ইতিহাস

ভক্তিবাদী আন্দোলনে গুরু নানক এর অবদান

ভক্তিবাদী আন্দোলনে গুরু নানক এর অবদান 

ভক্তিবাদের এক বিখ্যাত প্রবক্তা ছিলেন গুরু নানক । নানক ১৪৬৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোরের সন্নিকটে তালওয়ান্দি নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন । শিক্ষা লাভ করে অল্প বয়সে তিনি করণিকের কাজ শুরু করেন এবং বিয়ে করে সংসারী হন । কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই তিনি দিব্য জ্ঞান লাভ করেন এবং সংসার পরিজন ত্যাগ করে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণে বের হন । নানকের শিষ্যদের মধ্যে বহু মুসলমান ছিলেন । কথিত আছে তিনি মক্কা , মদিনা ও সিংহল দ্বীপ ভ্রমণ করেছিলেন । তাঁর উপদেশাবলি আদি গ্রন্থ নামক পুস্তকে লিপিবদ্ধ আছে । অধ্যাপক কে. আর কানুনগো মনে করেন , মধ্যযুগে ভারতের অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর চেয়ে গুরু নানকের ধর্মের মধ্যে ইসলামের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি । 

গুরু নানকের মতাদর্শ  

নানকের ধর্মের প্রধান তিনটি সূত্র হল —– এক ঈশ্বর , গুরু এবং নাম জপ । তাঁর মতে , ঈশ্বর অমর , সত্য দ্রষ্টা , নির্ভীক , অজ স্বয়ংপ্রকাশ । তিনি বলেছেন , গুরু হলেন সমুদ্র এবং শিষ্য হল নদী । নাম জপ সম্বন্ধে নানকের বক্তব্য হল , যাঁরা নাম জপ ( ঈশ্বরের ) করেন , পরলোকে তাঁদের প্রতি কিছুই জিজ্ঞাস্য থাকে না । তিনিও কবীরের মতো জাতিভেদ বা অস্পৃশ্যতার বিরোধী ছিলেন । তিনি ধর্মীয় সহনশীলতার বাণী প্রচার করে হিন্দু-মুসলমানের মিলনের চেষ্টা করেন । তিনি বলেন , মানুষ ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী পুরস্কার ও তিরস্কার পায় । জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যে কেউ প্রেম ভক্তি সহকারে ঈশ্বরের নাম জপ করলে মোক্ষ লাভ করতে পারে । ঈশ্বর লাভের জন্য তিনি সৎ চরিত্র , আচরণের পবিত্রতা ও গুরুর সান্নিধ্য লাভের ওপর জোর দেন । 

প্রভাব 

নানা ধর্মের লোক তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে । কালক্রমে গুরু নানকের প্রচারিত উপদেশ থেকে শিখ ধর্ম শিখ সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় । গুরু নানকের মৃত্যুর পর তাঁর অমূল্য উপদেশাবলি একটি গ্রন্থে সংকলিত করা হয় । এটি শিখদের পবিত্র গ্রন্থ ‘ গ্রন্থ সাহেব ‘ নামে পরিচিত । তিনি আকবরের ধ্যান ধারণাকেও প্রভাবিত করেছিলেন বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন । গুরু নানকের ধর্ম প্রচারের ফলে গুরুমুখী ভাষা সমৃদ্ধ হয় । হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করে নানক , হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগিয়ে তোলেন ।

error: Content is protected !!