বৃত্ত কাকে বলে
বৃত্ত কাকে বলে
একটি সমতলে অবস্থিত যে বদ্ধ বক্ররেখা অন্তস্থ একটি বিন্দু থেকে সর্বদা সমান দূরত্বে অবস্থান করে , সেই বদ্ধ বক্ররেখাকে বলে বৃত্ত ।

চিত্রে ABC একটি সমতলস্থ বদ্ধ বক্ররেখা , যা অন্তস্থ একটি বিন্দু O থেকে সর্বদা সমান OA দূরত্বে অবস্থান করে । সুতরাং , সমতলস্থ বদ্ধ বক্ররেখাটি একটি বৃত্ত ।
বৃত্তের বিভিন্ন অংশ

কেন্দ্র : অন্তস্থ যে নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে বৃত্ত সমান দূরত্বে অবস্থান করে , সেই বিন্দুকে বলে কেন্দ্র ( Centre ) । চিত্রে— O বিন্দু ।
পরিধি : যে বদ্ধ বক্ররেখা দ্বারা বৃত্ত গঠিত হয় , তার দৈর্ঘ্যে পরিমাপকে পরিধি ( Circumference ) বলে । চিত্রে— APQBE ।
ব্যাসার্ধ : বৃত্তের কেন্দ্র থেকে বৃত্তের ওপর যে কোনো বিন্দুর সংযোজক রেখাংশকে বলে ব্যাসার্ধ ( Radius ) । চিত্রে— OC , OA , OB ।
ব্যাস : বৃত্তের কেন্দ্রগামী যে রেখাংশ বৃত্তের ওপর অবস্থিত যে কোনো দুটি বিন্দু পর্যন্ত বিস্তৃত , তাকে ব্যাস ( Diameter ) বলে । চিত্রে— AB ।
চিত্র থেকে পাই , AB = OA + OB = 2OA
∴ ব্যাস = 2 × ব্যাসার্ধ
অর্থাৎ , বৃত্তের ব্যাস হল ব্যাসার্ধের দ্বিগুণ ।
জ্যা : বৃত্তের ওপর অবস্থিত যে কোনো দুটি বিন্দুর সংযোজক রেখাংশকে জ্যা ( Chord ) বলা হয় । চিত্রে – AB , EF ।
* উল্লেখ্য : বৃত্তের ব্যাস হল বৃহত্তম জ্যা । আবার এও বলা যায় — ব্যাস হল কেন্দ্রগামী জ্যা ।
অর্থাৎ , প্রত্যেক ব্যাস হল জ্যা , কিন্তু সকল জ্যা ব্যাস নয় ।
বৃত্তচাপ : বৃত্তের যে কোনো অংশকে বৃত্তচাপ ( Arc ) বলে । চিত্রে— PRQ , PFQ , CBF
বৃত্তচাপ দুই প্রকার । যথা – ( a ) অধিচাপ ( Major Arc ) ও ( b ) উপচাপ ( Minor Arc ) ।
( a ) অধিচাপ : যে বৃত্তচাপের মধ্যে কেন্দ্র অবস্থিত সেই চাপকে বলা হয় অধিচাপ । চিত্রে – PFQ
কারণ , PQ যোগ করলে PFQ অংশের মধ্যে কেন্দ্র O অবস্থিত ।
( b ) উপচাপ : যে বৃত্তচাপের মধ্যে কেন্দ্র অবস্থান করে না , তাকে উপচাপ বলা হয় । চিত্রে – PRQ
কারণ , PQ যোগ করলে PRQ অংশের মধ্যে কেন্দ্র O অবস্থিত নয় ।
অর্ধবৃত্ত : যে বৃত্তচাপের দুই প্রান্ত সংযোজক রেখাংশ একটি ব্যাস , তাকে অর্ধবৃত্ত ( Semi circle ) বলে । চিত্রে — AQB , AEB .
বৃত্তাংশ : বৃত্তের ওপর যে কোনো দুটি বিন্দু দ্বারা গঠিত বৃত্তচাপ ও জ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ সামতলিক বৃত্তাকার ক্ষেত্রের অংশকে বৃত্তাংশ ( Segment of circle ) বলে ।

চিত্রে— PQR ও PQS হল বৃত্তাংশ ।
বৃত্তাংশ দুই প্রকার । যথা— ( a ) মুখ্য বৃত্তাংশ ( Major Segment ) এবং ( b ) গৌণ বৃত্তাংশ ( Minor Segment ) ।
( a ) মুখ্য বৃত্তাংশ : যে বৃত্তাংশে কেন্দ্র অবস্থিত তাকে মুখ্য বৃত্তাংশ বলে । চিত্রে— PQS
অর্থাৎ , অধিচাপ ও জ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ বৃত্তাকার ক্ষেত্রের অংশই হল মুখ্য বৃত্তাংশ ।
( b ) গৌণ বৃত্তাংশ : যে বৃত্তাংশে কেন্দ্র অবস্থিত নয় , সেই অংশকে গৌণ বৃত্তাংশ বলে । চিত্রে- PQR
অর্থাৎ , উপচাপ ও জ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ বৃত্তাকার ক্ষেত্রের অংশই হল গৌণ বৃত্তাংশ ।
বৃত্তকলা : একটি বৃত্তের দুটি ব্যাসার্ধ ও বৃত্ত চাপ দ্বারা সীমাবদ্ধ অংশকে বৃত্তকলা ( Sector ) বলে । চিত্রে— OPRQ ও OPSQ হল দুটি বৃত্তকলা । অর্থাৎ , দুটি নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধ দ্বারা দুটি বৃত্তকলা গঠিত হয় । একটিকে বলে গৌণ কলা ( Minor Sector ) এবং অন্যটিকে বলে মুখ্য কলা ( Major Sector ) ।

মুখ্য কলা : যে বৃত্তচাপের অংশে কেন্দ্র অবস্থান করে , সেই অংশ দ্বারা সীমাবদ্ধ কলাকে বলে মুখ্য কলা । চিত্রে— OPSQ
গৌণ কলা : যে বৃত্তচাপের অংশে কেন্দ্র অবস্থান করে না , সেই অংশ দ্বারা সীমাবদ্ধ কলাকে বলে গৌণ কলা । চিত্রে— OPRQ
বৃত্তের বৈশিষ্ট্য
( i ) বৃত্তের যে কোনো ব্যাসের দৈর্ঘ্য সমান ।
( ii ) বৃত্তের প্রতিটি ব্যাসার্ধের দৈর্ঘ্য সমান ।
( iii ) একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধের দৈর্ঘ্য বৃত্তের ব্যাসের দৈর্ঘ্যের অর্ধেক ।
( iv ) যে কোনো দুটি ব্যাস পরস্পর কেন্দ্রে ছেদ করে ।
( v ) একই ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট দুটি বৃত্ত সর্বদা সর্বসম ।
( vi ) অধিচাপ + উপচাপ = বৃত্তের পরিধি ।
( vii ) মুখ্য বৃত্তাংশ + গৌণ বৃত্তাংশ = বৃত্তাকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ।
( viii ) মুখ্য বৃত্তকলা + গৌণ বৃত্তকলা = বৃত্তাকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ।
( ix ) অর্ধ বৃত্তাকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল =½ × সমগ্র বৃত্তাকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ।
( x ) পরিধির ওপর যে কোনো বিন্দুর সাথে যে কোনো ব্যাসের ( ওই বিন্দুগামী ছাড়া ) দুই প্রান্ত যোগ করলে যে কোণ উৎপন্ন হয় তার মান 90° । এই কোণকে অর্ধবৃত্তস্থ কোণ বলে ।
[ বৃত্তের বিভিন্ন অংশ চিত্রে ∠ADB , হল একটি অর্ধবৃত্তস্থ কোণ । এই কোণটির মান 90° ]