জাতি ও জাতীয় জনসমাজের মধ্যে পার্থক্য
জাতি ও জাতীয় জনসমাজের মধ্যে পার্থক্য
জাতি ( Nation ) ও জাতীয় জনসমাজকে ( Nationality ) অনেক সময় অভিন্ন মনে করা হয় । কিন্তু এই ধারণা ঠিক নয় । গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে জাতি ও জাতীয় জনসমাজের মধ্যে সূক্ষ্ম প্রকৃতিগত পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায় ।
জে. এইচ রোজ জাতীয় জনসমাজকে জনসমাজ ও জাতির মধ্যবর্তী পর্যায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । জনসমাজ থেকেই কালক্রমে জাতীয় জনসমাজের উদ্ভব হয় । একটি ঐক্যবদ্ধ জনসমাজ যখন অন্যান্য জনসমাজ থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বলে মনে করে তখনই তা জাতীয় জনসমাজে রূপান্তরিত হয় । এই ধরনের স্বাতন্ত্র্যবোধ সম্পন্ন ঐক্যবদ্ধ জনসমাজ যখন রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয় তখনই জাতীয় জনসমাজ গঠনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় । এই জাতীয় জনসমাজের মধ্যেই জাতিত্বের উপাদান নিহিত থাকে । কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত এই সুপ্ত সম্ভাবনা বাস্তব রূপ না পাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই জাতীয় জনসমাজ জাতি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে না ।
রাজনৈতিক চেতনা সম্পন্ন জাতীয় জনসমাজ যখন বাইরের শাসন থেকে মুক্ত হয়ে বা মুক্তি পেতে সচেষ্ট হয়ে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের জন্য জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয় তখনই তা জাতি হয়ে ওঠে । জাতি হল জাতীয় জনসমাজের রাজনৈতিক রূপ । লর্ড ব্রাইস বহিঃশাসন থেকে মুক্ত বা মুক্তিকামী জাতীয় জনসমাজকে জাতি আখ্যা দিয়েছেন ।
আবার হায়েসের বক্তব্য হল , জাতীয় জনসমাজ যখন ঐক্য ও সার্বভৌম শক্তি অর্জন করে তখনই তা জাতিতে রূপান্তরিত হয় । অর্থাৎ , স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের ক্ষমতাই জাতিকে জাতীয় জনসমাজ থেকে পৃথক করে । জাতি সম্পর্কিত ধারণা সামাজিক , রাজনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক ।
সুতরাং , যথার্থ বিশ্লেষণে দেখা যায় রাজনৈতিক চেতনার দিক থেকে পার্থক্যই জাতীয় জনসমাজ ও জাতিকে আলাদা করে , অন্যান্য দিক থেকে তাদের মধ্যে মৌল কোনো পার্থক্য নেই ।