জীবন বিজ্ঞান

মানুষের শ্বাসতন্ত্র

Contents

মানুষের শ্বাসতন্ত্র

মানুষের শ্বাসঅঙ্গগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন — মুখ্য শ্বাসযন্ত্র এবং গৌণ শ্বাসযন্ত্র ।

Screenshot ২০২২০৫০৩ ২০২৮৫৫1

মুখ্য শ্বাসযন্ত্র ( Major respiratory organs )

মানুষের মুখ্য শ্বাসযন্ত্র যথাক্রমে একজোড়া ফুসফুস , একজোড়া ব্রঙ্কাস , একটি ট্রাকিয়া , ল্যারিংক্স , গ্লটিস , নাসাপথ , অন্তঃ নাসারন্ধ্র ও বহিঃনাসারন্ধ্র নিয়ে গঠিত । 

ফুসফুস ( Lungs ) : 

মানুষের ফুসফুস দুটি বক্ষ গহ্বরের মধ্যে মধ্যচ্ছদার উপরে হৃৎপিণ্ডের দুপাশে অবস্থিত । ফুসফুস দুটি ত্রিকোণাকার বা শাঙ্কবাকার । স্পঞ্জের মতে গোলাপি রঙের ফুসফুস দুটির মধ্যে ডান দিকেরটি তিনটি লতি যুক্ত ( trilobed ) এবং বাম দিকেরটি দুটি লতিযুক্ত ( bilobed ) । ডান ফুসফুস বাম ফুসফুস অপেক্ষা কিছুটা বড়ো ।

প্লুরা ( plura ) নামক দ্বি-স্তর বিশিষ্ট আবরণ দ্বারা ফুসফুস আবৃত । এর বাইরের স্তরটিকে ভিসারাল প্লুরা স্তর এবং ভেতরের স্তরটিকে প্যারাইটাল প্লুরা স্তর বলে । স্তর দুটির মধ্যবর্তী স্থানকে অন্তঃপ্লুরা অঞ্চল বলে । অন্তঃপ্লুরা অঞ্চলে অবস্থিত তরল শ্বসনের সময় বক্ষ ও ফুসফুসের ঘর্ষণ নিবারণ করে ।

প্রতিটি ফুসফুসে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুথলি ( alveoli ) ( প্রায় সাড়ে ত্রিশ কোটি ) বর্তমান । ফুসফুসীয় ধমনি ও ফুসফুসীয় শিরা এবং তাদের শাখা প্রশাখ অসংখ্য রক্তজালকে পরিণত হয়ে বায়ুথলিগুলিকে পরিবৃত করে রাখে । ফলে বায়ুথলিতে শ্বাসবায়ুর আদান প্রদান ঘটে ।

ব্রঙ্কাস ( Bronchus ) : 

ফুসফুসের সঙ্গে যুক্ত ট্রাকিয়ার প্রধান দুটি শাখাকে ব্রঙ্কাই ( bronchi , একবচন ব্রঙ্কাস ) বা ক্লোমশাখা বলে । প্রতিটি ব্রঙ্কাস ফুসফুসে প্রবেশ করে শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে ব্রঙ্কিওল বা উপক্লোমশাখা ( bronchiole ) এবং শ্বসনউপক্লোমশাখা ( respiratory bronchiole ) গঠন করে । ব্রঙ্কিওলের শেষভাগ স্ফীত এবং রক্তজালকে পরিবৃত হয়ে বায়ুথলি বা অ্যালভিওলাই ( alveoli ) গঠন করে শ্বাসবায়ুর ( O2 এবং CO2 ) আদান প্রদানে অংশ নেয় ।

ট্রাকিয়া ( Trachea ) : 

ফুসফুসের বাইরে ব্রঙ্কাস দুটি মিলিত হয়ে যে নালি গঠন করে , তাকে ট্রাকিয়া ( Trachea ) বলে । এটি 10–12 সেন্টিমিটার দীর্ঘ এবং 1.5–2 সেন্টিমিটার ব্যাস যুক্ত একটি স্থিতিস্থাপক নল বিশেষ । প্রায় 20 টি ‘ U ‘ আকৃতি অসমাপ্ত তরুণাস্থি দ্বারা গঠিত অঙ্গুরি থাকায় বায়ু প্রবেশের সময় ট্রাকিয়া চুপসে যায় না । 

ল্যারিংক্স ( Larynx ) : 

ট্রাকিয়ার অগ্রভাগে অবস্থিত ছোটো ( 44mm দীর্ঘ এবং 43 mm ব্যাস বিশিষ্ট ) নালিটিকে ল্যারিংক্স বা স্বরযন্ত্র বলে । এটি তিনখণ্ড তরুণাস্থি দ্বারা গঠিত ত্রিভুজাকার অঙ্গ বিশেষ । স্বরযন্ত্রের মধ্যে অবস্থিত দুটি ভোকাল কর্ড ( vocal cord ) স্বর সৃষ্টি করে । 

গ্লটিস ( Glottis ) : 

ল্যারিংক্সটি গলবিল অঞ্চলে একটি ছিদ্রের মাধ্যমে উন্মুক্ত থাকে ছিদ্রটিকে গ্লটিস বা শ্বাসছিদ্র বলে । গ্লটিসটির উপর তরুণাস্থি দ্বারা নির্মিত একটি ঢাকনা বা এপিগ্লটিস ( epiglottis ) থাকে , যা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের সময় শ্বাসছিদ্রকে বন্ধ করে দেয় । 

গলবিল ( Pharynx ) :

অন্তঃনাসারন্ধ্র এবং শ্বাসছিদ্রের মধ্যবর্তী ছোটো অংশটিকে গলবিল বলে । গলবিলের উপর একটি ছোটো মাংসপিণ্ড আলজিহ্বা ( Uvula ) অবস্থিত , যা খাদ্য গ্রহণের সময় অন্তঃনাসারন্ধ্র দুটিকে ঢেকে দেয় ।

নাসারন্ধ্ৰ ( Nostrils ) : 

নাসিকা একজোড়া বহিঃনাসারন্ধ্র ( external nostrils ) ছিদ্রপথে বাইরে উন্মুক্ত । নাসারন্ধ্র দুটি একটি নাসিকা পাত ( nasal septum ) দিয়ে পরস্পর থেকে পৃথক । বহিঃনাসারন্ধ্র দুটি নাসাপথের মাধ্যমে মুখবিবরের ছাদে অবস্থিত দুটি অন্তঃ নাসারন্ধ্রের ( internal nostrils ) দ্বারা গলবিল অঞ্চলে উন্মুক্ত । অন্তঃনাসারন্ধ্রের অগ্রভাগে আলজিহ্বা ( Uvula ) থাকে । মুখবিবর এবং গলবিল অন্তঃনাসারন্ধ্র ও গ্লটিসের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে । 

গৌণ শ্বাস যন্ত্র ( Minor respiratory organs ) 

মানুষের গৌণ শ্বাসযন্ত্র বক্ষপিঞ্জর এবং শ্বসনে সাহায্যকারী পেশি সমূহ নিয়ে গঠিত । 

বক্ষপিঞ্জর বা থোরাসিক কেজ ( Thoracic cage ) : 

বক্ষপিঞ্জর বক্ষগহ্বরের সম্মুখে অবস্থিত একটি ঊরঃফলক ( Sternum ) এবং দুপাশে অবস্থিত বারো জোড়াপাঁজর অস্থি ( ribs ) দিয়ে গঠিত একটি খাঁচা বিশেষ । শ্বাস গ্রহণের সময় এই বক্ষপিঞ্জর প্রসারিত হয় ।

শ্বাস পেশি ( Respiratory muscles ) : 

পঞ্জর অস্থি মধ্যস্থ পেশি এবং মধ্যচ্ছদ বা ডায়াফ্রাম ( diaphragm ) শ্বাসকার্যে সহায়তা করে । মধ্যচ্ছদা বক্ষগহ্বর এবং উদর গহ্বরের মাঝে অবস্থিত কিছুটা উত্তল মাংসল পর্দা বিশেষ , যার মাঝখানে একটি ছিদ্র দিয়ে গ্রাসনালি এবং মহাধমনি ও নিম্নমহাশিরা উদর গহ্বরে প্রবেশ করেছে । শ্বাস গ্রহণের সময় মধ্যচ্ছদ পেশি নিচের দিকে সংকুচিত হয়ে এবং পঞ্জর মধ্যস্থ পেশি সংকুচিত হয়ে পঞ্জরগুলিকে পরস্পর থেকে বাইরের দিকে এবং উপরের দিকে সরিয়ে দিয়ে বক্ষগহ্বরকে প্রসারিত করে ফুসফুসে বাতাস ঢুকতে সাহায্য করে ।

আরো পড়ুন : রুই মাছের অভিযোজন

প্রাণীর রেচনে ত্বকের ফুসফুস ও যকৃতের ভূমিকা

error: Content is protected !!