সুনাগরিকের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায়
Contents
সুনাগরিকের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায়
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে সেই রাষ্ট্র কীভাবে নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ করে তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলছে তার ওপর । সুতরাং , গণতন্ত্রের সাফল্যের স্বার্থে সুনাগরিকত্বের পথের অন্তরায়গুলি দূর করা প্রয়োজন । সুনাগরিকতার পথের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায়গুলিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে—
শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধান
কোনো কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন , শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের মাধ্যমে সুনাগরিক হওয়ার পথে কিছু কিছু প্রতিবন্ধকতা দূর করা যায় । কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হল
বাধ্যতামূলক ভোটদান :
লর্ড ব্রাইস সংবিধানে বাধ্যতামূলক ভোটদান ব্যবস্থা লিপিবদ্ধকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন । এই ব্যবস্থা গৃহীত হলে নাগরিকরা রাজনৈতিক কর্তব্য পালনের ব্যাপারে অবহেলা দেখাতে পারবে না । কারণ , এরূপ ক্ষেত্রে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয় ।
প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ :
অনেকে প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রবর্তনকে সুনাগরিকতার পথে প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করার শ্রেষ্ঠ উপায় বলে মনে করেন । এরুপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে 1. গণ ভোট , 2. গণ উদ্যোগ ও 3. পদচ্যুতি – বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় ।
সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব : অধ্যাপক ব্রাইসের মতে , নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটসংখ্যার সমানুপাতিক হারে আইনসভায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি প্রেরণের অধিকার থাকা বাঞ্ছনীয় । এরূপ ব্যবস্থা গৃহীত হলে সমাজের সংখ্যা গরিষ্ঠের মতোই সংখ্যা লঘিষ্ঠ অংশ রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ নিতে উৎসাহিত হবে ।
আইনি ব্যবস্থার প্রবর্তন :
সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি দূরীকরণ এবং অসামাজিক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য নানারকম আইনি ব্যবস্থা প্রবর্তনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ।
স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা :
লর্ড ব্রাইসের মতো কোনো কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠাকে সুনাগরিকতার পথে প্রতিবন্ধকতা দূর করার অন্যতম কার্যকরী উপায় বলে মনে করেন । তাঁদের মতে , স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রবর্তনে জনগণের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায় । জনগণ রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে ।
নৈতিক প্রতিবিধান
সুনাগরিকতার পথে প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করার জন্য শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের পাশাপাশি প্রয়োজন নাগরিকদের নৈতিক উৎকর্ষ সাধন । নাগরিকদের নৈতিক উৎকর্ষ সাধিত হলে তাদের রাজনৈতিক চেতনার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে এবং তারা দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে নিজেদের যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারবে । অবশ্য নৈতিক উৎকর্ষের জন্য যথার্থ শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ।
মার্কসবাদীদের অভিমত
মার্কসবাদীরা মনে করেন , শোষণ ভিত্তিক বুর্জোয়া সমাজ ব্যবস্থায় মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় বিশেষভাবে লক্ষ করা যায় । তাই সেখানে শুভবুদ্ধি ও উন্নত চারিত্রিক গুণসম্পন্ন নাগরিক গড়ে তোলার কাজ কোনো সরকারই সম্পাদন করতে পারে না ।
তাঁদের মতে , যতদিন পর্যন্ত নাগরিকদের অর্থনৈতিক জীবনে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত না হবে , ততদিন পর্যন্ত তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার সব প্রচেষ্টাই অলীক স্বপ্ন থেকে যাবে । তাই মার্কসীয় চিন্তাবিদরা সুনাগরিকত্বের প্রতিবন্ধকতা দুরীকরণে শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ।