জীবন বিজ্ঞান

সালোকসংশ্লেষ কাকে বলে

Contents

সালোকসংশ্লেষ কাকে বলে

যে পদ্ধতিতে সবুজ উদ্ভিদ সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পরিবেশ থেকে গৃহীত জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের সহায়তায় শর্করা জাতীয় খাদ্য সংশ্লেষ করে এবং উপজাত বস্তুরূপে জল ও অক্সিজেন নির্গত করে তাকে সালোকসংশ্লেষ বলে । 

f0e5345f 734f 414b 9dae d9410af49053gg
সালোকসংশ্লেষ

শক্তি বিদ্যার দৃষ্টিতে বলা যায় — যে পদ্ধতিতে সবুজ উদ্ভিদ আলোকের ফোটন কণা শোষণ করে আলোক শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিরূপে জৈব যৌগে আবদ্ধ করে তাকে সালোকসংশ্লেষ বলে ।

বিজ্ঞানী বার্নেস ( Barnes 1898 ) ফোটোসিন্থেসিস বা সালোকসংশ্লেষ শব্দটি প্রথম প্রবর্তন করেন । ‘ Photosynthesis ‘ শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ— Photos অর্থাৎ আলো এবং Synthesis অর্থাৎ সংশ্লেষ থেকে এসেছে । ফোটোসিন্থেসিস শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল আলোকের উপস্থিতিতে সংশ্লেষ অর্থাৎ সবুজ উদ্ভিদ কর্তৃক আলোকের উপস্থিতিতে শর্করা সংশ্লেষ । 

সালোকসংশ্লেষ হল ক্লোরোফিল যুক্ত উদ্ভিদের একটি স্বতন্ত্র জৈবনিক পদ্ধতি যা অন্য কোনো জীবের পক্ষে সম্ভব নয় । সালোকসংশ্লেষকারী উদ্ভিদ পরিবেশের পর্যাপ্ত সূর্যালোকের কিছু অংশমাত্র শোষণ করে বায়ুমণ্ডলের CO2 এবং মাটি থেকে জল গ্রহণ করে শর্করা জাতীয় জৈব যৌগ উৎপাদন করে । 

উদ্ভিদ এই প্রাথমিক যৌগ থেকে জীবেদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিভিন্ন যৌগের সংশ্লেষ ঘটায় । এই যৌগের মধ্যে সৌর শক্তি রাসায়নিক শক্তিরূপে আবদ্ধ থাকে যা সমগ্র জীব জগতে শক্তির একমাত্র উৎস । তাছাড়া উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে বায়ুমণ্ডলের CO2 গ্রহণ করে O2 নির্গত করে । সুতরাং সালোকসংশ্লেষ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপচিতিমূলক জৈবনিক পদ্ধতি । 

সালোকসংশ্লেষের বৈশিষ্ট্য

সালোকসংশ্লেষের সংজ্ঞা থেকে এই প্রক্রিয়া সম্বন্ধে যে যে তথ্যগুলি জানা যায় সেগুলি হল— 

( i ) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াটি একটি জটিল জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া । 

( ii ) এই প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র ক্লোরোফিল যুক্ত সজীব কোশেই হয় ।  

( iii ) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় প্রধান তিনটি বাহ্যিক উপাদান – আলোক শক্তি ( প্রধানত সূর্যালোক ) , জল , কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং একটি অভ্যন্তরীণ উপাদান ক্লোরোফিলের একান্ত প্রয়োজন । 

( iv ) এই প্রক্রিয়ায় সরল তরল শর্করা ( মুখ্যত গ্লুকোজ ) উৎপন্ন হয় ।   

( v ) এই প্রক্রিয়ায় আলোকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে খাদ্যে আবদ্ধ হয় । 

( vi ) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উপজাত পদার্থরূপে অক্সিজেন এবং জল উৎপন্ন হয় অর্থাৎ পরিবেশের অক্সিজেনের উৎস হল সালোকসংশ্লেষ ।

সালোকসংশ্লেষের রাসায়নিক সমীকরণ

IMG ২০২২০৪৩০ ১৪১১২৬

সালোকসংশ্লেষের রাসায়নিক সমীকরণের ব্যাখ্যা 

সালোকসংশ্লেষের রাসায়নিক সমীকরণ থেকে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি জানা যায়— 

( i ) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড ( CO2 ) , জল ( H2O ) , আলোক ( প্রধানত সূর্যালোক ) এবং ক্লেরোফিল প্রধান উপাদান । 

( ii ) এই প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোক ( প্রধানত সূর্যালোক ) এবং ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতে ছয় অণু কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বারো অণু জলের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ , ছয় অণু জল এবং ছয় অণু অক্সিজেন উৎপন্ন হয় । 

( iii ) এই প্রক্রিয়ায় গৃহীত কার্বন ডাই অক্সাইডের সমঅণু পরিমাণ অক্সিজেন নির্গত হয় । 

( iv ) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া কোশের ক্লোরোপ্লাস্টে হয় কারণ ক্লোরোফিল এবং অন্যান্য সালোকসংশ্লেষকারী সহায়ক রঞ্জক পদার্থ ক্লোরোপ্লাস্টে থাকে । 

( v ) এই প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিল আলোক শক্তি শোষণ করে । 

( vi ) এই প্রক্রিয়ায় আলোকশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত হয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্যে ( গ্লুকোজ ) আবদ্ধ হয় । 

( vii ) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় 264 গ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইড এবং 216 গ্রাম জলের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে 180 গ্রাম গ্লুকোজে উৎপন্ন হয় । 

( viii ) পরিবেশের কার্বন ডাই অক্সাইড এর কার্বন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্লুকোজে আবদ্ধ হয় । 

( ix ) এই প্রক্রিয়ায় বিক্রিয়াজাত পদার্থরূপে গ্লুকোজ এবং উপজাত পদার্থরূপে জল ও অক্সিজেন উৎপন্ন হয় ।

সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া কোথায় হয় 

ক্লোরোপ্লাস্ট যুক্ত সমস্ত সজীব কোশে সালোকসংশ্লেষ হয় । উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদের ক্ষেত্রে সবুজ পাতার মেসোফিল কলার কোশ সালোকসংশ্লেষের প্রধান স্থান ।

এছাড়াও নিম্নলিখিত বিভিন্ন উদ্ভিদ অংশে সালোকসংশ্লেষ হয়ে থাকে— 

( i ) অপরিণত কাণ্ডের সবুজ অংশে এবং ফণিমনসা , কুমড়ো , পুঁই প্রভৃতি উদ্ভিদের সবুজ কাণ্ডে । 

( ii ) ফুলের সবুজ বৃন্ত , বৃতি এবং কিছু ফুলের সবুজ পাপড়িতে ( উদাঃ আতা , কাঁঠালিচাপা , শাপলা ফুলের নীচের দিকের পাপড়ি ) ।

( iii ) অপরিণত ফলের ফলত্বকে । 

( iv ) অর্কিডের বায়বীয় মূল এবং গুলঞ্চের আত্তীকরণ মূলে ক্লোরোপ্লাস্ট যুক্ত কোশ থাকায় সালোকসংশ্লেষ হয় । এছাড়াও ক্লোরোফিলের ন্যায় রঞ্জক পদার্থ নীলাভ সবুজ শৈবাল , ইউগ্লিনা , ব্যাকটিরিয়া এবং এককোশি প্রাণী ক্রাইস্যামিবার দেহে থাকায় এরাও সালোকসংশ্লেষে সক্ষম ।

সালোকসংশ্লেষ কারী জীব

i. সালোকসংশ্লেষকারী উদ্ভিদ ( Photosynthetic Plants ) : সালোকসংশ্লেষকারী রঞ্জক যুক্ত ব্যাকটেরিয়া , শৈবাল , নীলাভ সবুজ শৈবাল এবং সকল ক্লোরোফিল যুক্ত উদ্ভিদ । 

ii. সালোকসংশ্লেষকারী উদ্ভিদ মূল ( Photosynthetic Plant – roots ) : গুলঞ্জের আত্তীকরণ মূল , অর্কিডের বায়বীয় মূল । 

iii. সালোকসংশ্লেষকারী কাণ্ড ( Photosynthetic Stems ) : ফণীমনসার পর্ণকাণ্ড , কচি কাণ্ড , ক্লোরোফিল যুক্ত সকল উদ্ভিদ কাণ্ড যেমন পুঁই , লাউ , কুমড়ো ইত্যাদি । 

iv. সালোকসংশ্লেষকারী প্রাণী ( Photosynthetic Animals ) : ইউগ্লিনা ( Euglena ) , ক্রাইস্যামিবা ( Crysamoeba ) প্রভৃতি ক্লোরোপ্লাস্ট যুক্ত প্রাণী । 

v. সালোকসংশ্লেষে অক্ষম উদ্ভিদ ( Plants unable to carry out photosynthesis ) : সকল শ্রেণির ছত্রাক , ক্লোরোফিল বিহীন পূর্ণ পরজীবী বা পূর্ণ মৃতজীবী উদ্ভিদ ।

আরো পড়ুন : অঙ্গজ জনন কাকে বলে

সমসংস্থ অঙ্গ কাকে বলে

error: Content is protected !!