রাসায়নিক বন্ধন কাকে বলে

রাসায়নিক বন্ধন কাকে বলে

বিভিন্ন পরমাণুর নিষ্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর মতো সুস্থিত ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করার প্রচেষ্টার ফলে একাধিক পরমাণু রাসায়নিক ভাবে যুক্ত হয়ে অণু গঠন করে এবং অণুর মধ্যস্থিত পরমাণুগুলির মধ্যে একপ্রকার বন্ধন তৈরি হয় । একে রাসায়নিক বন্ধন বলে ।  

আমরা জানি যে একই বা বিভিন্ন মৌলের দুই বা ততোধিক পরমাণু রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে স্বাধীন সত্ত্বা বিশিষ্ট অণু গঠন করে । যেমন — হাইড্রোজেনের দুটি পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি হাইড্রোজেন অণু ( H2 ) গঠন করে ; দুটি হাইড্রোজেন ও একটি অক্সিজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি জল অণু ( H2O ) গঠন করে । এখন প্রশ্ন হল কেন এই পরমাণুগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে অণু গঠন করে । 

বিভিন্ন মৌলের মধ্যে হিলিয়াম , নিয়ন , আর্গন প্রভৃতি নিষ্ক্রিয় মৌলগুলি সাধারণ অবস্থায় রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকে । এই কারণে এগুলিকে সুস্থিত মৌল বলে । এদের ইলেকট্রন বিন্যাস লক্ষ করলে দেখা যায় যে এইসব মৌলের পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা হিলিয়ামের ক্ষেত্রে দুই এবং বাকি সব ক্ষেত্রে আট । 

অতএব বলা যায় যে পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা আট হলে পরমাণুটি রাসায়নিকভাবে সুস্থিত হয় । নিষ্ক্রিয় মৌল ছাড়া অন্যান্য মৌলের পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে ইলেকট্রন সংখ্যা 1 থেকে 7 পর্যন্ত হয় । এইসব মৌলের পরমাণু অন্যান্য পরমাণুর সাথে ইলেকট্রন আদান প্রদান করে অথবা এক বা একাধিক ইলেকট্রন জোড়কে মিলিতভাবে ব্যবহার করে নিষ্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর মতো সুস্থিত ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করতে চেষ্টা করে ।

বিশ্ব প্রকৃতিতে দেখা যায় যে কোনো সিস্টেমের ( System- এর ) মোট শক্তি যত কম হয় সেই সিস্টেম তত স্থায়ী হয় । দুটি পরমাণু যুক্ত হয়ে অণু গঠন করলে মোট শক্তির হ্রাস হয় এবং এই শক্তি হ্রাসের ফলেই অণু স্থায়িত্ব লাভ করে । কোনো অণুকে ভেঙে একাধিক পরমাণু গঠন করতে হলে বাইরে থেকে কিছু পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করতে হয় ।

অপরপক্ষে কোনো অণুর মধ্যস্থিত রাসায়নিক বন্ধনে আবদ্ধ দুটি পরমাণুকে পৃথক করতে কিছু পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় একে রাসায়নিক বন্ধন শক্তি ( bond energy ) বলে । রাসায়নিক বন্ধনে আবদ্ধ দুটি পরমাণুর কেন্দ্রক দুটির মধ্যেকার দূরত্বকে বন্ধন দৈর্ঘ্য ( bond length ) বলে ।

error: Content is protected !!