভারতের সংবিধানের প্রকৃতি বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে এর পুঁজিবাদী শ্রেণিচরিত্রের দিকটি তুলে ধরেন । তাঁদের মতে , জনকল্যাণের যে উচ্চ আদর্শের কথা সংবিধানে বলা হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের ক্ষমতাকে আরও সুদৃঢ় করেছে ।