অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন কাকে বলে
Contents
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন কাকে বলে
ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে আলোকরশ্মি প্রতিসৃত হওয়ার সময় যদি ঘন মাধ্যমে আপতন কোণ মাধ্যমদ্বয়ের সংকট কোণ অপেক্ষা বড়ো হয় , তাহলে রশ্মিটি লঘু মাধ্যমে প্রতিসৃত না হয়ে মাধ্যমদ্বয়ের বিভেদতলে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়ে আবার ঘন মাধ্যমে ফিরে আসে । এই ঘটনাকে অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন বলে ।
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের শর্ত
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের শর্তগুলি হলㅡ
1. আলোকরশ্মিকে ঘন মাধ্যম থেকে এসে ঘন এবং লঘু মাধ্যমের বিভেদতলে আপতিত হতে হবে ।
2. ঘন মাধ্যমে আপতন কোণের মান মাধ্যমদ্বয়ের সংকট কোণ অপেক্ষা বড়ো হতে হবে ।
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন এর প্রাকৃতিক উদাহরণ
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের প্রাকৃতিক উদাহরণ হল মরীচিকা । মরুভূমিতে মরীচিকা এক ধরনের দৃষ্টিভ্রম । ভূপৃষ্ঠের ওপরের বায়ুতে আলোর অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের ফলে মরীচিকার সৃষ্টি হয় ।

■ মরুভূমিতে দিনের বেলায় সূর্যের তাপে বালি উত্তপ্ত হয় এবং সেই সঙ্গে সংলগ্ন বায়ুস্তরও উত্তপ্ত হয়ে পড়ে । ফলে ওই বায়ুস্তরের আয়তন বেড়ে যায় এবং ঘনত্ব কমে যায় । ভূমি থেকে যত ওপরে ওঠা যায় বায়ুর উষ্ণতা তত কমতে থাকে এবং বায়ুর ঘনত্ব তত বাড়তে থাকে ।
■ এখন মরুভূমির ওপরে কোনো গাছের P বিন্দু থেকে আলোকরশ্মি ওপর থেকে নীচের দিকে তির্যকভাবে আসতে থাকলে রশ্মিটি ক্রমশ ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রবেশ করে । কাজেই রশ্মিটি অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায় । ফলে রশ্মিটি যত নীচের দিকে যায় প্রতিটি স্তরে আপতন কোণ বাড়তে থাকে । অবশেষে রশ্মিটি এমন এক স্তরে এসে পড়ে যখন ওই রশ্মিটির আপতন কোণ স্তর দুটির সংকট কোণের চেয়ে বড়ো হয় । তখন রশ্মিটির প্রতিসরণ না হয়ে অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন হয় এবং প্রতিফলিত রশ্মিটি নীচের দিকে না নেমে ওপরের দিকে উঠতে থাকে । এবার রশ্মিটি লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করে , ফলে রশ্মিটি অভিলম্বের দিকে সরে যায় ।
অবশেষে রশ্মিটি যখন পথিকের চোখে পৌঁছোয় তখন চোখ রশ্মির ওই বাঁকাপথ অনুসরণ করতে পারে না । ফলে পথিকের মনে হয় যে রশ্মিটি P’ বিন্দু থেকে আসছে । P’ হল P এর অসদ প্রতিবিম্ব । এভাবে পথিক গাছটির একটি উলটো প্রতিবিম্ব দেখতে পায় ।
■ আবার , পথিক গাছটিকে সরাসরিও দেখতে পায় । তাই তার মনে হয় ওই স্থানে কোনো জলাশয় আছে । জলাশয়ের জলে যেন গাছটির উলটো প্রতিবিম্ব তৈরি হয়েছে ।
■ আবার উষ্ণতার পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন বায়ুস্তরের ঘনত্ব এবং প্রতিসরাঙ্কের সব সময় পরিবর্তন হয় । ফলে বায়ুস্তরগুলির মধ্য দিয়ে আসা আলোকরশ্মির দিকও অনবরত পরিবর্তিত হয় । তাই পথিকের মনে হয় প্রতিবিম্বটি কম্পমান । পথিক এই উলটো ও কম্পমান প্রতিবিম্বকে জলাশয়ে তৈরি প্রতিবিম্ব বলে মনে করে । কারণ জলাশয়ের সামনে দাঁড়ালে একই ধরনের ঘটনা ঘটে । এই দৃষ্টিভ্রমের জন্য তৃয়ার্ত পথিক জলের আশায় ওই দিকে এগোতে থাকে । মরুভূমির এই দৃষ্টিভ্রমকে মরীচিকা বলে ।
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনকে পূর্ণ প্রতিফলন বলা হয় কেন
অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনে আপতিত আলোকরশ্মির কোনো অংশই শোষিত বা প্রতিসৃত হয় না । আপতিত আলোর সম্পূর্ণ অংশই দুই মাধ্যমের বিভেদতল থেকে প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে বলে এই প্রতিফলনকে অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন বলে ।
লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন হয় না কেন
আলোকরশ্মি লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করলে অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন হয় না । এর কারণ হল আলোকরশ্মি লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রতিসৃত হলে প্রতিসরণ কোণের মান সব সময় আপতন কোণের মান অপেক্ষা ছোটো হয় । ফলে আপতন কোণের মান বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ , অর্থাৎ 90° হলেও প্রতিসরণ কোণের মান 90° এর কম হয় অর্থাৎ আলোকরশ্মির প্রতিসরণ হয় । আপতন কোণ আর বাড়ানো সম্ভব নয় বলে আলোকরশ্মির অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন হয় না ।