রাষ্ট্র বিজ্ঞান

ভারতের সংবিধান প্রণয়ন এর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা বিশ্লেষণ 

Contents

ভারতের সংবিধান প্রণয়ন এর সংক্ষিপ্ত রূপরেখা বিশ্লেষণ 

ভারতের সংবিধান প্রণয়নের বিষয়টি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা । স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় , ভারতীয়দের রাজনৈতিক ভাগ্য স্বয়ং ভারতীয়রা নির্ধারণ করবে — এ দাবি বহু আগে ১৯২২ সালে গান্ধিজির ‘ স্বরাজ ’ এর মাধ্যমে উত্থাপিত হয় । পরবর্তীকালে ভারতীয় স্ট্যাটিউটরি কমিশন (Indian Statutory Commission) এবং গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতের জনগণের দ্বারা রচিত এক সংবিধানের দাবি জোরদার হয়ে ওঠে । ১৯৩৫ সালে জাতীয় কংগ্রেস এই দাবি জানায় ।

ক্যাবিনেট মিশন 

১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের কার্যকরী সমিতির অধিবেশনে ভারতীয় জনগণের দ্বারা সংবিধান রচনার দাবি পুনরায় উত্থাপন করা হয় । এসবের ফলশ্রুতি স্বরূপ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ শাসকরা ১৯৪৬ সালের মার্চ মাসে ভারতে ক্যাবিনেট মিশন প্রেরণ করে । ক্যাবিনেট মিশন অবিভক্ত ভারতের সংবিধান রচনার জন্য একটি গণপরিষদ বা সংবিধানসভা গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করে । 

গণপরিষদের উদ্দেশ্য 

গণপরিষদের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করে নেহরু এই অভিমত প্রকাশ করেছিলেন যে , গণপরিষদের প্রধান কাজ হবে একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে ভারতকে স্বাধীন করা । বস্তুত , পাঁচটি মৌলিক স্বতঃসিদ্ধ বিষয়কে সামনে রেখে ভারতীয় গণপরিষদে সংবিধান রচনার কাজ হাতে নেওয়া হয় । সেগুলি হল—

[ 1 ] যুক্তরাষ্ট্ৰীয় ব্যবস্থা [ 2 ] ধর্ম নিরপেক্ষতা [ 3 ] গণতান্ত্রিক সমাজবাদ , [ 4 ] সংসদীয় শাসন  এবং [ 5 ] বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা বা পর্যালোচনা । 

অধিবেশন 

১৯৪৬ সালের ৯ ই ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৭ সালের ৩১ শে জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে গণপরিষদের চারটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । এই অধিবেশনগুলিতে গণপরিষদ ভারতের সংবিধান প্রণয়নে কয়েকটি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করে । 

খসড়া কমিটি 

১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট মধ্যরাতে গণপরিষদের এক বিশেষ অধিবেশন বসে । এই অধিবেশন ১৯৪৭ সালের ২৯ শে আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় । এই পঞ্চম অধিবেশনের সময় থেকে ভারতীয় গণপরিষদ একটি সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন পরিষদের মর্যাদা লাভ করে । এই অধিবেশনে বিভিন্ন কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বাধীন ভারতের খসড়া সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি খসড়া কমিটি গঠন করা হয় । বাবাসাহেব ড. বি. আর. আম্বেদকরকে এই কমিটির সভাপতি নিয়োগ করা হয় । 

সংবিধান রচনার উপাদান 

খসড়া কমিটি বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির ( গ্রেট ব্রিটেন , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , আয়ারল্যান্ড , কানাডা , অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি ) সংবিধান থেকে উৎকৃষ্ট উপাদান সংগ্রহ করে ভারতীয় সংবিধানকে সমৃদ্ধ করেছে । এ ছাড়া ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের কথাও এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য । 

রচনাকাল 

১৯৪৭ সালের ৪ ঠা নভেম্বর খসড়া সংবিধান রচনার কাজ শুরু হয় । পরিশেষে ১৯৪৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর গণপরিষদে ভারতের সংবিধান ৩৯৫ টি ধারা ও ৮ টি তপশিল সমেত গৃহীত হয় । ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের সংবিধান কার্যকর হয় ।

error: Content is protected !!