শ্বসনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য
শ্বসনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য
জীবদেহে শ্বসনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য অপরিসীম । এখানে জীবদেহে শ্বসনের প্রধান দুটি তাৎপর্য সংক্ষেপে আলোচনা করা হল —
শক্তির মুক্তি
সৌরশক্তি সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ হয় । এই স্থৈতিক শক্তি শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাপ ও গতীয় শক্তিতে রূপান্তরিত ও মুক্ত হয়ে জীবদেহের নানাবিধ শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করে । যেমন—
( i ) শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত এই শক্তি জীবের পুষ্টি , বৃদ্ধি , রেচন , চলন , গমন প্রভৃতি বিবিধ বিপাকীয় এবং শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে ।
( ii ) শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপশক্তি পক্ষী ও স্তন্যপায়ী শ্রেণির প্রাণীদের রক্ত উয় রাখতে সাহায্য করে । এছাড়া রক্তের অম্লত্ব , ক্ষারত্ব বজায় রাখতেও এই শক্তির প্রয়োজন ।
( iii ) কোশের আয়তন বৃদ্ধি এবং বিভাজনও এই শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।
( iv ) জোনাকি এবং কোনো কোনো সামুদ্রিক প্রাণীর শরীর থেকে যে আলো বিকীর্ণ হয় তা শ্বসন প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন শক্তির আলোকশক্তিতে রূপান্তর ।
( v ) ইলেকট্রিক রে নামক মাছের দেহে উৎপন্ন বিদ্যুৎ শ্বসনের ফলে উৎপন্ন শক্তির বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তর ।
পরিবেশে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের সমতা রক্ষা
সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য ক্লোরোফিল যুক্ত সজীব কোশ পরিবেশ থেকে CO2 ( কার্বন ডাইঅক্সাইড ) গ্রহণ করে এবং এই প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন সমপরিমাণ অক্সিজেন ( O2 ) পরিবেশে ত্যাগ করে । এর ফলে পরিবেশে CO2 এর পরিমাণ কমে যাওয়া এবং O2 এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া উচিত ।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হয় না । কারণ শ্বসন প্রক্রিয়ার জন্য জীব পরিবেশ থেকে O2 গ্রহণ করে এবং বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন CO2 ত্যাগ করে । সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য সবুজ উদ্ভিদগোষ্ঠী যে পরিমাণ CO2 গ্রহণ করে এবং O2 পরিত্যাগ করে শ্বসন প্রক্রিয়ার জন্য জীবগোষ্ঠী প্রায় সমপরিমাণ O2 গ্রহণ করে এবং CO2 ত্যাগ করে ফলে সালোকসংশ্লেষ এবং শ্বসন এই দুটি বিপরীত প্রকৃতির বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশে O2 এবং CO2 গ্যাসের ভারসাম্য রক্ষিত হয় ।
আরো পড়ুন : সালোকসংশ্লেষ কাকে বলে