জীবন বিজ্ঞান

উদ্ভিদ প্রজনন বিদ্যা কাকে বলে

Contents

উদ্ভিদ প্রজনন বিদ্যা কাকে বলে

উদ্ভিদ বিজ্ঞানের যে শাখায় কৃষি শস্যের বংশগতি বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন ও উন্নত প্রকারের ( variety ) সস্যল উদ্ভিদ সৃষ্টির কৌশল সম্পর্কে আলোচনা করা হয় , তাকে উদ্ভিদ প্রজনন বিদ্যা ( Plant Breeding ) বলে ।

অথবা , উন্নতমানের নতুন নতুন খাদ্যশস্যের ও অন্যান্য অর্থকরী উদ্ভিদের উদ্ভাবন এবং উদ্ভিদগুলির বংশানুক্রমে অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলির উন্নতি ও পরিবর্তন ঘটানোর বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রক্রিয়াকে উদ্ভিদ প্রজনন বিদ্যা বলে ।

উদ্ভিদ প্রজনন বিদ্যার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ( Aims and objectives of plant breeding ) 

উদ্ভিদ প্রজনন বিদ্যার লক্ষ্য হল কোনো একটি উদ্ভিদে যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ , উন্নত ও পছন্দসই বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটানো এবং এরূপ নতুন উন্নত মানের উদ্ভিদদের কৃষিকার্যে ব্যবহার । নীচে প্রধান উদ্দেশ্যগুলি উল্লেখ করা হল— 

ফলন বৃদ্ধি ( Increase in yield ) :

অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃষিজাত ফসলের ফলন বৃদ্ধি করা একটি প্রধান উদ্দেশ্য । ধান , গম , ভুয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল সংকর উদ্ভিদ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে । যথা — সোনালিকা , কল্যাণসোনা প্রভৃতি গম , IR – 8 , জয়া , রত্না প্রভৃতি ধান ইত্যাদি । 

গুণগত মান বৃদ্ধি ( Improved quality ) :

শস্যদানা , ডাল বীজ , ফল ইত্যাদির আকার আয়তন বৃদ্ধি , প্রোটিন , ভিটামিনের পরিমাণ , মিষ্টত্ব ও স্বাদ ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের উন্নতি সাধন । যথা — ভারতবর্ষে সৃষ্ট সংকর জাতের তুলো সাবিত্রী , জয়লক্ষ্মী ইত্যাদি , এক্ষেত্রে তুলোর তত্ত্ব সূক্ষ্ম দীর্ঘ ও উন্নতমানের । অধিক চিনি উৎপাদক আখের প্রজাতি ।

উন্নত গঠনগত বৈশিষ্ট্য ( Improved structure ) :

উদ্ভিদ দেহের উচ্চতা , শক্ত – সবল গঠন , প্রয়োজনমতো শাখাপ্রশাখা সৃষ্টি যাতে সহজেই মাটিতে পড়ে না যায় । যথা – খর্বাকার জাতের ধান , গম ইত্যাদি , এরা সহজে মাটিতে পড়ে গিয়ে নষ্ট হয় না ।

রোগ ও কীটপতঙ্গের আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা ( Resistance to diseases and insect pests ) :

উদ্ভিদের বিভিন্ন সংক্রমণজনিত রোগ ও কীটপতঙ্গের আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক প্রজাতি সৃষ্টি করাও এর উদ্দেশ্য । আলুর ধসা , গমের রাস্ট প্রভৃতি রোগের প্রতিরোধক প্রজাতির সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে । যথা — ধ্বসা রোগ প্রতিরোধী আলু , রাস্ট রোগ প্রতিরোধী গমের প্রজাতি ইত্যাদি ।

ভিন্ন পরিবেশে জন্মানোর অভিযোজন ক্ষমতা ( Adaptability to new regions and climates ) :

সংকরায়ণের ফলে ধানের খরা প্রতিরোধক প্রকার ( variety ) সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে । যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম সেখানেও বিশেষ খরা প্রতিরোধী ধানের প্রজাতির ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব । এছাড়া জলমগ্ন জমিতে ক্ষারধর্মী মাটিতে জন্মানোর ক্ষমতা সম্পন্ন শস্য প্রজাতি ইত্যাদি ।

ফলন সময় হ্রাস ( Reduced duration of harvest ) :

দীর্ঘদিন কৃষিজমিতে ফসলের পরিচর্যার ব্যয়ভার কমানো , ফলনের সময় হ্রাস করে বছরে অনেকবার ফসল তোলা । ধান , গম , আখ , রেড়ি প্রভৃতির ক্ষেত্রে ফলনের সময়কাল কমানো সম্ভব হয়েছে ।

ক্ষতিকর ও বিষাক্ত পদার্থের দূরীকরণ ( Elimination of harmful and toxic substances ) :

যেসব উদ্ভিদ বিপাকজাত অবাঞ্ছনীয় বা ক্ষতিকর বস্তু উৎপন্ন করে যার ফলে মানুষ ও গবাদি পশুর ক্ষতি হতে পারে তার উৎপাদন হ্রাস করা ।

লবণাক্ত জমিতে জন্মানোর ক্ষমতা অর্জন ( Capacity of plantation ) :

সাধারণত লবণাক্ত জমিতে অধিকাংশ উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না । সংকরায়ণের ফলে এইরূপ উদ্ভিদ প্রজাতির সৃষ্টি করা , যাদের লবণাক্ত অঞ্চলে চাষ করা যায় । এর ফলে কৃষি জমির পরিমাণ ও ব্যবহার বাড়বে ।

তাপ ও আলোক সংবেদনশীলতা ( Sensitivity to light & temperature ) :

কিছু ফসলি উদ্ভিদ যেমন ধান ও গমের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ও আলোকের প্রয়োজনীয়তার পরিবর্তন ঘটিয়ে স্বল্প আলোক বা তাপমাত্রা অঞ্চলে চাষ করা সম্ভব হয়েছে । 

আরো পড়ুন : সংকরায়ন কাকে বলে

মেন্ডেল তার পরীক্ষার জন্য মটর গাছকে কেন নির্বাচন করেছিলেন

সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক প্রক্রিয়া

দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের মূলের প্রস্থচ্ছেদ

error: Content is protected !!