ধাতু ও অধাতুর পার্থক্য
ধাতু ও অধাতুর পার্থক্য
ধাতু ও অধাতুর মধ্যে পার্থক্যগুলি হলㅡ
ধাতু :
1. ধাতু স্বাভাবিক অবস্থায় কঠিন । ব্যতিক্রম : পারদ ধাতু হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় তরল ।
2. ধাতু স্বাভাবিক অবস্থায় উজ্জ্বল এবং আলো প্রতিফলন করতে পারে ।
3. ধাতু তাপ ও তড়িতের সুপরিবাহী ।
4. ধাতুকে আঘাত করলে ধাতব শব্দ উৎপন্ন হয় । ব্যতিক্রম : লিথিয়াম , সোডিয়াম , পটাশিয়াম থেকে ধাতব শব্দ উৎপন্ন হয় না ।
5. ধাতু সাধারণত শক্ত , দৃঢ় , নমনীয় ও প্রসারণশীল । ধাতুকে পিটিয়ে পাতলা পাতে পরিণত করা যায় । ব্যতিক্রম : লিথিয়াম , সোডিয়াম , পটাশিয়াম ধাতু নরম ।
6. সাধারণত ধাতুর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক বেশি । ব্যতিক্রম : পারদ , সিজিয়াম , গ্যালিয়াম ধাতুর গলনাঙ্ক কম ।
7. ধাতুর আপেক্ষিক গুরুত্ব সাধারণত 1এর বেশি হয় ; অর্থাৎ ধাতু জলের চেয়ে ভারী । ব্যতিক্রম : লিথিয়াম , সোডিয়াম , পটাশিয়ামের আপেক্ষিক গুরুত্ব 1এর কম ।
8. ধাতুর অণুর মধ্যে একটি পরমাণু থাকে ।
9. ধাতু সাধারণত ধনাত্মক তড়িৎধর্মী মৌল । রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ধাতুর পরমাণু ইলেকট্রন ত্যাগ করে ক্যাটায়নে পরিণত হয় । যেমন – Na – e ⟶ Na+
10. ধাতুগুলি সাধারণত বিজারক হয় ।
11. হাইড্রোজেনের চেয়ে বেশি তড়িৎ ধনাত্মক ধাতুগুলি লঘু H2SO4 ও HCl এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় দ্রবীভূত হয় এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে । কিন্তু হাইড্রোজেনের চেয়ে কম তড়িৎ ধনাত্মক ধাতুগুলি , যেমন — তামা , সোনা , পারদ , রুপা প্রভৃতি অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে না ।
12. ধাতুগুলি অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাধারণত ক্ষারীয় অক্সাইড উৎপন্ন করে । অবশ্য কতকগুলি ধাতব অক্সাইডে আম্লিক ও ক্ষারীয় উভয় ধর্মই দেখা যায় । উদাহরণ : জিঙ্ক অক্সাইড , অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড প্রভৃতি ।
13. তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় ধাতব ক্যাটায়ন ক্যাথোডে মুক্ত হয় ।
14. ধাতব ক্লোরাইড লবণ গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য ; এরা কঠিন অনুদ্বায়ী এবং তড়িৎযোজী যৌগ ।
15. ধাতু সাধারণত হাইড্রোজেনের সঙ্গে বিক্রিয়ায় স্থায়ী হাইড্রাইড গঠন করে না । ব্যতিক্রম : সোডিয়াম , পটাশিয়াম , লিথিয়াম স্থায়ী হাইড্রাইড গঠন করে ।
16. ধাতু জটিল লবণ গঠন করে ।
অধাতু :
1. অধাতু স্বাভাবিক অবস্থায় কঠিন ও গ্যাসীয় । ব্যতিক্রম : ব্রোমিন অধাতু হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় তরল ।
2. অধাতু স্বাভাবিক অবস্থায় অনুজ্জ্বল এবং আলো প্রতিফলন করতে পারে না । ব্যতিক্রম : আয়োডিন , গ্রাফাইট , হীরক অধাতু হলেও উজ্জ্বল । হীরক আলোক প্রতিফলনে সক্ষম ।
3. অধাতু তাপ ও তড়িতের কুপরিবাহী । ব্যতিক্রম : গ্রাফাইট ও গ্যাস কার্বন অধাতু হলেও তাপ ও তড়িতের সুপরিবাহী ।
4. অধাতুকে আঘাত করলে ধাতব শব্দ উৎপন্ন হয় না ।
5. অধাতু হালকা , ভঙ্গুর , নমনীয় এবং প্রসারণশীল নয় । অধাতুকে পিটিয়ে পাতলা পাতে পরিণত করা যায় না ।
6. অধাতুর গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক অপেক্ষাকৃত কম । ব্যতিক্রম : কার্বন , বোরন , সিলিকনের গলনাঙ্ক উচ্চ ।
7. অধাতুর আপেক্ষিক গুরুত্ব সাধারণত 1 – এর কম হয় ; অধাতু জলের চেয়ে হালকা । ব্যতিক্রম : আয়োডিন সবচেয়ে ভারী অধাতু । এর আপেক্ষিক গুরুত্ব 4.9 ।
8. অধাতুর অণুর মধ্যে দুই বা তার বেশি পরমাণু থাকে । ব্যতিক্রম : হিলিয়াম , নিয়ন , আর্গন প্রভৃতি নিষ্ক্রিয় গ্যাস একটি পরমাণু দ্বারা গঠিত ।
9. অধাতু সাধারণত ঋণাত্মক তড়িৎধর্মী মৌল । রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অধাতুর পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে অ্যানায়নে পরিণত হয় । যেমন— Cl + e ⟶ CI–
ব্যতিক্রম : হাইড্রোজেন অধাতু হলেও তড়িৎ ধনাত্মক ।
10. অধাতুগুলি সাধারণত জারক হয় । ব্যতিক্রম : হাইড্রোজেন অধাতু হলেও বিজারক ।
11. অধাতুগুলি অ্যাসিডে দ্রবীভূত হয় হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে না ।
12. অধাতুগুলি অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়ায় সাধারণত আম্লিক অক্সাইড গঠন করে । উদাহরণ : SO2 আম্লিক অক্সাইড ।
13. তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় অধাতব অ্যানায়ন অ্যানোডে মুক্ত হয় ।
14. অধাতব ক্লোরাইড তড়িৎ বিশ্লেষ্য নয় ; এরা সাধারণত উদ্বায়ী তরল পদার্থ এবং সমযোজী ।
15. অধাতু হাইড্রোজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্থায়ী হাইড্রাইড গঠন করে ।
16. অধাতু সাধারণত জটিল লবণ গঠন করে না । ব্যতিক্রম : বোরন , সিলিকন জটিল যৌগ গঠন করে ।