বিসমার্কের পররাষ্ট্র নীতি

Contents

বিসমার্কের পররাষ্ট্র নীতি

বিসমার্ক তাঁর ‘ রক্ত ও লৌহ ‘ ( Blood and Iron ) নীতি দ্বারা পরপর তিনটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে ডেনমার্ক ( ১৮৬৪ খ্রীঃ ) , অস্ট্রিয়া ( ১৮৬৬ খ্রীঃ ) ও ফ্রান্সকে ( ১৮৭০ খ্রীঃ ) পরাজিত করে জার্মানীকে ঐক্যবদ্ধ করেন । তার পরেও দীর্ঘ দু’দশক তিনি জার্মানীর চ্যান্সেলার পদে অধিষ্ঠিত থেকে নবগঠিত জার্মানীর ভিত্তি সুদৃঢ় করেন । এই সময় একটি আন্তরিক অভ্যন্তরীণ নীতির পাশাপাশি একটি সুচিন্তিত পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে তিনি জার্মানীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করেন ; এবং জার্মানীকে ইউরোপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শক্তিতে পরিণত করেন । 

বাস্তববাদী নীতি 

প্রকৃতপক্ষে ছয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে পদত্যাগ করা ( ১৮৯০ খ্রীঃ ) পর্যন্ত বিসমার্কই ছিলেন ইউরোপীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু । কিন্তু অনাবশ্যক আত্মম্ভরিতা কখনোই তাঁর বিচার বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করেনি । তিনি ছিলেন অসাধারণ বিচক্ষণ এবং সূক্ষ্ম দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কূটনীতিবিদ । 

তাই জার্মানীকে ঐক্যবদ্ধ করবার জন্য তিনি যে ধরনের আগ্রাসী ( Aggressive ) বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেছিলেন , ঐক্য সম্পন্ন করেই ঠিক তার বিপরীত নীতি অনুসরণে ব্রতী হন । শক্তির তুঙ্গে থেকেও তিনি যেভাবে শান্তির নীতি গ্রহণ করতে শুরু করেন , তা অনবদ্য ও অভূতপূর্ব । তিনি অনুভব করেছিলেন যে , অস্ট্রিয়া ও জার্মানীকে বিধস্ত করে জার্মানীকে ঐক্যবদ্ধ করার ইউরোপের শক্তিসাম্য ভেঙে পড়েছে । এখন যে কোন ধরনের যুদ্ধ নবগঠিত জার্মানীর স্থায়িত্বকেই আঘাত করবে ।

বিসমার্ক উপলব্ধি করেছিলেন যে , সমসাময়িক পরিস্থিতি অন্তত দুটি কারণে যুদ্ধ সৃষ্টি করতে পারে । 

প্রথমত , ফ্রান্সকে পরাজিত করে জার্মানী আলসাস ও লোরেন প্রদেশ দুটি দখল করেছিল । এই পরাজয়ের গ্লানি মুছতে ফ্রান্স যুদ্ধ সৃষ্টির জন্য উন্মুখ ছিল । 

দ্বিতীয়ত , বিসমার্কের নেতৃত্বে জার্মানীর উত্থান ও পরপর যুদ্ধজয় অধিকাংশ ইউরোপীয় শক্তিকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল । ফলে ভবিষ্যৎ জার্মান আগ্রাসনের ভয়ে জার্মান বিরোধী শক্তিজোট গঠনের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছিল । 

এই দ্বিবিধ সমস্যা থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য বিসমার্ক দ্বিমুখী বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করতে শুরু করেন । 

প্রথমত , তিনি এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান যাতে অন্যান্য রাষ্ট্রের জার্মান ভীতি ( German fobia ) হ্রাস পায় । 

দ্বিতীয়ত , তিনি ব্যাপক রাষ্ট্রজোট গঠনের মাধ্যমে একদিকে জার্মানীর মিত্র সংখ্যা বাড়াতে এবং অপরদিকে ফ্রান্সকে মিত্রহীন করে রাখতে উদ্যোগী হন ।

আরো পড়ুন : জার্মানির ঐক্য সাধনে বিসমার্কের অবদান

পরিতৃপ্ত দেশ ঘোষণা 

জার্মান ভীতি হ্রাস করার জন্য বিসমার্ক স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন যে , ‘ জার্মানী একটি পরিতৃপ্ত দেশ ” ( Germany is a satiated state ) । অর্থাৎ জার্মানী আর যুদ্ধ চায় না , – সে শান্তিকামী দেশ হিসেবেই থাকতে চায় । এই ঘোষণার ফলে ইউরোপীয় দেশগুলির জার্মানে ভীতি দূর হয় । এই শান্তির নীতি অনুসরণ করে বিসমার্ক যে বাস্তব জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছিলেন , তা অনবদ্য । 

তিন সম্রাটের চুক্তি 

বিসমার্ক জার্মানীকে কেন্দ্র করে একটি ব্যাপক মৈত্রী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন । সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এ কাজে বিসমার্ককে সাহায্য করে । ইতালী ও অস্ট্রিয়া তখন পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন । ইংল্যাণ্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে ছিল চিরাচরিত বাণিজ্যিক শত্রুতা । আবার বলকান অঞ্চলের প্রাধান্যকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে ছিল প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা । 

এইরূপ পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতার সুযোগে বিসমার্ক রাশিয়া ও অস্ট্রিয়াকে জার্মানীর কাছাকাছি আনতে উদ্যোগী হন । ইতিপূর্বেই তিনি অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ দ্বারা উভয় রাষ্ট্রকেই সন্তুষ্ট করে রেখেছিলেন । এখন তিনি এক ও অভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের দোহাই দিয়ে এবং ফ্রান্সের প্রজাতন্ত্রবাদ বা প্যারিস কমিউনের সাম্যবাদ , রাশিয়ার নৈরাজ্যবাদ প্রভৃতির বিপজ্জনক দিক প্রতিরোধে জার্মানী , অস্ট্রিয়া ও রাশিয়াকে একত্রিত হতে আহ্বান জানান । ১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি বার্লিনে তিন দেশের সম্রাটদের এক সভা আহ্বান করেন । এরই পরিণতিতে স্বাক্ষরিত হয় ‘ তিন সম্রাটের চুক্তি ’ বা Deri Kaiserbund । 

অস্ট্রিয়া ও রাশিয়া পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও বিসমার্কের কূট কৌশল তাদের এক পতাকাতলে সমবেত করতে সক্ষম হয় । মুখে যাই প্রচার করুন , বিসমার্কের আসল উদ্দেশ্য ছিল ফ্রান্সকে মিত্রহীন করা । সেদিক থেকে এই চুক্তি নিঃসন্দেহে বিসমার্কের সাফল্য নির্দেশ করে । 

তিন সম্রাটের চুক্তিতে ফাটল 

কিন্তু শীঘ্রই তিন সম্রাটের চুক্তিতে ফাটল দেখা দেয় । রুশ মন্ত্রী গোরচাকফ এই চুক্তির বিরোধী ছিলেন । কারণ তাঁর ধারণা ছিল এই চুক্তির ফলে জার্মানীর একাধিপত্য বিস্তৃত হবে । ফ্রান্সের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ম্যাকমোহন সামরিক সংস্কারের উদ্যোগ নিলে বিসমার্ক ফ্রান্সকে নিরস্ত হতে হুমকি দেন । এমতাবস্থায় গোরচাকফ ঘোষণা করেন যে , জার্মানী ফ্রান্সকে আক্রমণ করলে রাশিয়া নিরপেক্ষ থাকবে না । ফলে বিসমার্ক ফ্রান্সের বিরুদ্ধে সমরায়োজন বন্ধ করেন । 

অতঃপর বার্লিন কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে ‘ তিন সম্রাটের চুক্তি ‘ ভেঙে যায় । বলকান সমস্যা সমাধানের জন্য বিসমার্ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উপর জোর দিলে রাশিয়া অসন্তুষ্ট হয় । কারণ রাশিয়া আশা করেছিল , বিসমার্ক স্যানস্টিফেনোর চুক্তিকে সমর্থন করবে । কিন্তু তা না করে তিনি বার্লিন কংগ্রেসের আয়োজন করেন । এই সম্মেলনে বিসমার্ক হন সভাপতি । এই সভায় যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় , তা রাশিয়াকে ক্ষুণ্ণ করে । রাশিয়ার ধারণা হয় যে , বিসমার্ক এখানে রাশিয়ার তুলনায় অস্ট্রিয়ার স্বার্থকেই বেশী সমর্থন করেছেন । ফলে রাশিয়া ‘ তিন সম্রাটের চুক্তি ‘ ত্যাগ করে ( ১৮৭৯ খ্রীঃ ) ।

দ্বি শক্তি চুক্তি 

তিন সম্রাটের চুক্তি ভেঙে গেলে বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সাথে ‘ দ্বি শক্তি চুক্তি ‘ ( Dual Alliance ) স্বাক্ষর করেন । এই সন্ধি দ্বারা স্থির হল উভয় রাষ্ট্রের যে কেউ তৃতীয় রাষ্ট্রের দ্বারা আক্রান্ত হলে অপর জন আক্রান্ত রাষ্ট্রকে সাহায্য করবে । প্রধানত ফ্রান্স ও রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধেই এই জোট হয়েছিল । 

ত্রি শক্তি চুক্তি 

অতঃপর বিসমার্ক ইতালীকে চুক্তিতে আবদ্ধ করতে অগ্রসর হন । আফ্রিকার টিউনিস উপনিবেশকে কেন্দ্র করে ফ্রান্সের সাথে ইতালীর বিরোধ ছিল । বিসমার্ক ফ্রান্সকে টিউনিস দখল করতে গোপনে উৎসাহ দেন । ফলে ফ্রান্স টিউনিস দখল করে । এতে ইতালী ফ্রান্সের উপর ক্ষুব্ধ হয় । এমনি সময়ে বিসমার্ক ইতালীকে চুক্তিবদ্ধ হতে আহ্বান জানান । ফ্রান্সের উপর ক্ষুব্ধ ইতালী বিসমার্কের ডাকে সাড়া দেয় এবং জার্মানী-অস্ট্রিয়া -ইতালী ‘ ত্রি শক্তি মৈত্রী ‘ ( Tripple Alliance ) স্থাপিত হয় ( ১৮৮২ খ্রীঃ ) । প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই জোট অক্ষুণ্ণ ছিল । 

ইংল্যান্ড নীতি 

ইংল্যান্ডকে ফ্রান্স থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার জন্য বিসমার্ক ইংল্যান্ডকে মিশর দখল করতে উৎসাহিত করেন । ফলে ফ্রান্সের সাথে ইংল্যাণ্ডের বিরোধ সৃষ্টি হয় । এই সময়ে ইংল্যান্ড ও ইতালীর মধ্যে একটি নৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ( ১৮৮৭ খ্রীঃ ) । এইভাবে বিসমার্ক সুনিশ্চিতভাবে ইংল্যাণ্ড ও ইতালীকে ফ্রান্সের সংস্পর্শ থেকে সরিয়ে আনেন । এমনকি তিনি ফ্রান্সে প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে স্থায়ী করতেও চেষ্টা করেন । কারণ বিসমার্ক মনে করতেন প্রজাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সবথেকে দুর্বলতম শাসন ব্যবস্থা । 

আবার তিন সম্রাটের চুক্তি 

ইতিপূর্বে ‘ তিন সম্রাটের চুক্তি ’ ভেঙে গেলেও তা পুনঃস্থাপন করার জন্য বিসমার্কের চেষ্টার অন্ত ছিল না । ১৮৮১ খ্রীষ্টাব্দে তিনি পুনরায় তিন সম্রাটের চুক্তি স্বাক্ষর করতে সক্ষম হন । কিন্তু এবারেও এটি ক্ষণস্থায়ী হয় । বুলগেরিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার মতবিরোধ দেখা দেয় । রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় । কিন্তু রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন রাখা নিরাপদ ছিল না । কারণ সেক্ষেত্রে ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে মিত্রতা স্থাপিত হবার সম্ভাবনা ছিল । তাই তিনি গোপনে রাশিয়ার সাথে ‘ রি ইনসুরেন্স চুক্তি ‘ ( Re insurance treaty ) স্বাক্ষর করেন । এই চুক্তি দ্বারা স্থির হয় , রাশিয়া বা জার্মানী তৃতীয় কোন শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হলে পরস্পর ‘ সাহায্যমূলক নিরপেক্ষতা ‘ ( Active nutrality ) অবলম্বন করবে ।

ইংল্যান্ডের সাথে সু সম্পর্ক বজায় 

বিসমার্ক ইংল্যান্ডের সাথে গোপন চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্দেশ্যে ডিজরেইলী ও সলবেরীর সাথে যোগাযোগ করেন । অবশ্য ইংল্যান্ড এ ধরনের কোন গোপন চুক্তি অস্বীকার করে । চুক্তি সাধনে ব্যর্থ হলেও স্বাক্ষর করতে ইঙ্গ জার্মান সু সম্পর্ক বজায় রাখতে তিনি সফল হন । তিনি ঘোষণা করেন যে , ‘ জল মুষিক ইংল্যান্ডের সাথে ‘ স্থল মুষিক ’ জার্মানীর কোন বিরোধ নেই । অর্থনৈতিক কারণে উপনিবেশ স্থাপনের প্রয়োজন থাকলেও বিসমার্ক অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তা পরিহার করে চলেন । এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ইংল্যাণ্ডকে সন্তুষ্ট রাখা । 

কূটনীতির জাদুকর  

এইভাবে বিসমার্ক বিভিন্ন চুক্তি দ্বারা 一

( ১ ) ফরাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়া ও ইতালীর সহায়তা , 

( ২ ) রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়ার নিরপেক্ষতা , 

( ৩ ) অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে রাশিয়ার মিত্রতা এবং 

( ৪ ) ইংল্যাণ্ডের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে সক্ষম হন । 

জাদুকর সুলভ দক্ষতা দ্বারা তিনি পরস্পর বিরোধী দু’টি শক্তিকে নিজের পক্ষে রাখতে এবং ক্ষমতালোভী দুটি রাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ রাখতে তথা ফ্রান্সকে মিত্রহীন করে রাখতে সক্ষম হন ।

সমালোচনা 

কিন্তু বিসমার্কের এই পররাষ্ট্র নীতি সম্পূর্ণ ত্রুটি মুক্ত ছিল না । 

জটিল চুক্তি : 

বিসমার্কের অনুসৃত পররাষ্ট্র নীতি ছিল পরস্পর বিরোধী ও জটিল । তিনি যতদিন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন , ততদিন এহেন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করে তিনি জার্মানীর নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিলেন । কিন্তু তাঁর পদত্যাগের পরেই এই জটিল চুক্তিজাল ভয়াবহ আকার ধারণ করে ।

পরস্পর বিরোধী চুক্তি : 

তাঁর পরিকল্পিত ‘ তিন সম্রাটের চুক্তি ‘ ছিল পরস্পর বিরোধী রাষ্ট্রের সমন্বয় সাধনের প্রয়াস । অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার ছিল প্রচণ্ড স্বার্থদ্বন্দ্ব । তাই প্রথমে বার্লিন কংগ্রেস ( ১৮৭৮ খ্রীঃ ) ও পরে বুলগেরিয়া সংকট ( ১৮৮৫ খ্রীঃ ) কে কেন্দ্র করে তিন সম্রাটের চুক্তি দু’বারই ভেঙে যায় । অর্থাৎ তাঁর পরিকল্পনা ছিল ক্ষণস্থায়ী । 

একপক্ষীয় চুক্তি : 

জার্মানী ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘ দ্বি শক্তি ‘ চুক্তির দ্বারা সমদায়িত্ব ও সমস্বার্থ রক্ষার নীতি অনুসৃত হয়নি । সন্ধির শর্তানুযায়ী রাশিয়া অস্ট্রিয়াকে আক্রমণ করলে জার্মানী অস্ট্রিয়াকে সাহায্য করতে বাধ্য ছিল । কিন্তু জার্মানী রাশিয়া কর্তৃক আক্রান্ত হলে অস্ট্রিয়া নিরপেক্ষ থাকতে প্রতিশ্রুত ছিল । টেলারের মতে , “ বিসমার্ক দ্বি শক্তি চুক্তি দ্বারা প্রাশিয়ার দ্রুতগামী ফ্রিগেটকে অস্ট্রিয়ার পাকখাওয়া ফ্রিগেটের সাথে জুড়ে দেন । ” 

উদারতার অভাব :

বিসমার্ক ফ্রান্সকে মিত্রহীন করে রাখতে গিয়ে ফরাসী জনগণের রোষই বৃদ্ধি করেছেন । কিন্তু তিনি যদি সামান্য স্বার্থ ত্যাগ করে ফ্রান্সের প্রতি সহৃদয় ব্যবহার করতেন , তা হলে হয়ত এতগুলি চুক্তির আয়োজন করতে হত না । 

সামরিক জোট : 

বিসমার্কের সবগুলি চুক্তিই ছিল সামরিক জোট । এর দ্বারা তিনি হয়ত সাময়িক শান্তি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন , কিন্তু স্থায়ী শাস্তি বিধানের কোন পরিকল্পনা তাঁর ছিল না । সে ক্ষেত্রে একাধিক চুক্তিজাল রচনা না করে তিনি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করে সমস্যার সুরাহা করতে পারতেন । তাতে ইউরোপের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল উত্তেজনা মুক্ত থাকতে পারত । 

অর্থনৈতিক স্বার্থ উপেক্ষিত :

বিসমার্ক ইংল্যাণ্ডকে সন্তুষ্ট রাখতে গিয়ে জার্মানীর অর্থনৈতিক স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করেছিলেন । বিসমার্ক উপনিবেশ বিস্তার নীতি না গ্রহণ করার ফলে জার্মানীর শিল্পজাত দ্রব্যাদি উপযুক্ত বাজার ( Market ) পায়নি । ফলে পরবর্তী কালে জার্মানীতে শিল্প বিস্তারের গতি শ্লথ হয়ে গিয়েছিল । 

আরো পড়ুন : ইতালির ঐক্য আন্দোলন

এমস টেলিগ্রাম বলতে কী বোঝো

বলকান সংকট বলতে কি বোঝো আলোচনা করো

error: Content is protected !!