প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে
Contents
প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে
যে শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সরাসরি এবং সক্রিয়ভাবে শাসনকার্য পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে তাকে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলে ।
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে গ্রিসের এথেন্সে পেরিক্লিসের নেতৃত্বে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে । প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের নীতি অনুসারে বছরে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নাগরিকরা একত্রিত হয়ে আইন প্রণয়ন , প্রশাসনিক নীতি নির্ধারণ , সরকারি আয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ , বিদেশ নীতি , যুদ্ধ ও শান্তি সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ , এমনকি বিচারের কাজকর্ম সম্পাদন করে থাকে । প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনগত সার্বভৌমত্ব এবং রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই ।
বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় এই শাসন ব্যবস্থা সুইজারল্যান্ডের কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্যান্টনে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি স্থানীয় সরকার পরিচালনায় প্রচলিত রয়েছে । আধুনিক বিশ্বে বৃহৎ জনগোষ্ঠী সংবলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র অবাস্তব হয়ে পড়েছে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে , রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডেভিড হেল্ড তাঁর Models of Democracy গ্রন্থে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রকে চিরায়ত বা ক্লাসিকাল গণতন্ত্র রূপে অভিহিত করেছেন ।
প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য গুলি হল—
গণভোট :
আইনসভার খসড়া বিলকে আইনে পরিণত করার আগে সম্মতি আদায়ের জন্য জনসাধারণের কাছে পেশ করার পদ্ধতিকে গণভোট বা গণনির্দেশ বলা হয় । এক্ষেত্রে জনসাধারণ সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভোটের মাধ্যমে আইন সভার খসড়া বিলকে সম্মতি দিলে তা আইনে পরিণত হয় , নতুবা তা বাতিল বলে গণ্য হয় ।
গণভোট সাধারণত দুরকমের হতে পারে , যেমন— বাধ্যতামূলক এবং ও ঐচ্ছিক গণভোট । যেক্ষেত্রে আইনসভায় গৃহীত আইনের খসড়া বিলকে জনসাধারণের সম্মতির জন্য পাঠানো হয় তাকে বাধ্যতামূলক গণভোট আখ্যা দেওয়া হয় ।
অন্যদিকে , যেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোটদাতাদের আবেদনে আইনসভার কোনো খসড়া বিলকে জনগণের সম্মতির জন্য গণভোটে পেশ করা হয় তাকে ঐচ্ছিক গণভোট বলে ।
গণ উদ্যোগ :
যেক্ষেত্রে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত আইনসভা কোনো বিষয়ে আইন প্রণয়নে অসমর্থ হয় , সেক্ষেত্রে জনগণ যদি নিজেরা উদ্যোগী হয়ে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা নেয় তাকে গণ উদ্যোগ বলা হয় । গণ উদ্যোগ সাধারণত দুরকম হতে পারে- ( 1 ) সুগঠিত এবং ( 2 ) অগঠিত ।
যেক্ষেত্রে ভোটদাতারা নিজেরাই কোনো আইনের সম্পূর্ণ খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে সেক্ষেত্রে তাকে সুগঠিত গণ উদ্যোগ নামে অভিহিত করা হয় । অন্যদিকে , যেক্ষেত্রে কোনো অসম্পূর্ণ খসড়া প্রস্তাবকে ভোটদাতারা সম্পূর্ণ করার জন্য আইনসভাকে অনুরোধ করে সেক্ষেত্রে তাকে অগঠিত গণ উদ্যোগ বলা হয় ।
গণ অভিমত :
স্ট্রং এর বক্তব্য অনুসারে , গণ অভিমত কথাটির অর্থ হল জনগণের আদেশ । প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণের মতামত গ্রহণকে গণ অভিমত বলা হয় । গণভোট এবং গণ অভিমতের মধ্যে পার্থক্য হল কোনো আইন সংক্রান্ত প্রস্তাবের ক্ষেত্রে গণভোট নেওয়া হয় , অন্যদিকে রাজনৈতিক দিক থেকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর জনগণের মতামত নেওয়ার জন্য গণ অভিমত গ্রহণ করা হয় ।
পদচ্যুতি :
গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের এক গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল পদচ্যুতি । এই পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচক মণ্ডলীর দ্বারা নির্বাচিত কোনো জনপ্রতিনিধিকে তার জনস্বার্থ বিরোধী কাজের জন্য নির্দিষ্ট কার্যকাল শেষ হওয়ার আগেই পদচ্যুত করা যেতে পারে ।
উপসংহার
পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে উপরিউক্ত যেসব প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লিখিত হল তা কিন্তু কয়েকটি শর্তের ওপর নির্ভর করে । এই শর্তগুলির মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রের আয়তন , রাজনৈতিক অভিজ্ঞতালব্ধ সচেতন ও শিক্ষিত জনসাধারণ , ক্ষুদ্র জনসমষ্টি ইত্যাদি ।