সৎনামী বিদ্রোহ
সৎনামী বিদ্রোহ
পাঞ্জাবের অন্তর্গত নারনুল ও মেওয়াট অঞ্চলে ‘ সৎনামী ’ সম্প্রদায়ের মানুষ মোগল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয় ( ১৬৭২ খ্রি. ) । সৎপথে জীবন যাপন করার আদর্শে বিশ্বাসী ছিল বলে তারা ‘সৎনামী ’ নামে পরিচিত হয় । তারা ছিল একটি ভক্তিবাদী হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায় । বৈষ্ণবদের মতো মাথা মুণ্ডন করে তারা বৈরাগীর বেশে থাকত ।
সৎনামী বিদ্রোহের কারণ
সৎনামীরা ছিল মূলত কৃষিজীবী নিরীহ মানুষ । কিন্তু স্থানীয় মোগল সুবাদার , জায়গিরদার ও জমিদারদের আর্থিক নিপীড়নে তাদের জীবন ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে ওঠে । এই অত্যাচারের প্রতিবাদে স্থানীয় ফৌজদারের সঙ্গে সৎনামীদের যুদ্ধ বাধে এবং নারনুলের ফৌজদার নিহত হন । শেষ পর্যন্ত গরীবদাস হাডা -র নেতৃত্বে এই স্বভাব শান্ত শ্রেণি বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয় । সৎনামীরা নিজেদের থানা স্থাপন করে কর সংগ্রহ করতে থাকে । ঔরঙ্গজেব কয়েকবার সেনাদল পাঠালে সৎনামীরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেন । শেষ পর্যন্ত ঔরঙ্গজেব কঠোর হাতে এই বিদ্রোহ দমন করেন । গরীবদাস হাডা সহ কয়েক হাজার সৎনামী বীরের মৃত্যু বরণ করেন ।
সৎনামী বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সংহতি ও চেতনা কৃষকদের মধ্যে এক লড়াকু মনোভাব এনে দেয় ।
গৌতম ভদ্র উল্লেখ করেছেন , সৎনামী বিদ্রোহ প্রমাণ করে যে মোগল সিংহাসনের মহিমা সাধারণ প্রজার কাছে কমে গেছে । সমাজের নীচু তলার মানুষরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ভাবে রুখে দাঁড়ায় এবং একটি নিজস্ব রাজ্য গঠনের চেষ্টা করে ।