স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

খেসারির ডাল কি বিষ

খেসারির ডাল কি বিষ  

খেসারির ডাল কি খাওয়া উচিত ? 

অন্যান্য ডাল সম্পর্কে এ রকম কোনো কথা তো শোনা যায় না , কিন্তু খেসারির ডাল খাওয়ার সময়ে কেন অনেকেই বলেন , খেসারির ডাল খাওয়া উচিত নয় । সত্যিই কি খেসারির ডাল শরীরের অনিষ্ট করে ? 

খেসারির ডাল যে শরীরের অনিষ্ট করতে পারে তাতে কোনো সন্দেহ নেই । এই ডাল নিয়মিত এবং যথেষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করলে অনেক সময়ে পক্ষাঘাত জনিত কিছু কিছু দুর্লক্ষণ ফুটে ওঠে । পায়ের জোর কমে যায় , পদক্ষেপ অবিন্যস্ত হয়ে পড়ে । আঙ্গুল , হাত ও পায়ের গাঁট স্ফীত হয় । 

এই খেসারির ডালে কোন বিষের জন্যে এ ধরনের সব মারাত্মক লক্ষণ দেখা দেয় ? ডালের যে বিষটির জন্যে শারীরিক এই অবস্থা তার নাম বিটা এন অকসালিল আলফা বিটা ডায়মিনো প্রোপায়োনিক এসিড । খেসারির ডাল খেলে এই পদার্থটির সংরক্ষণ চলে শরীরের মধ্যে । সামান্য সংরক্ষণের ফল বোঝা যায় না । কিন্তু সংরক্ষণের মাত্রা যখন বিপদের সীমা ছাড়িয়ে যায় , রোগের লক্ষণ ধরা পড়ে তখনই । 

তবে খেসারির ডালের সঙ্গে রোগটির সম্পর্ক থাকলেও এই ডাল খেলেই যে রোগ লক্ষণ দেখা দেবে এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না । অবস্থাটা নির্ভর করে ডালের বিষাক্ত পদার্থটির পরিমাণের উপরে । আখের কথা ধরা যাক । আমরা আখ চিবোই । কিন্তু সব আখে কি মিষ্টি সমান ? আখের মিষ্টত্ব যেমন নির্ভর করে জমি আর আবহাওয়ার উপরে খেসারির ডালের বিষের বেলাতেও সে রকম । 

তবে আশঙ্কাটা এত গুরুতর যে , পশ্চিম বাংলা , বিহার এবং মধ্য প্রদেশ ছাড়া ভারতবর্ষে আর সর্বত্রই খেসারির ডালের ব্যবহার সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ হয়েছে । অথচ অন্যান্য ডালের তুলনায় এতে প্রোটিনের পরিমাণ অনেক বেশি । অন্যান্য ডালে প্রোটিন যেখানে শতকরা ২০ থেকে ২৬ ভাগ , খেসারির ডালে সেখানে শতকরা ৩২ ভাগ । অথচ এই ডাল দরিদ্র  মানুষের পক্ষে অল্প পয়সায় ভারী খাদ্যের কাজ করে । 

খেসারির ডাল থেকে এই বিষাক্ত পদার্থটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার জন্যে গবেষণাগারে চেষ্টা হয়েছে । কিন্তু কার্যকরী বা ব্যবহারোপযোগী ফল বিশেষ কিছু পাওয়া যায়নি । 

ডালকে শোধন অবশ্য তত্ত্বগত দিক দিয়ে একটি প্রক্রিয়া আছে । করার সে প্রক্রিয়াটি রসায়নবিদদের কাছে স্বীকৃত । কিন্তু তা বাস্তবোচিত নয় । এই পদ্ধতি রসায়নাগারের মধ্যেই প্রয়োগ সম্ভব । খেসারির বিষটি জলে দ্রবণীয় । তা বীজের খোসার নীচে ডালের বহিস্তরেই সঞ্চিত থাকে । সেইজন্যে খোসা ছাড়ানো ডাল ৭০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড গরম জলে তিন চার ঘণ্টা চুবিয়ে রেখে পরে তিন চার মিনিট ফুটিয়ে বা সারারাত জলে চুবিয়ে রেখে জলটা ফেলে দিলেই খেসারি খাদ্যযোগ্য হয়ে ওঠে । কিন্তু বাস্তবে আমাদের মত এই দরিদ্র দেশে খেসারির ডালকে যারা পেট ভরানোর জন্যে গ্রহণ করে , তাদের ক’জনে এই ভাবে বিষ তাড়ানোর জন্যে উদ্যোগী হবে ? 

তা ছাড়া এই ভাবে শোধনের সঙ্গে সঙ্গে খেসারির ডালের প্রোটিনের পরিমাণও কমে যায় , তা পরীক্ষাগারে দেখা গেছে । তাহলে যে উচ্চ প্রোটিনের জন্যে খেসারির ডাল খাওয়ার কথা ভাবা হয় , সেই আসল উদ্দেশ্যই তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । 

খেসারির ডালের অবশ্য আরও দু একটি জাত আছে যাতে বিষাক্ত পদার্থের ভাগ শতকরা হিসেবে দু ভাগেরও কম । কিন্তু এ দুটি জাতের খেসারি এখনও তেমনভাবে বাজারে আসেনি । তা ছাড়া এমনিতে বিষের পরিমাণ কম হলে কি হবে ক্রমিক সঞ্চয়ে তা মারাত্মক হয়ে ওঠার আশঙ্কা । 

সব দিকের হিসেব নিয়ে এ কথা বলতেই হয় , আমাদের পশ্চিম বাংলাতেও খেসারির ডাল নিষিদ্ধ হওয়া উচিত অবিলম্বে । কিন্তু শুধু ডাল হিসেবেই যে তার ব্যবহার তা তো নয় , ভেজাল হিসেবেও সে আসে । বড় দানাগলি মটর , অড়হর ও ছোলার ডালে সরাসরি ভেজাল দেওয়া হয় । তাছাড়া বড়িতে এবং বেসনেও সে ভেজাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় । 

এখানে উল্লেখ করা দরকার , প্রায় ৯০ ভাগ বেসনের মধ্যেই খেসারির ডাল পাওয়া যায় । ফলে আশঙ্কাগ্রস্ত হওয়ার কারণ থাকেই । খেসারির চাষ বন্ধ হলে একমাত্র সেই আশঙ্কা কিছুটা লাঘব হতে পারে । এখানে একটা কথা উল্লেখ করি , মানুষের পক্ষে এ ডালে অনিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও , দেখা গেছে , জীবজন্তুকে খাওয়ালে এ ডাল থেকে কোনো ক্ষতি হয় না । ফলে খাদ্য হিসেবে এ কেবল জীবজন্তুর পক্ষেই গ্রহণযোগ্য থাকতে পারে ।

error: Content is protected !!