ভারতের পেট্রো রাসায়নিক শিল্প
ভারতের পেট্রো রাসায়নিক শিল্প
লোহা-ইস্পাত , কার্পাস বয়ন , পাট , চিনি , কাগজ প্রভৃতি শিল্পের তুলনায় ভারতের পেট্রো রাসায়নিক শিল্পকে অপেক্ষাকৃত ‘ আধুনিক শিল্প ’ বলা যায় । উন্নত দেশগুলিতে বহুদিন আগেই পেট্রো রাসায়নিক শিল্পের বিকাশ ঘটলেও আমাদের দেশে এই শিল্পের সূচনা হয় ৬০ এর দশকে ।
ভারতে প্রথম পেট্রো রাসায়নিক কারখানা স্থাপিত হয় ১৯৬৬ সালে মহারাষ্ট্রের ট্রম্বেতে ( মুম্বাই এর অনতিদূরে ) । ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিঃ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে এই কারখানাটি গড়ে ওঠে । এর পর ১৯৬৮ সালে ‘ ন্যাশনাল অর্গানিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ ‘ নামে আর একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে মহারাষ্ট্রের থানে নামে একটি জায়গায় ভারতের দ্বিতীয় পেট্রো রাসায়নিক কারখানাটি স্থাপিত হয় ।
পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৯ সালে ভারত সরকারের সংস্থা ‘ ইন্ডিয়ান পেট্রো কেমিক্যালস করপোরেশন ‘ এর অধীনে গুজরাতের ভাদোদরার ( বরোদা ) কাছে জওহরনগরে তৃতীয় কারখানাটি গড়ে ওঠে । তারপর সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব পেট্রো রাসায়নিক কারখানা স্থাপিত হয়েছে , তাদের মধ্যে অসমের বঙ্গাইগাঁও , তামিলনাড়ুর চেন্নাই , উত্তরপ্রদেশের আউরাইয়া ( Auraiya ) , গুজরাতের কয়ালি , হাজিরা , জামনগর , গান্ধার এবং নলধারী , পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া , পাঞ্জাবের লুধিয়ানার কাছে পায়াল ( Payal ) , কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
এইসব বিভিন্ন পেট্রো রাসায়নিক কারখানার মধ্যে হলদিয়ার কারখানাটি হলদিয়া শোধনাগারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে । এটি পশ্চিমবঙ্গ তথা পূর্ব ভারতের বৃহত্তম পেট্রো রাসায়নিক কারখানা । যেসব অনুকূল অবস্থার জন্য হলদিয়ায় এই কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে , সেগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য—
( ১ ) হলদিয়া শোধনাগার থেকে কাঁচামাল পাওয়ার সুবিধা এবং
( ২ ) হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি ও উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানির সুযোগ ।
এছাড়াও ( ৩ ) সরকারি সাহায্য , ( ৪ ) বেসরকারি বিনিয়োগ , ( ৫ ) সহজলভ্য ও সুলভ জমি , ( ৬ ) পর্যাপ্ত সংখ্যায় সুলভ শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা প্রভৃতি হলদিয়ায় কারখানাটি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে ।
বিগত কয়েক বছরে দেশে অনেকগুলি পেট্রো রাসায়নিক কারখানা গড়ে ওঠার ফলে পেট্রো রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহারও দ্রুত বেড়ে চলেছে । ১৯৯৭-৯৮ সালে ভারতে যেখানে পলিমার , কৃত্রিম তত্ত্ব , ইলাসটোমার ( Ilastomers ) প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ পেট্রো রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৫.৫৭ লক্ষ টন , ২০০৩-০৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭১৯১ লক্ষ টন ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে , একসময়ে আমাদের দেশে পেট্রো রাসায়নিক দ্রব্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হত । অথচ এখন ভারত থেকে পলিমার , কৃত্রিম তন্তু প্রভৃতি পেট্রো রাসায়নিক দ্রব্য যথেষ্ট পরিমাণে বিদেশে রপ্তানি করা হয় ।