ভারতকে কি একটি জাতি বলা যায়
ভারতকে কি একটি জাতি বলা যায়
ভারতকে একটি জাতি বলা যায় কি না — এ প্রশ্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে সহমত দেখা যায় না । বরং এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপিত হতে দেখা যায় । ভারতীয় জনগণের মধ্যে নানা বিষয়ে অনৈক্য বা বৈচিত্র্যকে জাতিত্ব অর্জনের পক্ষে অসুবিধাজনক বলে উল্লেখ করা হয় । সমজাতীয় ভাষা ও সংস্কৃতির কোনোটাই ভারতে নেই । বরং ভারত একটি বহু ভাষাভাষী ও মিশ্র সংস্কৃতির দেশ ।
এ বিষয়ে অবশ্য ভিন্ন মতও রয়েছে । বলা হয় , জাতি গঠনের ক্ষেত্রে ভাষা বা সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্য বাধা হতে পারে না । জাতি গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ঐতিহাসিক উপাদান ও রাজনৈতিক ঐক্যবোধ । একই ভৌগোলিক অঞ্চলে বসবাসকারী ঐক্যবদ্ধ জনসমষ্টি রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলে তা জাতিতে পরিণত হয় । এই মানদণ্ডে বিচার করলে ভারতকে নিঃসন্দেহে জাতি হিসেবে গণ্য করা যায় ।
সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বিভেদের মধ্যে ঐক্যের ( unity in diversity ) মূল সুরটির সন্ধান পাওয়া যায় । ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে শক্তিশালী জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে । স্বাধীন ভারতের সংবিধানেও বিভিন্ন সাংবিধানিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার সচেতন প্রয়াস লক্ষ করা যায় । ভারতে নানা বিষয়ে যে ব্যাপক বৈচিত্র্য রয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই । কিন্তু একই সঙ্গে ঐক্যের যে সুরটি ধ্বনিত হচ্ছে তাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় ।
কানাডা , সুইজারল্যান্ড কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো নানা ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতি সম্পন্ন দেশ যদি জাতি হিসেবে গণ্য হতে পারে তাহলে ভারত সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে না । সুতরাং , ভারতকে একটি জাতি হিসেবে গণ্য করাই সমীচীন ।