বিজ্ঞানে নবজাগরণের প্রভাব

Contents

বিজ্ঞানে নবজাগরণের প্রভাব

একাদশ দ্বাদশ শতাব্দীতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একাধিক মনীষীদের দ্বারা ব্যাপক বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়েছিল । ফলে সেই সময় সাহিত্য ও শিল্পের মতো বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটে । 

রজার বেকন

ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রজার বেকন [ 1214-1294 খ্রি. ] ছিলেন আধুনিক বিজ্ঞানের জনক । রসায়ন , পদার্থবিদ্যা ও যন্ত্রবিজ্ঞানে তিনি ছিলেন পারদর্শী । তাঁর আবিষ্কারের মধ্যে চশমা ও দূরবিনের কাচ উল্লেখযোগ্য । তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থত্রয় ওপাশ মাজুস  , অপাস মাইনুস এবং অপাস টারটিয়াম বিজ্ঞান জগতের অমূল্য সম্পদ । এছাড়া চিকিৎসাশাস্ত্রে তাঁর পারদর্শিতার জন্য তাঁকে বিস্ময়কর ডাক্তার বলা হয়ে থাকে । 

ফ্রান্সিস বেকন

ইংল্যান্ডের ফ্রান্সিস বেকন [ 1561-1626 খ্রি. ] কেবল দার্শনিক ছিলেন না , বিজ্ঞানেও ছিল তাঁর প্রবল অনুরাগ । তাঁর মতে পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ এই দুটি পদ্ধতি সত্য উদ্ঘাটনের একমাত্র উপায় । তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ নোভাম অর্গানাম , অ্যাডভান্সমেন্ট অব লার্নিং অমূল্য সম্পদ । তাঁকে পরীক্ষামূলক দর্শনের জনক বলা হয় । 

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি 

শিল্প ও বিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি [ 1452-1519 খ্রি. ] ছিলেন অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী । জ্যোতির্বিদ্যা , যন্ত্রবিদ্যা , শারীরবিদ্যা , পদার্থবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর তাঁর অগাধ দখল ছিল । মরা মানুষের দেহ চিরে কিভাবে পেশীগুলি হাড়ের সঙ্গ যুক্ত , কিভাবে চোখ কাজ করে প্রভৃতি বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকপাত করেন । পাখির ওড়া লক্ষ করে তিনি প্রথম উড়োজাহাজের নকশা তৈরি করেছিলেন । আগুনে পুড়বে না এমন সেতু নির্মাণ , যুদ্ধযান নির্মাণ , খাল খনন ও শহর পরিকল্পনায় তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন । 

নিকোলাস কোপারনিকাস 

পোল্যান্ডের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপারনিকাস [ 1473-1543 খ্রি. ] বহুদিন ধরে প্রচলিত টলেমির ভূ-কেন্দ্রিক তত্ত্ব ভুল বলে প্রমাণ করেন । তিনি ঘোষণা করেন , সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ সূর্যের চারদিকে ঘুরছে । তাঁর এই তত্ত্ব বাইবেল  বিরোধী হওয়ায় খ্রিস্টান জগতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় । ফলে শাস্তির ভয়ে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত প্রচার করতে সাহস পাননি । তাঁর এই সিদ্ধান্ত প্রচার করার জন্য বিজ্ঞানী জিওনার্দো ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ।  

গ্যালিলিও গ্যালিলেই 

ইটালির গ্যালিলেও [ 1564-1642 খ্রি. ] ছিলেন একাধারে পদার্থবিদ ও অন্যদিকে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী । তিনি দোলকের ( Pendulum ) গতির সূত্র আবিষ্কার করেন । দূরের জিনিসকে বড় করে দেখার জন্য তিনি দূরবীক্ষণ নামে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন । তাঁর সবশ্রেষ্ঠ কীর্তি হল কোপারনিকাসের তত্ত্বকে সত্য বলে প্রমাণ করা । তিনি দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করেন যে , পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে । এই কাজের জন্য পোপ তাকে ‘ ধর্মদ্রোহী ‘ বলে অভিযুক্ত করে কারাগারে বন্দি করেন । কারাগারে থাকাকালীন অন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় । তাঁর আবিষ্কার মানুষের চেতনায় বিপ্লব আনে । 

জোহান গুটেনবার্গ 

নবজাগরণের যুগে ছাপাখানা আবিষ্কার মুদ্রণ শিল্পে যুগান্তকারী ঘটনা । এর আবিষ্কর্তা ছিলেন জার্মানির জোহান গুটেনবার্গ [ 1398-1468 খ্রি. ] । এর আগে সকল গ্রন্থই হাতে লেখা হত । ফলে নকল করতে অনেক সময় ও খরচ লাগত । চিনে প্রথম ছাপার কাজ শুরু হলেও গুটেনবার্গ আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কর্তা । তিনি সীসা গলিয়ে অক্ষর তৈরি করে যন্ত্রের সাহায্যে ছাপার কায়দা আবিষ্কার করেন । 1456 খ্রিস্টাব্দে ল্যাটিন ভাষায় বাইবেল গুটেনবার্গের ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত প্রথম গ্রন্থ । তাঁর আবিষ্কার নবজাগরণকে গতিদান করে । বিশ্বে শিক্ষা বিস্তারের পথ সুগম হয় । 

এইভাবে কৃষ্টির বিভিন্ন শাখায় নিত্য নতুন আবিষ্কারের ফলে ইউরোপ মধ্যযুগের গণ্ডি পেরিয়ে আধুনিক যুগে প্রবেশ করে ।

আরো পড়ুন : সাহিত্যে নবজাগরণের প্রভাব

শিল্পে নবজাগরণের প্রভাব আলোচনা কর

রেনেসাঁস বা নবজাগরণ বলতে কী বোঝো

error: Content is protected !!