ভৌমজল কাকে বলে
Contents
ভৌমজল কাকে বলে
ভৌমজল শব্দের অর্থ ‘ ভূগর্ভস্থ জল ’ । বৃষ্টিপাতের পর সেই জল যখন মৃত্তিকার স্তর ভেদ করে ভূগর্ভে সঞ্চিত হয় , তখন তাকে ভৌমজল বলে ।
ভৌম জলের ব্যবহার
পশ্চিমবঙ্গে নদনদী , খাল , কূপ প্রভৃতি ভূপৃষ্ঠস্থ জলের বহুমুখী ব্যবহারগুলি হল—
কৃষিকাজে :
পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্যতম কৃষি প্রধান রাজ্য । শুষ্ক মরশুমে এই রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষিকাজের জন্য নদীর জল ব্যবহার করা হয় । যেমন শীতকালে হুগলি , পূর্ব বর্ধমান প্রভৃতি জেলায় দামোদরের জলে ব্যাপকভাবে বোরো ধানের চাষ হয় ।
পরিবহণের কাজে :
ভাগীরথী-হুগলি সহ রাজ্যের বহু নদনদী ও কিছু কিছু খাল জলপথ হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।
পানীয় ও দৈনন্দিন কাজে :
নদীর জল পরিশোধন করে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা হয় । এ ছাড়া নদী , পুকুর , কূপ প্রভৃতির জল রান্না করা , কাপড় কাচা , স্নান করা সহ ঘর-গৃহস্থালির নানা কাজে ব্যবহৃত হয় ।
শিল্প ক্ষেত্রে :
নদনদী ও খালের জল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় শিল্প ক্ষেত্রে । যেমন হুগলি শিল্পাঞ্চলের অগণিত কলকারখানায় হুগলি নদীর জল ব্যবহার করা হয় ।
বনসৃজনে :
পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক বনসৃজন ও কৃষি বনসৃজনে বিপুল পরিমাণে ভূপৃষ্ঠস্থ জল ব্যবহার করা হয় ।
ভৌমজলের উত্তোলনের প্রভাব
ভূপৃষ্ঠস্থ জলের অতিরিক্ত ব্যবহারের কুফলগুলি হল—
জলাশয়ে জলের পরিমাণ হ্রাস ও জল সংকট :
জলসেচ , গৃহস্থালি , কলকারখানা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠস্থ জল অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যবহারের কারণে জলাশয়গুলিতে জলের পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে এবং তার ফলে শুখা মরশুমে জল সংকট দেখা দেয় ।
জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদের ক্ষতি :
ভূপৃষ্ঠস্থ জল অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে জলাশয়গুলি ক্রমশ শুকিয়ে যেতে থাকে বলে একদিকে যেমন বিভিন্ন প্রকার জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পদের পরিমাণ হ্রাস পায় , অন্যদিকে তেমন সামগ্রিকভাবে বাস্তুতন্ত্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
জীবিকার সংকট :
মৎস্য শিকার সহ বিভিন্ন প্রকার জলাশয় নির্ভর জীবিকায় গভীর সংকটের সৃষ্টি হয় ।
জল দূষণ বৃদ্ধি :
অধিক সংখ্যায় মানুষ জলাশয়গুলির অল্প জলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায় বলে , অতিব্যবহারের কারণে সেই জলের ক্রমশই দূষণ বৃদ্ধি ঘটতে থাকে এবং একসময় তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায় ।
ভৌমজল ভাণ্ডারের ক্ষতি :
অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ভূপৃষ্ঠস্থ জলের ক্রমশ হ্রাসমানতা ও দূষণ বৃদ্ধির জন্য ঠিকঠাক রিচার্জ হয় না । বলে ভৌমজল স্তর ক্রমশ নামতে থাকে এবং তাও দূষিত হয়ে পড়ে ।
আর্সেনিকের পরিমাণ বৃদ্ধি :
প্রচুর পরিমাণে ভৌমজল তোলার জন্য জলে আর্সেনিক দূষণের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে । আর ওই সব অঞ্চলে এই দূষিত জল ব্যবহার করে মানুষ ও জীবজন্তুর দেহে নানা ধরনের চর্মরোগ , ক্যানসার প্রভৃতির প্রকোপ ও আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েছে ।
মাটির লবণতা বৃদ্ধি :
ভৌমজলের সঙ্গে শিলাস্তরের বিভিন্ন প্রকার লবণ মিশে থাকে । বর্তমানে ওই জল বেশি পরিমাণে ব্যবহারের ফলে জমির লবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
ভূমির অবনমনের সম্ভাবনা :
অতিরিক্ত ভৌমজল উত্তোলন করলে ভূমির অবনমনের সম্ভাবনা বেড়ে যায় । যেমন — অতিরিক্ত ভৌমজল উত্তোলনের ফলে কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ভবিষ্যতে ভূমির অবনমন ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে ।
ভৌমজল তলের উচ্চতা হ্রাস :
অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভৌমজল তুলে নেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ অঞ্চলে ভৌমজল স্তরের উচ্চতা হ্রাস পেয়েছে ।