ন্যায়বিচারের সংজ্ঞা ও অর্থ
ন্যায়বিচারের সংজ্ঞা ও অর্থ
রাষ্ট্রচিন্তার জগতে ন্যায়বিচার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন ধারণা । সুদূর অতীতে গ্রিসের সফিস্ট দার্শনিকদের চিন্তায় , স্টোয়িক দর্শনে , প্লেটো ও অ্যারিস্টটলের রচনায় এবং পরবর্তীকালে উদারনীতিবাদ , মার্কসবাদ ও নয়া উদারনীতিবাদে ন্যায়বিচার সম্পর্কিত ধারণার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ।
ন্যায়বিচারের সংজ্ঞা
অধ্যাপক বার্কারের মতে , লাতিন শব্দ ‘ Jus , ‘ Justus ‘ বা ‘ Justitia ‘ থেকে ‘ Justice ‘ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে । এই লাতিন শব্দের অর্থ হল যুক্ত করা বা সামঞ্জস্য রচনা করা । বার্কার এর মতে , মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সামঞ্জস্য রচনার কথা ভাবা হয় । ন্যায়বিচার সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধগুলির মধ্যেও সংযোগ বা সামঞ্জস্য বিধান করে । বার্কার ন্যায়বিচারকে একটি সমন্বয় সাধনকারী ধারণারূপে উল্লেখ করেছেন । তাঁর মতে , রাষ্ট্রের সহায়তায় মানব সম্পর্ককে সুবিন্যস্ত করার নীতি হল ন্যায়বিচার ।
ন্যায়বিচারের অর্থ
ন্যায়বিচারের অর্থ ও প্রকৃতি সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি । বস্তুত , ন্যায়বিচার একটি আপেক্ষিক নীতি । বিভিন্ন সমাজে ন্যায়বিচারের তত্ত্বকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে । ন্যায়বিচার সম্পর্কিত ধারণা সময় বা যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তিত হয়েছে ।
অতীতের ন্যায়বিচারের ধারণার সঙ্গে বর্তমান যুগের ন্যায়বিচারের ধারণার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না । এমনকি অতীতের ন্যায়বিচারের ধারণা বর্তমানে অমানবিক ধারণারূপে পরিগণিত হয়েছে । যেমন — প্রাচীন গ্রিসে ও রোমে একসময় ক্রীতদাস প্রথা সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল , এর সঙ্গে ন্যায়বিচারের কোনো বিরোধ ছিল না , কিন্তু আধুনিক সভ্য সমাজে এটি একটি জঘন্যতম মানবতা বিরোধী অপরাধ ।
আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে ন্যায়বিচার বলতে ব্যক্তির আচরণের সঙ্গে সমাজের সবার কল্যাণের সামঞ্জস্যবিধান করা বোঝায় । সামাজিক কল্যাণের সঙ্গে ব্যক্তির আচরণের সামঞ্জস্য বিধান হল ন্যায়বিচার । স্বাধীনতা , সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার সামাজিক , রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রসারিত হলে ন্যায়বিচার সার্থক হয় । মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে অর্থনৈতিক শোষণ ও বৈষম্য যুক্ত সমাজে ন্যায়বিচার থাকতে পারে না । একমাত্র সমাজতান্ত্রিক সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে ।