স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ
Contents
স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ
স্বাধীনতার আলোচনা করতে গিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এর বিভিন্ন রূপ নির্দেশ করেছেন । মোটামুটিভাবে স্বাধীনতার যে রূপগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য সেগুলি হল — স্বাভাবিক স্বাধীনতা , সামাজিক স্বাধীনতা , সম্প্রদায়গত স্বাধীনতা , নৈতিক স্বাধীনতা , জাতীয় স্বাধীনতা এবং আইন সংগত স্বাধীনতা ।
স্বাভাবিক স্বাধীনতা
সামাজিক চুক্তি মতবাদ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রুশো বলেছিলেন , মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন কিন্তু সর্বত্রই সে শৃঙ্খলে আবদ্ধ ( ‘ Man is born free , but everywhere he is in chains ‘ ) । রাষ্ট্র যখন সৃষ্টি হয়নি তখন যে স্বাধীনতা বিরাজ করত তা ছিল স্বাভাবিক স্বাধীনতা ।
সামাজিক স্বাধীনতা
সামাজিক রীতিনীতি , ঐতিহ্য , নৈতিকতার দ্বারা সংরক্ষিত স্বাধীনতাকে সামাজিক স্বাধীনতা বলা হয় । তবে সামাজিক স্বাধীনতার ধরন এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে পরিবর্তিত হয় । অনেক সময় সামাজিক স্বাধীনতা অমানবিক স্বাধীনতায় পর্যবসিত হয়েছে । যেমন — হিন্দু সমাজে এককালের সতীদাহ প্রথা , প্রাচীন গ্রিসের দাস প্রথা ইত্যাদি ।
সম্প্রদায়গত স্বাধীনতা
প্রাচীন গ্রিসের স্বাধীনতার ধারণাকে সম্প্রদায়গত স্বাধীনতা বলে আখ্যা দেওয়া হয় । গ্রিকরা ব্যক্তিগত জীবনের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তির আস্বাদ পেতে নিজেদের সম্প্রদায় দ্বারা নিজেরাই শাসিত হতে চাইতেন । অনেকে মনে করেন , এর থেকেই আধুনিককালের জাতীয় স্বাধীনতার ধারণা সৃষ্টি হয় ।
নৈতিক স্বাধীনতা
যে স্বাধীনতা ব্যক্তির নীতিবোধ ও নৈতিক চেতনার ওপর প্রতিষ্ঠিত তাকে নৈতিক স্বাধীনতা বলা হয় । আদর্শবাদী চিন্তাবিদরা নৈতিক স্বাধীনতার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন ।
জাতীয় স্বাধীনতা
কোনো পরাধীন দেশ যখন মুক্তি লাভ করে তখন তা জাতীয় স্বাধীনতার স্বাদ পায় । ব্যক্তি স্বাধীনতার মূল ভিত্তি হল জাতীয় স্বাধীনতা । ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ভারত জাতীয় স্বাধীনতা লাভ করে ।
আইন সংগত স্বাধীনতা
আধুনিক রাষ্ট্রে যে স্বাধীনতা নাগরিকরা ভোগ করেন তাকে আইন সংগত স্বাধীনতা বলা হয় । অর্থাৎ , এই ধরনের স্বাধীনতার পিছনে সংবিধান ও আইনের অনুমোদন থাকে । আইন সংগত স্বাধীনতার প্রকৃতি অপেক্ষাকৃত সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট ।
আইন সংগত স্বাধীনতার তিনটি প্রধান দিকের মধ্যে রয়েছে— ( i ) ব্যক্তিগত বা পৌর স্বাধীনতা ( Civil Liberty ) , ( ii ) রাজনৈতিক স্বাধীনতা ( Political Liberty ) ও ( iii ) অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ( Economic Liberty ) ।
ব্যক্তিগত বা পৌর স্বাধীনতা :
ব্ল্যাকস্টোনের মতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা , ব্যক্তিগত গতিবিধির স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির স্বাধীনতা হল ব্যক্তিগত বা পৌর স্বাধীনতার মুখ্য উপাদান । বস্তুতপক্ষে , যে স্বাধীনতা না থাকলে ব্যক্তিগত জীবনের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সম্ভব নয় তাকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বলা যায় ।
রাজনৈতিক স্বাধীনতা :
রাজনৈতিক স্বাধীনতা নাগরিকদের রাষ্ট্র পরিচালনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করে । সরকার গঠন এবং সরকারকে নিয়ন্ত্রণের কাজ করে রাজনৈতিক স্বাধীনতা । ল্যাস্কি রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে বুঝিয়েছেন ।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা :
হ্যারল্ড ল্যাস্কির মতে , অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলতে সেই স্বাধীনতাকে বোঝায় যা ব্যক্তির দৈনন্দিন খাদ্য সংস্থানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও সমসুযোগের সৃষ্টি করে । কর্মের অধিকার , বার্ধক্যে ও অক্ষম অবস্থায় আর্থিক নিরাপত্তা , সমস্ত রকম শোষণের হাত থেকে মুক্তি ইত্যাদি হল অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মূল উপাদান । বস্তুতপক্ষে , অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে ব্যক্তিগত বা পৌর স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় বলে আমাকে মনে করেন ।