কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
Contents
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি কী ( What is the Kindergarten System )
কিন্ডারগার্টেন এই পদ্ধতির প্রতিষ্ঠাতা হলেন জার্মান শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল ( Froebel ) 1837 খ্রীষ্টাব্দে ফ্রয়েবেল তাঁর শিক্ষা দর্শনকে প্রত্যক্ষভাবে কার্যকর করার জন্য এক বিদ্যালয় স্থাপন করেন । এর নাম দেন তিনি ‘ কিন্ডারগার্টেন ‘ । পরবর্তীকালে এই বিদ্যালয় থেকে তাঁর পদ্ধতির মূল ভিত্তি অনুসৃত পদ্ধতির নাম হয়েছে ‘ কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি ’ । ‘ কিন্ডারগার্টেন ‘ কথার অর্থ হল ‘ শিশু উদ্যান ‘ ( Childrens Garden ) ।
ফ্রয়েবেল শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘ শিক্ষালয় ’ বা ‘ বিদ্যালয় ‘ কথাটি ব্যবহারে পক্ষপাতী ছিলেন না । তাঁর মতে শিশুর আত্মসক্রিয়তাই ( Self – activity ) একমাত্র পদ্ধতি ( Method ) । শিশু স্বাধীনভাবে নিজে নিজে কাজ করবে , এবং তার মাধ্যমে সে শিক্ষার উন্নততর আদর্শের দিকে এগিয়ে যাবে । তাই তাঁর কিন্ডারগার্টেনের মূলকথা হল শিশুর স্বাধীন সক্রিয়তা । তারা নাচবে , গান গাইবে এবং বিভিন্ন খেলনা নিয়ে খেলা করবে ।
শিশুরা বাগানের ছোট ছোট চারাগাছ । মালী যেমন বাগানের প্রত্যেক গাছের প্রতি যত্ন নেয় , তাদের জল দেয় , ঠিক তেমনি শিক্ষকরাও শিশুদের যথাযোগ্য যত্নের সঙ্গে তাদের জীবন বিকাশের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন । ফ্রয়েবেলের শিক্ষার উদ্দেশ্য হল আত্মসচেতনতার মাধ্যমে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা । তার শিক্ষা পরিকল্পনার ভেতরে তিনি সেই প্রচেষ্টাই করেছেন ।
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্য ( Characteristics of Kindergarten System )
আত্মসক্রিয়তা :
আত্মসক্রিয়তা ও খেলার মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া এই পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য । এই উদ্দেশ্যে শিশুদের অঙ্গভঙ্গীর সহযোগে ছড়া , গান ইত্যাদি শেখানোর ব্যবস্থা থাকে এই পদ্ধতির মধ্যে ।
ইন্দ্রিয়ের প্রশিক্ষণ ও উপহার :
ইন্দ্রিয় পরিচালনার প্রশিক্ষণের ( sense training ) উপর এই পদ্ধতিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । শিশুর জ্ঞান আসে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে । বহির্জগতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন হয় ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে । তাই ফ্রয়েবেল শৈশবে ইন্দ্রিয়ের পরিমার্জনার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন । এরজন্য কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের খেলনা নিয়ে খেলার ব্যবস্থা থাকে । এদের বলা হয় ‘ উপহার ‘ ( Gift ) ।
ফ্রয়েবেল বলেছেন , এই সব উপহার শিশুর কাছে জগতের প্রতীক হিসেবে কাজ করে । বিভিন্ন উপহারের মধ্যে থাকে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতির কাঠের টুকরো , কাঠি , তুলো , সূতো , নানা রঙের বল ইত্যাদি । এইসব ছোট ছোট খেলনা যার প্রতি শিশু খুব সহজে আকৃষ্ট হয় , তাদের মাধ্যমে শিশুর রঙ , আকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা হয় ।
আনন্দ ও বৃত্তি :
আনন্দ হল কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির মূল কথা । শিশুরা তাই খেলাধুলা করার সুযোগ পায় এই পদ্ধতিতে । ফ্রয়েবেল শিশুদের খেলার সঙ্গে কাজের সার্থক সমন্বয় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজের ব্যবস্থা করেছেন । এগুলির তিনি নাম দিয়েছেন বৃত্তি ( Occupations ) । নানা রকমে কাগজ ভাঁজ করা , কাগজের সাহায্যে নানারকম খেলনা তৈরি করা , কাগজের ফুল তৈরি করা , সেলাই করা ইত্যাদি বিভিন্ন রকম কাজের ব্যবস্থা থাকে এই কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে । এগুলি কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির উপকরণ ।
গান ও ছন্দ :
গান এই পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য । শিশুদের যে কোন কাজ করতে দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের গানের ছন্দের তালে । তারা ছন্দের তালের প্রতি স্বাভাবিকভাবে আকৃষ্ট হয় এবং এর ফলে কাজগুলি তারা আগ্রহের সঙ্গে এবং আনন্দের সঙ্গে সম্পাদন করে ।
প্রকৃতি পাঠ :
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে প্রকৃতি পরিচয়কে ( Nature study ) বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । বিশ্বের সব শক্তির সঙ্গে একাত্মতাবোধ অনুভব করতে হলে প্রকৃতি জগতের সঙ্গে একান্তভাবে পরিচিত হওয়ার দরকার । তাই শিক্ষার এই প্রথম স্তরে ফ্রয়েবেল প্রকৃতি পাঠের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন ।
মন্তব্য
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এই যে , এই শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুর বহুমুখী জীবন বিকাশ সম্ভব হয় এবং জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকম কৌশলই শিক্ষার্থী এখানে শেখে , তবে নিষ্ক্রিয়ভাবে নয় , তার প্রতি পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে । এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুর জীবনকে এক স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে স্থাপন করা হয় । ফলে , একই সঙ্গে তারা জ্ঞানমূলক এবং সামাজিকতামূলক অভিজ্ঞতা অর্জন করে । এই জন্যই শিশুর মধ্যে এক সামগ্র্যপূর্ণ জীবনাদর্শ গড়ে ওঠে ।
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি শিশুর সুষম ও ঐক্যবদ্ধ ( consistent ) ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করে । তাই আজকাল প্রায় পৃথিবীর সমস্ত দেশেই এই পদ্ধতির প্রচলন হয়েছে , তিন থেকে ছয় বছর বয়সের শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য । আমাদের দেশেও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পদ্ধতির প্রচলন হয়েছে , বিশেষ করে শহরাঞ্চলে ।
আরো পড়ুন : কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির পাঠ্যক্রম