কিন্ডারগার্টেন এবং মন্টেসরি পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য
কিন্ডারগার্টেন এবং মন্টেসরি পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য
ফ্রয়েবেল এবং মন্তেসরি দুজনেই শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন আন্দোলন গড়ে তুলেছেন । তাঁদের মতবাদ এবং পদ্ধতির মধ্যে অনেক মিল আছে । তাই অনেকের মনে সন্দেহ জাগতে পারে , একজনের মতবাদ আর একজনের পুনরাবৃত্তি মাত্র । কিন্তু এই ধারণা ঠিক নয় । তাঁদের মতবাদের মধ্যে মিলও যেমন আছে , অমিলও প্রচুর—
( ১ ) তারা উভয়েই প্রাক-শিক্ষালয় ( pre – school ) স্তরের শিশুদের জন্য শিক্ষণ পদ্ধতির প্রবর্তন করেছেন ।
( ২ ) দুজনেই শিক্ষাকে ব্যক্তির আত্মবিকাশ ( Unfoldment ) হিসাবে বিবেচনা করেন ।
( ৩ ) ফ্রয়েবেল আত্মসক্রিয়তাকে ( Self activity ) এবং মন্তেসরি স্বয়ংশিক্ষাকে ( Auto education ) শিক্ষার একমাত্র পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করেছেন ।
( ৪ ) দু’জনেই শিশুর শিক্ষার জন্য স্বাধীন পরিবেশের গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করেছিলেন ।
( ৫ ) উভয়েই ইন্দ্রিয় মার্জনার কথা বলেছেন । তাই ফ্রয়েবেলের কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি ও মন্তেসরির পদ্ধতিতে আমরা বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা দেখতে পাই ।
( ৬ ) শিক্ষকের দায়িত্ব সম্পর্কে দুজনে একই মত প্রকাশ করেছেন ।
( ৭ ) দুজন শিক্ষাবিদই তাঁদের শিক্ষাতত্ত্বের প্রয়োগের জন্য নিজস্ব বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন ।
ফ্রয়েবেল এবং মন্টেসরি পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য
এত মিল থাকা সত্ত্বেও তাঁদের পদ্ধতি ও চিন্তাধারার মধ্যে নিম্নলিখিত দিক থেকে অমিল গুলি হলো ㅡ
[ এক ] ফ্রয়েবেলের শিক্ষা তত্ত্ব বিশেষভাবে দার্শনিক চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত । কিন্তু মন্তেসরির শিক্ষাতত্ত্ব বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী প্রসূত । ফ্রয়েবেল তাঁর দার্শনিক চিন্তাধারাকে শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োগ মস্তেস্বরী ও ফ্রয়েবেলের করেছেন ; কিন্তু মন্তেসরি ক্ষীণ বুদ্ধি সম্পন্ন শিশুদের পরিচালনা করতে চিন্তাধারার অমিল গিয়ে যে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন , তাকেই শিশু কল্যাণের জন্য শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন ।
[ দুই ] ফ্রয়েবেল তাঁর কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে শিশুকে দলগতভাবে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাকে মেনে নিয়েছেন । কিন্তু মন্তেসরি শিক্ষণ পদ্ধতির মূল কথা হল ব্যক্তিগত শিক্ষা ( Individualized instruction ) ।
[ তিন ] মন্তেসরি পদ্ধতিতে সামাজিক শিক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই । তিনি শিশুর সামাজিক গুণ বিকাশের দিকে কোন গুরুত্বই দেননি । কিন্তু কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে বিশেষভাবে শিশুর সামাজিক বিকাশের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । এইজন্য কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে খেলাধূলা , নাচ , গান , ইত্যাদিকে বিশেষভাবে কাজে লাগানো হয়েছে ।
[ চার ] ফ্রয়েবেলের পদ্ধতিতে শিশুর কল্পনাশক্তি বিকাশের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । তাই কিন্ডারগার্টেনে তিনি গল্প , গান , অভিনয় ইত্যাদিকে কাজে লাগানোর কথা বলেছেন । কিন্তু মন্তেসরি শিশুর কল্পনাশক্তি বিকাশের দিকে গুরুত্ব দেননি ।
[ পাঁচ ] মন্তেসরি পদ্ধতিতে আমরা নিয়মমাফিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম কিছু পরিমাণে দেখতে পাই । তিনি পড়া , লেখা এবং গণিত শিক্ষার কথা বলেছেন এবং এইসব বিষয় শিক্ষাদানের কৌশলও প্রবর্তন করেছেন । কিন্তু ফ্রয়েবেলের পদ্ধতিতে আমরা এই ধরনের নিয়মিত কোন বিষয়ের কোন উল্লেখ পাই না ।
[ ছয় ] মন্তেসরি পদ্ধতিতে দৈনন্দিন জীবনের কাজের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । কিন্তু কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে মাটির কাজ , বাগানের কাজ , কাঠের কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুকে সক্রিয় করার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
[ সাত ] কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতিতে শিক্ষকের ভূমিকা অপেক্ষাকৃত সক্রিয় । তিনি ইচ্ছা করলে শিশুর কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারেন , যদি বোঝেন যে , শিশু উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছে । কিন্তু মন্তেসরি পদ্ধতিতে শিক্ষক একেবারে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন । তার কারণ , ডিডাকটিক যন্ত্রগুলির মধ্যে আত্মভ্রম-সংশোধনের ( Self – correction ) কৌশল আছে ।
[ আট ] সবশেষে , প্রয়োগের দিক থেকে কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতি অনেক সময় সহজ এবং এই পদ্ধতির প্রয়োগ যে কোন পরিস্থিতিতে করা যায় । কিন্তু মন্তেসরি পদ্ধতি প্রয়োগের নানারকম অসুবিধা আছে । সম্পূর্ণ বিদ্যালয়ের পরিচালন ব্যবস্থাকে পরিবর্তন না করলে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় না ।
আরো পড়ুন : কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
কিন্ডারগার্টেন পদ্ধতির পাঠ্যক্রম