ভারতের সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা
Contents
ভারতের সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা
ভারতের সংবিধান প্রণয়নে গণপরিষদের ভূমিকা ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ।
প্রথম অধিবেশন
১৯৪৬ সালের ৯ ই থেকে ২৩ শে ডিসেম্বর গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসে । মুসলিম লিগের সদস্যরা এই অধিবেশনে যোগ দেননি । এই অধিবেশনে ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ গণপরিষদের প্রথম স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত হন । এই অধিবেশনে জওহরলাল নেহরু ভারতবর্ষকে স্বাধীন সার্বভৌম সাধারণতন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন ।
দ্বিতীয় অধিবেশন
গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন ১৯৪৭ সালের ২১ শে জানুয়ারি শুরু হয় এবং ২৬ শে জানুয়ারি পর্যন্ত তা স্থায়ী হয় । এই অধিবেশনে গণপরিষদের সহসভাপতি হিসেবে হরেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায়কে নির্বাচন করা হয় ।
তৃতীয় অধিবেশন
গণপরিষদের তৃতীয় অধিবেশন ১৯৪৭ সালের ২২ শে এপ্রিল থেকে ২ রা মে পর্যন্ত চলে । এই অধিবেশনে যে ক-টি কমিটি গঠিত হয় তার মধ্যে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ , সেগুলি হল— কেন্দ্রীয় সংবিধান সম্পর্কিত কমিটি এবং প্রাদেশিক সংবিধান সম্পর্কিত কমিটি ।
চতুর্থ অধিবেশন
১৯৪৭ সালের ১৪ ই থেকে ৩১ শে জুলাই পর্যন্ত গণপরিষদের চতুর্থ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় । এই অধিবেশনে নতুন ভারতের জাতীয় পতাকার পরিকল্পনা স্থির করা হয় । ইতিমধ্যে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভাইসরয় পদে যোগ দেওয়ার পর ভারত বিভাগ ও ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পূর্ণ হয় । ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট মধ্যরাতে গণপরিষদের একটি বিশেষ অধিবেশন বসে ।
পঞ্চম অধিবেশন
পঞ্চম অধিবেশনের সময় থেকে ভারতীয় গণপরিষদ স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন পরিষদের মর্যাদা অর্জন করে । পঞ্চম অধিবেশন থেকে গণপরিষদ সংবিধান রচনা ছাড়াও দেশের আইনসভা হিসেবে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । পঞ্চম অধিবেশন ১৯৪৭ সালের ১৪ ই থেকে ২৯ শে আগস্ট পর্যন্ত স্থায়ী হয় ।
এই অধিবেশনের শুরুতে মাউন্টব্যাটেনকে স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল এবং পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা হয় । এ ছাড়া কেন্দ্রীয় আইনসভা হিসেবে গণপরিষদের প্রথম অধ্যক্ষ নির্বাচিত হন জি. ভি. মভলংকর । একটি খসড়া সংবিধান প্রণয়নের জন্য এই অধিবেশনে খসড়া কমিটি গঠন করা হয় । ড. বি. আর. আম্বেদকর এই কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ।
কমিটির অন্যান্য সদস্য ছিলেন আল্লাদী কৃষ্ণস্বামী আয়ার , এন. গোপাল স্বামী আয়েঙ্গার , কে. এম. মুন্সি , সৈয়দ মহম্মদ শাহেদুল্লাহ , বি. এল. মিত্র এবং ডি. পি. খৈতান । পরে ডি. পি. খৈতান ও বি. এল. মিত্রর জায়গায় টি. টি. কৃষ্ণ ব্রক্ষ্মচারী ও এন. মাধবরাও নির্বাচিত হন ।
খসড়া কমিটি
খসড়া কমিটি ১৯৪৭ সালের ৪ ঠা নভেম্বর খসড়া সংবিধান রচনার কাজ আরম্ভ করে । পরিশেষে ১৯৪৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর গণপরিষদে ভারতের সংবিধান গৃহীত হয় । ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি গণপরিষদের সর্বশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের সংবিধান কার্যকর হয় ।