জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ
জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ
জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি
বার্নসের মতে , ইউরোপের নবজাগরণ ও সংস্কার আন্দোলনের সময়ে জাতীয়তাবাদের ধারণার উৎপত্তি ঘটে । প্রাচীন গ্রিসের অধিবাসীরা এবং পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের অধিবাসীরা জাতি হিসেবে কখনও নিজেদের কল্পনা করতে পারতেন না । দীর্ঘকাল ধরে এক বিশাল জনসমষ্টি পরস্পর একত্রে বসবাস করলেও তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটেনি ।
জাতীয়তাবাদের বিকাশ
জাতীয়তাবাদের ধারণা ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের কালে পূর্ণতা লাভ করে । বিস্তারের সময়ে ‘ জাতি ‘ শব্দটি যথেষ্ট গুরুত্ব অর্জন করে । ১৭৮৯ সালের ১ লা অক্টোবর ফরাসি সরকারের মৌলিক আদর্শ ঘোষণা করে বলা হয় , জাতি হল সমস্ত ক্ষমতার উৎস । ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী অধ্যায়ে জাতীয়তাবাদের আদর্শকে উজ্জ্বীবিত করার জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া হয় । তার মধ্যে ছিল-
( 1 ) জাতীয় সত্তার ওপর গুরুত্ব আরোপ ,
( 2 ) শ্রেণিগত বিশেষ সুযোগ সুবিধার অবসান ঘোষণা ,
( 3 ) চার্চকে ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা ,
( 5 ) জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের আদর্শ প্রবর্তন করা ,
( 6 ) জাতীয় উৎসবের আয়োজন করা প্রভৃতি ।
এই জাতীয়তাবাদের প্রভাবে জার্মানি , ইতালি , স্পেন ও রাশিয়ায় প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে ওঠে । জার্মানিতে ‘ জাতি ‘ শব্দটি একটি নতুন মাত্রা পায় । ১৮০৭ সালে দার্শনিক ফিকটে জাতির উদ্দেশে এক ঘোষণায় মানুষকে দেশপ্রেমের অগ্নিশিখায় উদ্দীপ্ত হয়ে হাসিমুখে জাতির জন্য আত্মবলিদানের আহ্বান জানান । এই সময় ম্যাৎসিনি জাতীয়তাবাদের আদর্শ প্রচার করে ইতালিকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন । এইভাবে ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্যসাধনের কাজে জাতীয়তাবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । জার্মানি ও ইতালির ঐক্য ও গ্রিসের স্বাধীনতা বস্তুতপক্ষে জাতীয়তাবাদেরই জয় ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এশিয়া ও আফ্রিকায় জাতীয়তাবাদ এক নতুন যাত্রাপথ রচনা করেছিল । সাম্রাজ্যবাদী শোষণের অবসান ঘটিয়ে এশিয়া , আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় ১০০ টির মতো স্বাধীন রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে । বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদ আজও এক দুর্বার আপসহীন সংগ্রামের অনুপ্রেরণা বিশেষ ।