আল বেরুনি কে ছিলেন

আল বেরুনি কে ছিলেন  

মধ্য এশিয়ার খ্যাতনামা পণ্ডিত ছিলেন আল বেরুনি । দর্শন , গণিত , জ্যোতির্বিদ্যা , ভূগোল , ধর্মশাস্ত্র , তর্কবিদ্যা , ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল । তাঁর আদি নাম ছিল আবু রায়হান মহম্মদ । পাণ্ডিত্যের জন্য তাঁর নাম হয় আল বেরুনি ( The Master ) । 

আল বেরুনি ভারতে অবস্থানকালে সংস্কৃত ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন । অতঃপর হিন্দুশাস্ত্র , ভারতীয় দর্শন , গণিত , জ্যোতির্বিদ্যা ইত্যাদি নানা বিষয়ে তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেন । ভারতের সমাজ , সভ্যতা , সংস্কৃতি সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা তিনি সযত্নে লিপিবদ্ধ করেন । আল বেরুনির ভারত বিষয়ে রচিত গ্রন্থের নাম ‘ তহকক ই হিন্দ ’ । 

আল বেরুনির ভারত বিবরণ

‘ তহকক ই হিন্দ ’ গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে , তখন ভারতীয় হিন্দুরা ছিলেন সংকীর্ণমনা । জাতিভেদ , অস্পৃশ্যতা ও নানা কুসংস্কারে সমাজজীবন ছিল জর্জরিত । ব্রাক্ষ্মণ শ্রেণি বিশেষ অধিকার ভোগ করত । তিনি লিখেছেন , 

( i ) ভারতীয়দের ধর্মভাবনা ছিল গোঁড়ামিতে ভরা । বহু দেবদেবীর পূজা প্রচলিত ছিল । বৈশ্য ও শূদ্রের বেদপাঠের অধিকার ছিল না । শিক্ষিত হিন্দুরা ছিল একেশ্বরবাদী ।

( ii ) সমাজে ব্রাহ্মণদের একচেটিয়া প্রাধান্য ছিল । হিন্দু সমাজে সতী প্রথা , বাল্যবিবাহ , বিধবাদের দুর্দশার কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন । 

( iii ) মামুদের আক্রমণ যে ভারতের সমৃদ্ধি ধ্বংস করেছিল , এ কথা বলতেও তিনি দ্বিধা করেননি । তাঁর বিবরণ থেকে ভারতের রাজনৈতিক অনৈক্য ও বিচ্ছিন্নতার কথা জানা যায় । 

( iv ) বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা ভারতীয়দের স্বভাব বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছিল । 

( v ) ভারতীয়দের অতিথি পরায়ণতা , জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় আন্তরিকতা , পুঁথি রচনা , আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিবাদের নিষ্পত্তি ইত্যাদি গুণাবলির উল্লেখও তাঁর রচনায় পাওয়া যায় । তিনি ভারতীয়দের জ্যোতিষ , রসায়ন প্রভৃতি শাস্ত্রে গভীর জ্ঞানের কথাও বলেছেন । 

ঐতিহাসিক জগদীশ নারায়ণ সরকার  বলেছেন , “ আল বেরুনি আধুনিক সমাজতাত্ত্বিকের অন্তর্দৃষ্টি , সহমর্মিতা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাঁর ভারত সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন ” ।

error: Content is protected !!