কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির পাঠ্যক্রম
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির পাঠ্যক্রম
ফ্রয়েবেলের শিক্ষণ পদ্ধতি ‘ কিন্ডারগার্টেন ‘ পদ্ধতি নামে পৃথিবী বিখ্যাত । ‘ কিন্ডারগার্টেন ‘ কথার অর্থ হল ‘ শিশু উদ্যান ‘ । বিদ্যালয় হল একটি উদ্যান স্বরূপ । শিশুরা হল সেই উদ্যানের চারাগাছ এবং শিক্ষক হলেন তার মালী । শিক্ষার দ্বারা শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের চেষ্টা করা হয় ।
ফ্রয়েবেল তাঁর শিক্ষার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পাঠ্যক্রম সম্পর্কে এক সুচিন্তিত মতবাদ প্রকাশ করেছেন । তাঁর শিক্ষা চিন্তা গভীর দার্শনিক মতবাদ ও বিশ্বাসের দ্বারা নির্ধারিত হলেও পাঠ্যক্রম নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি বস্তুধর্মী দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করেছিলেন । জীবনের চরম সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য তিনি বিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দানের কথা বলেছেন । যেমন—
গণিত শিক্ষা : পেস্তালাৎসির মত ফ্রয়েবেল গণিত শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন । তিনি বলেছেন— “ Human intellect is as inseparable from mathematics as the human heart from religion . ” গণিত মানুষের জৈব শক্তিকে বিকাশ করে বিশ্বজগতের ঐক্যের সূত্র খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে । আর এই উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি পাঠ্যক্রমের মধ্যে গণিতকে আবশ্যিক করেছেন ।
ভাষা শিক্ষা : ফ্রয়েবেলের মতে ভাষা হল সাংকেতিক ভাব , যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেকে বিশ্বসত্তার সঙ্গে একীভূত করবে । তাই ভাষা শিক্ষার উপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন । আর তিনি ‘ পড়া’র চেয়ে , ‘ কথা বলা’র উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন । কারণ প্রত্যেক যোগাযোগ কথোপকথনের মধ্য দিয়েই আসবে । লেখাকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দেননি , বিশেষ ধরনের অঙ্কন হিসেবে বিবেচনা করেছেন ।
প্রকৃতি পরিচয় : ফ্রয়েবেলের পাঠ্যক্রমে প্রকৃতি পরিচয়কে ( Nature study ) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে । পেস্তালাৎসি প্রকৃতি পরিচয়ের কথা বলেছিলেন , কেবলমাত্র বস্তুজগতের সঙ্গে শিশুকে পরিচিত করার জন্য । কিন্তু ফ্রয়েবেলের কাছে প্রকৃতি পরিচয়ের গুরুত্ব অনেক গভীর । তিনি বলেছেন , প্রকৃতি জগৎ শিশুর কাছে এক বিরাট ঐক্যের সংকেত বহন করে নিয়ে আসে । এই সংকেতের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হলে শিশু তার মানসিক জীবনে ঐক্য আনবে , তার নৈতিক জীবনের বিকাশ স্ব-ইচ্ছায় করবে , এই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য ।
অঙ্কন শিক্ষা : অঙ্কন বিদ্যাকে ফ্রয়েবেল পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করেছেন । কারণ এর দ্বারা শিশুর জ্ঞানের প্রকাশ পায় এবং তার সৌন্দর্য বোধের বিকাশ হয় । তিনি মনে করতেন , বিশ্বের ঐক্য উপলব্ধি করতে হলে সৌন্দর্যবোধের বিকাশ একান্তভাবে প্রয়োজন ।
মাটির কাজ : মাটির সাহায্যে বস্তু গঠনের দ্বারা শিশুর আত্মসক্রিয়তা চরিতার্থ হয় । বিভিন্ন বস্তুকে মাটির মধ্য দিয়ে রূপদান করে সে সৃষ্টির আনন্দ পায় , স্রষ্টাকে উপলব্ধি করতে শেখে । তিনি বলেছেন— “ God created man in his own image ; therefore man should create and bring forth like God . ”
কায়িক শ্রম : একই উদ্দেশ্যে ফ্রয়েবেল পাঠ্যক্রমে কায়িক পরিশ্রমকে প্রধান স্থান দিয়েছেন । পেস্তালাৎসি জীবিকা অর্জনের জন্য কায়িক পরিশ্রমের কথা বলেছেন । কিন্তু ফ্রয়েবেল কায়িক পরিশ্রমকে তাঁর শিক্ষামূলক উপযোগিতার জন্য পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করেছেন ।
ইতিহাস , ভূগোল ইত্যাদি বিষয় : এছাড়া , ফ্রয়েবেল ইতিহাস , ভূগোল , বিজ্ঞান ইত্যাদি পাঠের কথাও বলেছেন এবং এই বিষয়গুলির মধ্যে অনুবন্ধ স্থাপন করে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার কথাও তিনি বলেছেন ।
গান , নাচ ইত্যাদি বিষয় : ‘ গান ‘ , ‘ নাচ ‘ , ‘ খেলা ‘ , ইত্যাদিকে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার কথাও তিনি বলেছেন । এই সব কাজের মধ্য দিয়ে শিশুরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিশ্বজগতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে ।
ধর্মীয় বিষয় : সবশেষে পাঠ্যক্রমের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্তির কথা তিনি বিশেষভাবে বলেছেন । এইসব বিষয়ের মাধ্যমে শিশুদের ঈশ্বর চেতনা জাগ্রত হবে । পাঠ্যক্রম সম্পর্কে ফ্রয়েবেলের মূল বক্তব্য হল যে , শিক্ষার্থীর সামনে বিশ্বজগতের এক পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে হবে ।
আরো পড়ুন : কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির পাঠ্যক্রম