নিহিলিস্ট আন্দোলন 

নিহিলিস্ট আন্দোলন 

জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের উদারতান্ত্রিক কর্মসূচী সত্ত্বেও তাঁর রাজত্বকালে রাশিয়ার বিপ্লবী ভাবধারা ক্রমশ জনসমর্থন অর্জন করছিল । কারণ দ্বিতীয় আলেকজান্ডার আন্তরিকভাবে উদারতান্ত্রিক ছিলেন না । তিনি ছিলেন স্বৈরাচারী শাসক এবং তার সংস্কারগুলি স্বৈরাচারী পদ্ধতিতেই কার্যকরী করা হচ্ছিল । স্বাভাবিক ভাবেই বামপন্থী বা মুক্তপন্থীদের আকর্ষণ করার কোন ক্ষমতাই ঐসব সংস্কারের ছিল না । 

এরূপ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রে বিশ্বাসী এক চরমপন্থী দলের উত্থান ঘটে । এরাই ‘ নিহিলিস্ট ’ বা ‘ নৈরাজ্যবাদী ‘ নামে পরিচিতি লাভ করে । প্রখ্যাত রুশ ঔপন্যাসিক তুর্গেনিভ তাঁর ‘ ফাদার এন্ড সন্স ‘ ( Father and Sons ) উপন্যাসের নায়ক বাজারভ এর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নিহিলিস্টদের মতাদর্শ ব্যাখ্যা করেন । প্রথম পর্যায়ে এই মতবাদ রুশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিকশিত হয় । 

মতাদর্শ 

এই মতবাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল এমন একদল মানুষ তৈরি করা , যারা হবে সবরকম কর্তৃত্বের বিরোধী এবং চরমতম চুক্তিবাদী । উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কোন কিছুই মেনে নেবে না ।  

নিহিলিস্টরা ছিল ঘোর বস্তুবাদী । ব্যক্তির বস্তুগত জীবনে কাজে লাগে না এমন সমস্ত কিছুই ছিল এদের কাছে মূল্যহীন । এদের মতে চার্চ , রাষ্ট্র বা জার — সবকিছুই অপ্রয়োজনীয় ও অকল্যাণকর , অতএব বর্জনীয় । এদের মতে , কলাবিদ্যা অর্থহীন । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যাই প্রয়োজনীয় । এদের ব্যাখ্যায় সেক্সপীয়র বা গ্যেটের তুলনায় একজন মুচি সমাজের অনেক বেশী উপকার করে । কারণ , একজোড়া জুতা ব্যক্তিকে যা সাহায্য দেয় একটি কাব্য তা দিতে পারে না । 

নিহিলিস্ট আন্দোলন এর কর্মসূচী 

নৈরাজ্যবাদীরা বর্তমান রাষ্ট্রীয় , সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে একটি সর্বজনহিতকর সমাজজীবন গড়ে তোলার পক্ষপাতী ছিল । একমাত্র এটিই ছিল এদের ইতিবাচক চিন্তা । অবশ্য কিভাবে এই মঙ্গলকর সমাজ গড়ে উঠবে সে বিষয়ে এদের মতভেদ ছিল । কেউ কেউ মনে করত প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই এই পরিবর্তন ঘটবে না । আবার কেউ কেউ প্রচলিত ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে বৈজ্ঞানিক , দার্শনিক ও জৈবতত্ত্বের ভিত্তিতে নতুন সমাজগঠনের পক্ষপাতী ছিল ।

আরো পড়ুন : জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডারের সংস্কার

সমাজতন্ত্রবাদ কি

নব্যবঙ্গ আন্দোলন

স্পেনের গৃহযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

error: Content is protected !!