সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকার সীমাবদ্ধতা
Contents
সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকার সীমাবদ্ধতা
ভারতীয় সংবিধান রচনায় গঠিত গণপরিষদের গঠন ব্যবস্থা ও কার্যাবলি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমালোচিত হয়েছে । যেমন—
গণচরিত্রের ঘাটতি
গণপরিষদের সব থেকে বড়ো ত্রুটি ছিল এর গণচরিত্রের ঘাটতি । দামোদর স্বরূপ শেঠের মতে , যেহেতু প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে গণপরিষদ নির্বাচিত হয়নি তাই এতে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি । এই কারণে তিনি প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত নতুন একটি গণপরিষদ গঠনের দাবি জানান । তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে , জনগণের শতকরা মাত্র ১৪ ভাগকে নিয়ে পরোক্ষ নির্বাচনে গঠিত এই গণপরিষদ কখনও দেশের সমস্ত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না ।
উচ্চবিত্ত প্রতিনিধির সংখ্যাধিক্য
অনেকে মনে করেন , গণপরিষদে সমাজের উচ্চবিত্ত ও সামন্ততন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব সব থেকে বেশি ছিল । এর ফলে সাধারণ মানুষের চিন্তাধারা বা আশা আকাঙ্ক্ষা এখানে কোনো মর্যাদা পায়নি ।
গণভোটের অনুপস্থিতি
গণপরিষদ কর্তৃক রচিত সংবিধানটিকে যাচাই করার জন্য কোনো গণভোটের ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অনেকে একে জনগণের সংবিধান বলতে চান না ।
পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা
অধ্যাপক জোহারির অভিমত হল , গণপরিষদে সংবিধানের খসড়া আলোচনার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতা ছিল এর অন্যতম ত্রুটি সংশোধনী প্রস্তাব বাতিল করার পর্যাপ্ত ক্ষমতা সভাপতির থাকায় সাধারণ সদস্যদের মতামত এক্ষেত্রে গুরুত্ব পায়নি । সংবিধান রচনায় আইনবিদদের পূর্ণ কর্তৃত্ব গণপরিষদে এক ধরনের স্বৈরাচার সৃষ্টি করেছিল বলে অনেকে মনে করেন ।
কে. ভি. রাওয়ের মতে , খসড়া কমিটির সভাপতি ড. আম্বেদকর সদস্যদের অনেক সময় তাঁর ছাত্র হিসেবে গণ্য করতেন , সব বিষয়ে তিনিই ছিলেন শেষ কথা বলার অধিকারী । যদিও সংবিধান রচনার প্রকৃত ক্ষমতা ড. আম্বেদকর বা তাঁর খসড়া কমিটির ছিল না , ছিল নেহরু , প্যাটেল , রাজেন্দ্রপ্রসাদ এবং আবুল কালাম আজাদের হাতে ।
কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব
অনেকে সমালোচনা করেন , গণপরিষদে কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব বাস্তবে গণপরিষদকে কংগ্রেস পরিষদে রূপান্তরিত করেছিল ।
উপসংহার
তৎকালীন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে উপরিউক্ত সমালোচনা পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয় । সেই সময়ে দ্রুত এবং স্থায়ী একটি রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করাই ছিল প্রধান কাজ । তৎকালীন ভারতের অবিসংবাদী জননেতাদের নিয়ে গঠিত গণপরিষদে কংগ্রেসের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য ছিল একথা সত্যি । কিন্তু এর ফলে একদিকে যেমন সাম্প্রদায়িক ও বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তিগুলি সংবিধান রচনায় বাধা দিতে পারেনি , অন্যদিকে তেমনি মাত্র তিন বছর সময়কালের মধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম লিখিত সংবিধান রচনার পথ সুগম হয়েছিল ।