পদার্থের ভৌত ধর্ম কাকে বলে

Contents

পদার্থের ভৌত ধর্ম কাকে বলে

যে ধর্ম থেকে পদার্থের বাহ্যিক অবস্থা ও গুণের পরিচয় পাওয়া যায় এবং যে ধর্মের প্রকাশে পদার্থের মূল গঠনের কোনো পরিবর্তন হয় না , তাকে পদার্থের ভৌত ধর্ম বলে । পদার্থের বাহ্যিক বা ভৌত অবস্থা , ঘনত্ব , দ্রাব্যতা , গন্ধ , বর্ণ , স্পর্শ , চৌম্বক ধর্ম প্রভৃতি হল পদার্থের ভৌত ধর্ম । 

ভৌত ধর্মের সাহায্যে পদার্থের শনাক্তকরণ  

প্রত্যেক পদার্থের কতকগুলি নিজস্ব ভৌত ধর্ম থাকে যা থেকে পদার্থকে শনাক্ত করা যায় ।

বাহ্যিক বা ভৌত অবস্থা : 

সাধারণ চাপ ও উষ্ণতায় বিভিন্ন পদার্থের ভৌত অবস্থা বিভিন্ন হয় । কতকগুলি পদার্থ কঠিন , কতকগুলি তরল এবং কতকগুলি গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে । যেমন— সাধারণ চাপ ও উষ্ণতায় লোহা কঠিন , জল তরল এবং বায়ু গ্যাসীয় । সুতরাং স্বাভাবিক চাপ ও উষ্ণতায় পদার্থটি কঠিন , তরল না গ্যাসীয় তা দেখে অনেক পদার্থকে শনাক্ত করা যায় । 

স্পর্শ ( Touch ) : 

বিভিন্ন পদার্থ স্পর্শে অনেক পার্থক্য দেখায় । তাই হাত দিয়ে স্পর্শ করেও অনেক পদার্থকে আলাদাভাবে চেনা যায় । যেমন— গ্রাফাইট নরম ও পিচ্ছিল কিন্তু চকের গুঁড়ো খসখসে । সুতরাং গ্রাফাইট এবং চকচকে সহজেই আলাদাভাবে চেনা যায় । জল ও গ্লিসারিন উভয়েই বর্ণহীন ও গন্ধহীন । কিন্তু হাত দিয়ে স্পর্শ করলে এদের পার্থক্য বোঝা যায় । জলে হাত দিলে হাত ভিজে যায় কিন্তু আঠালো মনে হয় না । অপরপক্ষে , গ্লিসারিনে হাত দিলে আঠালো মনে হয় । পারদ ও আলকাতরা উভয়েই তরল পদার্থ । পারদ হাতে লাগে না কিন্তু আলকাতরা হাতে লেগে যায় । 

গন্ধ ( Smell ) : 

বিভিন্ন পদার্থের গন্ধ বিভিন্ন হয় । সুতরাং গন্ধের সাহায্যেও কোনো কোনো পদার্থকে চেনা যায় । যেমন— অক্সিজেন গ্যাস গন্ধহীন কিন্তু অ্যামোনিয়া গ্যাসের গন্ধ ঝাঁঝালো । হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস পচা ডিমের গন্ধ যুক্ত , ক্লোরিন গ্যাসের গন্ধ ব্লিচিং পাউডারের মতো , ফসফিনের গন্ধ পচা মাছের মতো । 

বর্ণ বা রঙ ( Colour ) :

বর্ণ বা রঙ দেখেও অনেক পদার্থকে চেনা যায় । যেমন— চক এবং নীল ভিট্রিয়ল বা তুঁতে উভয়েই কঠিন পদার্থ , কিন্তু চকের রঙ সাদা এবং তুঁতের রঙ নীল । সুতরাং রঙ দেখে খুব সহজেই এদের আলাদাভাবে চেনা যায় । পারদ চকচকে রুপোলি রঙের তরল , ব্রোমিন গাঢ় লাল রঙের তরল , গন্ধক হলুদ রঙের কঠিন , তামা লালচে কঠিন , ক্লোরিন সবুজাভ-হলুদ রঙের গ্যাসীয় পদার্থ । 

চৌম্বক ধর্ম : 

বিভিন্ন পদার্থের চৌম্বক ধর্ম বিভিন্ন হয় । যেমন— লোহা চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয় কিন্তু অ্যালুমিনিয়াম চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয় না । সুতরাং এই চৌম্বক ধর্মের সাহায্যে লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামকে আলাদাভাবে চেনা যায় ।

গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক : 

প্রত্যেক বিশুদ্ধ কেলাসিত কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক থাকে । আবার প্রত্যেকটি বিশুদ্ধ তরলের একটি নির্দিষ্ট স্ফুটনাঙ্ক থাকে । যেমন — বরফের স্বাভাবিক গলনাঙ্ক 0°C , লোহার গলনাঙ্ক 1530°C , জলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক 100°C , ইথাইল অ্যালকোহলের স্ফুটনাঙ্ক 78.5°C । সুতরাং কোনো কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক এবং কোনো তরল পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক ওই পদার্থের বৈশিষ্ট্য । এগুলি লক্ষ করে পদার্থকে শনাক্ত করা যায় ।

error: Content is protected !!