স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

খাবারের থেকে টনিক কি ভালো

খাবারের থেকে টনিক কি ভালো

অসুখ বিসুখ থেকে সেরে ওঠার পরে হারানো স্বাস্থ্য দ্রুত পুনরুদ্ধারের আশায় রোগীর আত্মীয় পরিজনেরা অনেক সময়ে একটা টনিক দেবার জন্যে ডাক্তারবাবুকে পীড়াপীড়ি করেন । ডাক্তারবাবুরাও প্রেসক্রিপসনে টনিক সংযোজনে বহুক্ষেত্রে কুণ্ঠিত থাকেন না । টনিক যেন আজকাল সস্তায় , না সস্তায় নয় , টনিকের দাম কিছু কম বলা যায় না , দ্রুত বাজিমাৎ করার একটা পদ্ধতির মত । আজ গতি ও ব্যস্ততার যুগে তাই কথায় কথায় সবাই টনিকের দিকে হাত বাড়ান । বিশ্রাম ও পথ্যের বদলে পূর্ণ আরোগ্য লাভের জন্যে এখন অনেকেই টনিকের মুখাপেক্ষী । মনের মধ্যে এই বিশ্বাসটুকু থাকে , বিশ্রাম আর পথ্য যতটুকু কাজ করতে পারবে এবং যতটা সময় নিয়ে , টনিক কাজ করবে তার চেয়ে অনেক দ্রুত এবং অনেক ভালভাবে । 

কিন্তু সত্যিই কি তাই ? হারানো স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার জন্যে টনিকের ভূমিকা কি খাদ্য দ্রব্য এবং বিশ্রামের চেয়েও বেশি ? খাওয়া দাওয়া আর পূর্ণ বিশ্রাম যা দিতে পারে টনিকের পক্ষে কি তা দেওয়া সম্ভব ? 

বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন , খাদ্য এবং বিশ্রাম যা দিতে পারে টনিকের পক্ষে কখনোই তা দেওয়া সম্ভব নয় । বিশেষ করে কোনো রোগী তার রোগ মুক্তির পরে খাদ্য থেকে সাধারণ যা যা প্রয়োজন তা যদি গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করে , তাহলে টনিকে তার কোনো প্রয়োজন নেই । সেখানে টনিক মানসিক সান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই নয় । পাঁচ মিশেলি টনিকে অবশ্য আরও একটি দিক আছে । তা হল খানিকটা অর্থ ব্যয় । অর্থ ব্যয়ের সঙ্গেই তো , আমাদের ধারণা , ফললাভের সম্ভাবনা । মন বলে খুব একটা কাজ হল । কিন্তু নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে যে ফল দেয় , তার তুলনায় এ ফল কতটা উল্লেখনীয় তা ভেবে দেখার মত । 

কিন্তু তার মানে এই নয় যে , টনিকের কখনোই প্রয়োজন নেই । যদি শরীরে বিশেষ কোনো ভিটামিন বা মিনারেলের অভাব ঘটে থাকে , তখন কি হবে ? সেখানেও কি আমরা খাদ্য দিয়ে পুরোপরি সে ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করব ? 

দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় , ভিটামিন A -এর অভাবের সঙ্গে অন্ধত্বের সম্পর্ক আছে । সেইরকম , যেখানে আমরা হলফ করে বলতে পারি যে , ভিটামিন A -র অভাবের জন্যে কারো শরীরে কোনো রোগের সৃষ্টি হয়েছে সেখানেই ওই ভিটামিন শরীরে আসতে পারে টনিকের মাধ্যমে এবং টনিকের প্রয়োজন শুধুমাত্র তখনই । 

যেখানে আবার রক্তাল্পতা দেখা দেয় আয়রনের অভাবের জন্যে , সেখানে আবার আয়রন খাওয়ালেই কার্যকরী ফল পাওয়া উচিত । আমাদের শরীরে দৈনিক আয়রনের প্রয়োজন ১২ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম মাত্ৰ । তা ছাড়া যাদের আয়রনের অভাবের জন্যে রক্তাল্পতা লক্ষ্য করা যায় , তাদের আয়রন গ্রহণ করার ক্ষমতা পুরোপুরি বজায় থাকে । ফলে বড়িতেই কাজ চলতে পারে । 

আয়রন প্রসঙ্গে আর একটু বলা দরকার । রক্তাল্পতায় আয়রন ইনজেকশন দেওয়ার একটা রেওয়াজ আছে । কিন্তু এই ইনজেকশন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞের অভিমত , রোগী যখন আয়রন ট্যাবলেট গলাধঃকরণ করতে পারে না বা গলাধঃকরণ করলেও সহ্য করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে তখনই আয়রন ইনজেকশন দেওয়া উচিত । অন্যথায় নয় । 

কিন্তু এসব তো বিশেষ ক্ষেত্রে যেখানে কোনো নির্দিষ্ট ভিটামিন বা মিনারেলের অভাবে শারীরিক অসুস্থতা ফুটে ওঠে । না হলে হারানো স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্যে সাধারণভাবে একটা টনিক কখনোই পুষ্টিকর খাদ্য এবং বিশ্রামের একটা বিকল্প হয়ে উঠতে পারে না ।

error: Content is protected !!